Ayurvedic Kadha

ভেষজ ক্বাথ কী ভাবে খেতে হবে, উপকার বা অপকার কী কী

রোগ ঠেকানোর ও সারানোর যাবতীয় নিয়ম মানার পাশাপাশি নিয়মিত ক্কাথ খেলে বিপদের আশঙ্কা কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা৷

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ১৬:০০
Share:

ক্বাথের উপকার কী, কী ভাবে খাবেন। ছবি: শাটারস্টক

ভেষজ ক্বাথ তো খাচ্ছেন অনেকেই। করোনা আবহে ক্বাথের উপরে ভরসাও রাখছেন অনেকে। কিন্তু ক্বাথের উপকার কী, কখন প্রয়োজন, কখন নয় এগুলি জানেন?

ক্কাথের উপকার

• প্রদাহ কম হয় বলে ক্রনিক অসুখের আশঙ্কা ও প্রকোপ কমে। ডায়াবিটিস, হাই প্রেসার-কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস সবই আছে এই তালিকায়। এমনকি, জটিল কোভিডে রোগীর অবস্থা খারাপ হয় প্রদাহের কারণেই। ফলে রোগ ঠেকানোর ও সারানোর যাবতীয় নিয়ম মানার পাশাপাশি নিয়মিত ক্কাথ খেলে বিপদের আশঙ্কা কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।

• ক্কাথ জীবাণুনাশক। ফলে নিয়মিত খেলে সংক্রমণের আশঙ্কা ও প্রকোপ কম থাকে।

• অ্যান্টিক্সিডেন্ট গুণ থাকায় কোষের ক্ষতি কম হয়, কমে ক্রনিক রোগের প্রকোপ।

• বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কিছু উপাদান সরাসরিও কাজ করে। সেজন্য এদের ইমিউনিটি মডিউলেটর বা ইমিউনিটি এনহান্সার বলা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: ফল বা সব্জি ধোওয়ার ক্ষেত্রে এখন কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে

ক্কাথের অপকার

উপকার আছে বলে অনেকে প্রচুর খেতে থাকেন অনেকে। তাতে অপকার হয়। আবার ক্কাথের কিছু উপাদানের সঙ্গে কিছু ওষুধের ক্রিয়া-বিক্রিয়াও হয়। কাজেই অসুখ-বিসুখ থাকলে বা কোনও ওষুধ খেলে ক্কাথ খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া জরুরি। কী ক্ষতি হতে পারে তার কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া হল।

• আদায় আছে জিঞ্জেরল, তার গুণেই এত উপকার। তবে প্রচুর খেলে অম্বল, ডায়ারিয়া, মুখে-গলায়-পেটে অস্বস্তি হতে পারে। বুক ধড়ফড় করতে পারে। ডায়াবিটিস, হাই বা লো প্রেসার ও হৃদরোগ থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবে খাওয়া উচিত।

• এলাচের কোনও ক্ষতির খবর এখনও জানা নেই। তাও মাত্রা রেখে খাবেন।

• দারুচিনিতে আছে কুমারিন। বেশি খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। প্যারাসিটামল, অ্যাসিটামিনোফেন বা স্ট্যাটিনজাতীয় ওষুধের সঙ্গে খেলে সে আশঙ্কা বাড়ে। সুগার কমে যেতে পারে, কাজেই ডায়াবিটিসের ওষুধের সঙ্গে খাবেন কিনা তা জেনে নিন আগে। প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.১ মিগ্রা হচ্ছে নিরাপদ মাত্রা। এক চা-চামচে ৫ গ্রাম হয়। কাজেই ৫০ কেজির বেশি ওজন হলে ওটুকু খেতে পারেন।

• গোলমরিচের পিপারিন নিজে যেমন উপকারি, অন্য উপাদানগুলির উপকারও সে বাড়ায়। তবে খুব বেশি খেলে গ্যাস্ট্রাইটিস বাড়তে পারে।

• তুলসি পাতা ভাল। কিন্তু পারদ ও লোহা থাকে বলে চিবিয়ে খেলে দাঁতের রং বদলে যায় অনেক সময়।

• গুড়ুচি হল ম্যাজিকাল হার্ব। তবে রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে বলে ডায়াবিটিস থাকলে খাওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোভিডে সহায়ক চিকিৎসাতেই সুস্থতা, জেনে নিন কোনটা প্রয়োজন কোনটা নয়

আদায় আছে জিঞ্জেরল, তার গুণেই এত উপকার। ফাইল ছবি।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ জানিয়েছেন, ‘’মানুষ জন্মসূত্রে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়েছেন, আয়ুর্বেদে যাকে বলে ‘সহজ বল’, তা রাতারাতি বাড়ানো যায় না। পুষ্টি, ব্যায়াম ও নিয়ম-নিষ্ঠার হাত ধরে সে আসে, যাকে বলে যুক্তিকৃত বল। ভ্যাকসিন দিয়েও নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে যুক্তিকৃত বল গড়ে তোলা যায়। যে রোগের ভ্যাকসিন নেই, যেমন কোভিড, সেখানে সঠিক জীবনযাপন ও ঘরোয়া ওষুধই ভরসা, যাতে জীবাণু সংক্রমণ না হতে পারে বা শরীর লড়তে পারে সর্বশক্তি দিয়ে। আরেক ধরনের ইমিউনিটি ঋতু পরিবর্তন ও বয়সের সঙ্গে পালটায়। সে জন্যই দেখা যায় এমনিতে সুস্থ, কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় বা বয়স বাড়লে তিনি সংক্রমিত হচ্ছেন।’’

চরক সংহিতায় ঘরোয়া ওষুধ বানানোর ৫টি পদ্ধতির কথা বলা আছে। যেমন-

• লতাপাতা বেটে রস বার করে, যাকে বলে স্বরস।

• মশলা ও ভেষজ জলে ফুটিয়ে, যাকে বলে ক্কাথ বা কাড়া।

• বিভিন্ন রকম ভেষজ মিশিয়ে বেটে পেস্ট বানিয়ে, যাকে বলে কল্ক।

• ভেষজ ও মশলা ঠান্ডা জলে সারারাত ভিজিয়ে পর দিন ছেঁকে নিয়ে, যার নাম শীত বা হিম।

• ভেষজ ও মশলার গুড়ো গরম জলে ভিজিয়ে ছেঁকে চা-এর মতো খেলে তাকে বলে ফান্ট।

ক্কাথ বানানোর পদ্ধতি

যে সব ভেষজ রস করা যায় না, যেমন, মশলা, তাদের দিয়ে বানানো হয় ক্কাথ। এর সঙ্গে মেশানো হয় আরও নানা রকম ইমিউনিটি বুস্টার যেমন, গুলঞ্চ, আদা, তুলসি, মধু ইত্যাদি। ক্কাথ নানা রকমভাবে বানানো যায়। এখানে কয়েকটির কথা বলা হল।

• ৩ কাপ জলে এক চা-চামচ করে এলাচ-দারুচিনির গুঁড়ো, টাটকা আদা বাটা ও সিকি চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে কম আঁচে ফুটিয়ে এক কাপমতো করুন। এরপর ছেঁকে মধু মিশিয়ে খান।

• ৮-১০টা তুলসি পাতা, ৫-৬টা গোলমরিচ ও আধ চামচ আদা বেটে জলে ভাল করে ফুটিয়ে, ছেঁকে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। সর্দি-কাশির কষ্ট কমবে।

• আধ চা-চামচ দারুচিনির গুঁড়ো এক কাপ জলে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে খান। চটজলদি এনার্জি পাবেন। অন্যান্য উপকার তো আছেই।

• আধ চা-চামচ গুড়ুচি এক কাপ জলে ফুটিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে, বাড়বে হজম শক্তি। কমবে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ।

• দু-গ্লাস ফুটন্ত জলে এক চামচ করে জিরে, মৌড়ি ও জোয়ান দিয়ে আঁচ কমিয়ে দিন। জলের রং পালটে গেলে তাতে থেঁতো করা দুটো বড় এলাচ, দুটো ছোট এলাচ ও এক চামচ দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে গ্যাস নিভিয়ে দু-মিনিট ঢেকে রাখুন। ছেঁকে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়ো ও স্বাদমতো মধু মিশিয়ে গরম গরম খান। শুকনো কাশি কমবে।

আরও পড়ুন: জ্বরের মধ্যে দাঁত মাজতে গিয়ে রক্ত? ডেঙ্গি হেমারহেজিক ফিভার নয় তো

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন