Selfie

সেলফি তুলছেন? জানেন কি, দুর্ঘটনা ঘটলে বিমা বা মেডিক্লেম না-ও পেতে পারেন?

আজকাল বিমা কোম্পানিগুলি ‘অ্যাক্সিডেন্ট ইন্সিয়োরেন্স’ বা দুর্ঘটনা ঘটলে যে বিমা পলিসি সাহায্য করে, এর উপর জোর দিয়েছে।

Advertisement

কুমার শঙ্কর রায়

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ১৬:০৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মোবাইল ক্যামেরার সামনে সবাই হাসছে। কেউ ‘ভিক্ট্রি’ চিহ্ন বানাচ্ছে আঙুলের ফাঁক দিয়ে, বা কেউ নিশ্বাস চেপে পেট ঢুকিয়ে নিচ্ছে পাছে হাল্কা ভুঁড়ি বোঝা যায়। ক্লিক করলেই মোবাইলে যান্ত্রিক আওয়াজ হচ্ছে, ঠিক যেন ফটো তোলার মতো। হ্যাঁ, সেলফি নেওয়া প্রায় একটা সামাজিক কর্মে পরিণত হতে বসেছে। রেস্তরাঁ, পুজোমণ্ডপ, পার্টি, মেলা বা বন্ধুদের এক নির্ভেজাল আড্ডা হলেই সেলফি নেওয়া হল আজকের প্রথা।

Advertisement

কিন্তু বাড়াবাড়ি হলে দুর্ঘটনা হবেই। ভাল্লুকের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে সে দিন এক যুবকের মৃত্যু হল। সেলফি তুলতে গিয়ে সমুদ্রে বা নদীতে নানা দুর্ঘটনা হচ্ছেই। পাহাড়ে সেলফি তুলতে গিয়ে বন্ধুদের দল গুরুতর ভাবে আহত। ট্রেনে বা গাড়িতে চেপে মোবাইল বাইরে করে সেলফি নিতে গিয়ে কেটেই গেল ডান হাত। এ রকম নানা ঘটনা ঘটছে, শোনা যাচ্ছে। সেলফি-বাহিনীর কিছু আসে যায় না। কিন্তু আপনি কি জানেন, সেলফি নিতে গিয়ে আহত বা মৃত্যু হলে বিমা বা হাসপাতালের খরচ মেটাতে মেডিক্লেম পেতে নানা ঝামেলা হয়? সেলফি তুলতে গিয়ে কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে কী ভাবে ইন্সিয়োরেন্স ক্লেম বাতিল হতে পারে জেনে নিন।

নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল

Advertisement

দুর্ঘটনা মানে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেখানে আপনার ক্ষতি বা আঘাত হয়েছে। কিন্তু বিপজ্জনক সেলফি নিতে গিয়ে দুর্ঘটনা কি সত্যিই অপ্রত্যাশিত? নদীর মোহনায় নৌকা থেকে জলে পা ডুবিয়ে সেলফি নিতে গেলে ভাল, কিছু ঘটে না। ছাদের উপর জলের ট্যাঙ্কের কাছে গিয়ে মেঘকে পটভূমি বানিয়ে সেলফি তুলতে যাওয়াই বোকামি। কিন্তু, অনেকে সেই সেলফি ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে লাগিয়ে দেদার 'লাইক' পাচ্ছেন, সঙ্গে থাকছে অনুপ্রেরণা।

আজকাল বিমা কোম্পানিগুলি ‘অ্যাক্সিডেন্ট ইন্সিয়োরেন্স’ বা দুর্ঘটনা ঘটলে যে বিমা পলিসি সাহায্য করে, এর উপর জোর দিয়েছে। লাখ লাখ টাকার বিমা পেতে পারেন স্রেফ কিছু টাকার বিনিময়ে। কিন্তু আপনার অবহেলা বা অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে, বিমা কোম্পানিরা নারাজ।

আরও পড়ুন: বেশির ভাগ লিফ্‌টে কেন আয়না থাকে জানেন?

যতই আপনি বোঝানোর চেষ্টা করুন যে এটা স্রেফ এক দুর্ঘটনা, লাভ হবে না। বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে বিমা কোম্পানিগুলি এই গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিকে উপেক্ষা করবে না। যতই 'অ্যাক্সিডেন্ট' ইন্সিয়োরেন্স থাকুক, এক টাকা ক্লেম হিসেবে পেতে গিয়ে সামনে আসবে নানা ঝামেলা।

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে যে বিমা কোম্পানি কী ভাবে জানবে যে সেলফি নিতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়েছে? এই তথ্য জানার অনেক পথ আছে। ব্যক্তিগত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মৃত্যুর ক্ষেত্রে এফআইআর এবং ডাক্তার দ্বারা দেওয়া মৃত্যুর শংসাপত্রের অনুলিপি প্রয়োজন হয়। অক্ষমতার ক্ষেত্রে, এফআইআর-এর একটি অনুলিপি, একটি স্বীকৃত সরকারি হাসপাতাল কর্তৃক দেওয়া সার্টিফিকেট এবং ঘটনার বর্ণনার চিঠি প্রয়োজন। বিমা কোম্পানি নিজে থেকে একাধিক উৎস মারফৎ প্রতিটি তথ্য যাচাই করে।

জীবনবিমার ব্যাপারে একই রকম নিয়ম। মৃত্যু কী ভাবে হল সেটা বোঝে জীবনবিমা কোম্পানি। সেলফি নিতে গিয়ে যদি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে পুলিশের এফআইআর-এ উল্লেখ থাকতে পারে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট/অটোপসি, ভিসেরার প্রতিবেদন এবং চূড়ান্ত পুলিশি তদন্ত রিপোর্ট বা অভিযোগপত্র দেখে বিমা কোম্পানিগুলি। মৃত্যু হতেই পারে। আকস্মিক ঘটনা ঘটলে জীবনবিমা কোম্পানি পলিসির টাকা দেবেই। কিন্তু সাধারণত অবহেলার কারণে উদ্ভূত দাবিগুলি বিমা কোম্পানির দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। কোনও ভাবে যদি বিমা কোম্পানি জেনে যায় যে সেলফি নিতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়েছে এবং গ্রাহক অসাবধান হওয়ার ফলেই মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তা হলে নানান তথ্যানুসন্ধান করা শুরু হয়।

সেলফি নিতে গিয়ে আহত বা নিহত হলে বিমা বা হাসপাতালের খরচ মেটাতে মেডিক্লেম পাওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা হতে পারে। প্রতীকী ছবি।

আহত হলে হাসপাতাল

সেলফি নিতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে সব সময়ে মৃত্যু হয় না। গুরুতর আঘাত লাগলে চিকিৎসার প্রয়োজন। এর মানে হাসপাতাল, নার্সিহোম ইত্যাদি। অনেকেই মেডিক্লেম করিয়ে রাখেন, যাতে হাসপাতালে গিয়ে গলাকাটা খরচ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কিন্তু সেলফি নিতে গিয়ে চোট পেলে, মেডিক্লেম পেতেও নানা অসুবিধা হতে পারে।

আরও পড়ুন: হৃদরোগীর হয়রানি কমাতে বিশেষ যন্ত্র

আজকাল হাসপাতালে ভর্তি হলেই মেডিক্লেম সংস্থাকে জানাতে হয়। তাদের কর্মীরা এসে নথিপত্র দেখে বোঝার চেষ্টা করেন কী ভাবে হয়েছে ঘটনা। নানা প্রশ্ন এবং দুর্ঘটনার বিবরণ শুনে বোঝার চেষ্টা চালান যে গ্রাহক নিজের ব্যাপারে নিরাপত্তা রেখেছিল কি না। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ঝুঁকি নেওয়ার ফলে যদি কেউ আহত হন, তা হলে এই ধরনের হাসপাতালের খরচ না-ও মানতে পারে মেডিক্লেম সংস্থা। এটা মনে রাখতে হবে যে সেলফি তোলা নিয়ে মেডিক্লেম পলিসিতে কিছু লেখা থাকে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এ রকম ঘটনা ঘটলে আপনি পার পেয়ে যাবেন।

মেডিক্লেম পলিসির ক্ষেত্রে সত্যি দুর্ঘটনা ঘটলে তবেই টাকা দিতে বাধ্য কোম্পানি। ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত পেলে টাকা পেতে অনেক ঝামেলা। শুধু মাদকদ্রব্য বা অ্যালকোহলের অপব্যবহার করলেই যে কোম্পানি হাসপাতালের খরচ দেবে না, এ রকম নয়। জেনে বুঝে বিপদের সামনে যাওয়াকে দুর্ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না কোম্পানি।

মারাত্মক কোনও ঝুঁকির কারণে সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে যদি আঘাত হয়ে থাকে, মেডিক্লেম সংস্থার কাছ থেকে টাকা বার করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে। আপনি হয়তো সব শর্তাবলী পড়েননি, কিন্তু আপনি মেডিক্লেম পলিসির পেপারে সই করেছিলেন। তাই আইনত আপানাকে মানতে হবে।

স্বাস্থ্য বিমা খরচের দাবির ক্ষেত্রে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন ডাক্তারের কাছ থেকে চিঠি এবং ঘটনার বিবরণ জরুরি। কেন হাসপাতালে ভর্তি হতে হল, এর কারণ উল্লেখ করতে হয়। দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশের রিপোর্ট লাগতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন