COVID-19

Covid Hero: কানের দুল বন্ধক রেখেই রোগীদের খাবার জোগাচ্ছেন গোবরডাঙার অমৃতা

নিজে নিরন্তর লড়ে চলেছেন। তবু অন্যের সঙ্কটে পাশে দাঁড়াতে ভোলেন না। যত মানুষের কাছে এগিয়ে যাওয়া যায়, ততই মন শান্ত থাকে তাঁর।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২১ ০৯:৫২
Share:

পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েই কোভিড রোগীদের জন্য রান্না করছেন অমৃতা। নিজস্ব চিত্র

নিজে নিরন্তর লড়ে চলেছেন। তবু অন্যের সঙ্কটে পাশে দাঁড়াতে ভোলেন না। যত মানুষের কাছে এগিয়ে যাওয়া যায়, ততই মন শান্ত থাকে তাঁর। অতিমারির সময়েও তাই সংক্রমিতদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গোবরডাঙার অমৃতা মুখোপাধ্যায়। দরজায় দরজায় পৌঁছে দিয়েছেন করোনারোগীর পথ্য।

Advertisement

পেশায় স্কুলশিক্ষিকা। তার উপরে এক সন্তানের মা। একাই বড় করছেন নিজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেকে। তাঁর ছেলের মতো আরও পাঁচজনের সন্তানও যাতে যত্নে বে়ড়ে ওঠে, তাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য তৈরি করেছেন একটি স্কুলও। তবে কাজ করতে চাইলে যে এ সমাজে তার অভাব নেই, জানেন অমৃতা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক একটি পরিবারে একসঙ্গে সকল সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে দেখতে পান তিনি। তখন বোঝেন, রোগীর প্রয়োজন মতো খাবার জোগান দিতে হবে বাইরে থেকেই। তার পরেই স্থির করেন করোনারোগীদের খাবার বানিয়ে তা পৌঁছনোর কাজ করবেন। তবে কোনওমতে ডাল-ভাতের জোগান দিলে যে চলবে না এ ক্ষেত্রে, তাও জানা ছিল তাঁর। নিজের স্কুলের পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেন, করোনারোগীদের সারাদিনে কোন কোন ধরনের খাবার দেওয়া জরুরি। বলেন, ‘‘প্রোটিন দিতে হবে জানতাম। কোন ফল দেওয়া ভাল, তা জেনে নিই প্রথমে। সঙ্গে আর কী দিলে সাহায্য হয়, সে সবও বুঝে নিতে হয়েছিল।’’

তার পরেই শুরু হয় করোনার রান্নাঘর। গোবরডাঙা থেকে নয়। হৃদয়পুরে। সেখানকার আরও কয়েকজন পরিচিতকে নিয়ে কাজে নামেন সরকারি স্কুলের বাংলার দিদিমণি। মাছ-ভাত-তরকারির সঙ্গে রোগীর কাছে পৌঁছে যেতে থাকে দই-মুসাম্বি-পাতি লেবু। থাকে এক বোতল করে আদা-গোল মরিচ দেওয়া কাড়া। যা দিনভর অল্প অল্প করে পান করলে আরাম পাবেন রোগী।

Advertisement

একটি রান্নাঘর থেকে খাবার পাঠিয়েই থামেননি অমৃতা। এ সময়ে প্রয়োজন অঢেল। তাই এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি তাঁর উৎসাহে খড়দহ ও বাগুইআটিতেও শুরু হয় কাজ। একই ধরনের খাবার রান্না হয় সেখানে। পৌঁছে যেতে থাকে লাগোয়া অঞ্চলে। অমৃতা জানান, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ‘জাগরী’ নামে যে স্কুলটি তিনি চালান, সেখানে পড়ুয়াদের যাতায়াত আপাতত বন্ধ। তাই বলে বসে নেই কর্মীরা। আরও কিছু মানুষের সাহায্যে দফায় দফায় সেখানে তৈরি করা হয় মাস্ক। বলেন, ‘‘সকলে তো দামি মাস্ক কিনতে পারেন না। তাই বানাতে শুরু করেছি নিজেরাই।’’ এলাকার সাধারণ মানুষ যেন মাস্ক ছাড়া না বেরোন, সে দিকে নজর দেওয়াই লক্ষ্য।

এত কাজের অর্থ কোথা থেকে জোগাড় করেন অমৃতা? দায়িত্ব তো নেহাত কম নয়। মধ্য তিরিশের শিক্ষিকা কিছুটা লজ্জা প্রকাশ করেন। জানান, সকলকে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে তিনি দুঃখিত। যাঁরা খরচ করতে পারেন, তাঁদের থেকে টাকা নিয়েছেন। আর যাঁদের অর্থাভাব, তাঁদের জন্য বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করে চলেছেন। পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ তুলে দিয়েছেন অমৃতার হাতে। তা দিয়ে দুঃস্থ রোগীদের খাবারের জোগান দিয়েছেন। বলেন, ‘‘সংসারের সব খরচ সামলে হাতে বেশি অর্থ ছিল না যে প্রতিদিনের বাজার-রান্নার খরচ নিজে চালাব। নিজের কানের দুল বন্ধক রেখে শুরুতেই টাকা জোগাড় করি। তা দিয়ে কিছু ফয়েল পেপার আর খাবার দেওয়ার কন্টেনার কিনেছিলাম। তার ভরসাতেই কাজে নেমে পড়ি।’’

ছেলেকে কোলে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে যখন চলে আসতে হয়েছিল, তখন ওই এক জোড়া সোনার দুলই কোনওমতে আগলে রাখতে পেরেছিলেন অমৃতা। এখন সেই দুলের ভরসাতেই সমস্যায় পড়া মানুষদের আগলে রাখতে বদ্ধপরিকর তিনি। সঙ্কটের সময়ে শেষ সম্বলটুকু দিয়ে লড়ে যেতে ভয় পান না গোবরডাঙার অমৃতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন