COVID-19

কোভিড-আক্রান্তদের বিনামূল্যে রান্না করা খাবার দিচ্ছেন শহরের এক দল তরুণ-তরুণী

শুরুতে নিজেদের খরচেই কোভিড-আক্রান্তদের জন্য রান্না করছিলেন। তার পরে অনেকে এগিয়ে আসেন তাঁদের সাহায্য করতে। ২০০’র বেশি মিল রান্না হয়েছে তাঁদের হেঁসেলে।

Advertisement

পৃথা বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২১ ১৫:০১
Share:

কোভিড-রোগীদের বিনামূল্যে খাবার রান্না করে দিচ্ছেন এক দল তরুণ-তরুণী ছবি: ফেসবুক

বাড়িতে নিভৃতবাসে রয়েছেন যে কোভিড আক্রান্তেরা, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই বাড়িতে রান্না করার ব্যবস্থা নেই। হয়তো বাড়িতে সকলেই অসুস্থ, কিংবা বয়স্ক, রান্নার লোক আসতে পারছেন না। তেমন রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বহু শহরবাসী। তাঁদের মধ্যেই রয়েছেন শহরের তরুণ-তরুণীরাও। যাদবপুর এবং জওহারলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল প্রাক্তনী একজোট হয়ে লেগে পড়েছেন এই কাজে। ১ মে থেকে রাজারহাট, দমদম, বাগুইহাটি, তেঘরিয়া অঞ্চলের বহু মানুষকে বিনামূল্যে রান্না করে খাবার পাঠিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ২০০’র বেশি মিল তৈরি হয়েছে তাঁদের হেঁসেলে।

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বস্তিক পাল পেশায় আলোকচিত্রকর। কর্মসূত্রে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে বেশ কিছুদিন ঘোরাঘুরি করতে হয়েছিল। তার পরে পরিবারের বাকি সদস্যদের সুরক্ষিত রাখতে কিছু দিন আলাদা থাকেন তিনি। তখনই তাঁর প্রথম মনে হয়, কোভিড-রোগীদের জন্য রান্না করা যেতে পারে। ‘‘একদিন বাজারে গিয়ে কিছু শাক-সব্জি কিনে এনে রান্না শুরু করে দিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল বাড়িতেই বসে আছি, এইটুকু তো করতেই পারি। তার পরে এগিয়ে এল আমার বন্ধুরাও। প্রথমে নিজেদের খরচেই বাজার করছিলাম। কিন্তু কয়েক দিন যাওয়ার পর দেখলাম, বহু মানুষ আমাদের অর্থ সাহায্য করতে চাইছেন। এখন ভালই একটা ফান্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে,’’ বললেন স্বস্তিক।

স্বস্তিকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তাঁর বন্ধুরাও। বিতান বসু, সমাপন সাহা, তুনীর ঘোষ এবং রীতি সেনগুপ্ত সকলেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজটা সামলাচ্ছেন। রোজ সকাল ৭টা থেকে রান্না শুরু হয় তাঁদের। এবং শেষ হয় দুপুর ১টা নাগাদ। গড়ে ১৭-১৮টা মিল তৈরি করেন তাঁরা। কেউ রান্নায় সাহায্য করেন স্বস্তিককে, কেউ অর্ডার সামলান, কেউ প্যাক করতে হাত লাগান। বিতানের কথায়, ‘‘রোজ অনেকগুলোই অর্ডার পাচ্ছি আমরা। কিন্তু বাড়িতে ২০ জনের বেশি রান্না করার মতো ব্যবস্থা নেই আমাদের। তাই সে ভাবেই অর্ডার নিই। কোনও ডেলিভারি সংস্থার মাধ্যমে আমরা খাবারগুলি পাঠিয়ে দিই। খাবারের টাকা নিই না। কিন্তু যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁরা নিজেরাই ডেলিভারির মূল্য দিয়ে দেন। তবে যাঁদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ, তাঁদের কয়েক জনের ব্যবস্থা আমরাই করে দিয়েছি।’’

Advertisement

রান্নার পরিকল্পনা মূলত স্বস্তিকের। তিনি প্রত্যেক রাতে ঠিক করেন, পর দিন কী রান্না হবে। কম তেল-মশলা, টাটকা শাক সব্জি দিয়ে প্রোটিনে ভরপুর খাবার রান্না করার চেষ্টা করেন তিনি। ‘‘বাঙালিরা বেশিরভাগই ডাল-ভাত খান। সেটা থাকেই। সঙ্গে রোজই নতুন কোনও তরকারি আর পাশাপাশি হয় ডিম বা চিকেন রাখার চেষ্টা করি আমরা। আমি যাদবপুরে পড়ার সময় প্রত্যেক বছরে ফেস্টে একটা খাবারের স্টল দিতাম। তাই অনেকের জন্য রান্না করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। তবে এত ধরনের নিরামিষ রান্না এর আগে করিনি আমি। রোজ সকালে মা হোয়াট্‌সঅ্যাপে একটা রেসিপি পাঠান। আমি সেটা দেখেই করি,’’ বললেন স্বস্তিক।

বিনামূল্যে খাবার জোগান দেওয়ার পরিকল্পনা কত দিনের? বিতান জানালেন, যা আর্থিক সাহায্য তাঁরা প্রত্যেক দিন পাচ্ছেন, তাতে অসুবিধা হচ্ছে না। বরং অনেককেই তাঁরা এখন সাহায্য করতে নিষেধ করছেন। ‘‘আমাদের বন্ধুদের বাড়ির লোকও রান্নায় হাত লাগাচ্ছেন। কিন্তু এই ক’জন মিলে কতদিন রান্না চালিয়ে যেতে পারব জানি না। তাই আপতত আমরা আর অর্থ সংগ্রহ করছি না। এই মাসটা পুরোটা করব। তার পরে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা,’’ বললেন বিতান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন