বিরতি কেন জরুরি

প্রত্যেক বার খাবারের মাঝে লম্বা বিরতিতে ওজন কমতে পারে। যাকে বলা হয় ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। কিন্তু তার ঠিক পদ্ধতিও জানা জরুরিফাস্টিংয়ের সময়ে যদি খাবার খাওয়া হচ্ছে না বলে অবসাদ গ্রাস করে, তা হলে তা কাজে দেবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

সোজা কথায় যাকে বলে উপোস। বহু যুগ ধরেই কিন্তু এই পদ্ধতি চলে আসছে। তার কিছু উপকারও আছে। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও এর ইতিবাচক দিকটিও অস্বীকার করা যায় না। তবে এই ফাস্টিং শুরু করার আগে নিজেকে তার জন্য তৈরি করতে হবে। ফাস্টিংয়ের সময়ে যদি খাবার খাওয়া হচ্ছে না বলে অবসাদ গ্রাস করে, তা হলে তা কাজে দেবে না।

Advertisement

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কী?

Advertisement

এটি কোনও ডায়েট নয়। বরং কখন বা কতক্ষণ অন্তর মিল পরিকল্পনা করছেন, তা-ই প্রাধান্য পায় এই পদ্ধতিতে। তার জন্য দীর্ঘ সময় উপোস করতে হয়। যেমন আপেল বা কলা খেলে দেখবেন, সঙ্গে সঙ্গে এনার্জি পাওয়া যায়। কারণ তখন শরীর তার থেকে গ্লুকোজ় পায়। কিন্তু যদি সেই খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেন, তখন শরীর গ্লুকোজ় পাবে কোথা থেকে? সেই সময়ে শরীরের পেশি এবং লিভারে জমা গ্লাইকোজেন থেকে শক্তি সরবরাহ হয়। এ ভাবেই কাজ শুরু হয়। তাই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের কাজ শুরু হয় শরীরে সঞ্চিত এনার্জি দিয়ে। কিন্তু ফাস্টিংয়ের স্ট্রেস বাড়তে থাকলে কর্টিসল হরমোন ক্ষরণ বেড়ে যায়। তখন কিন্তু এই ফাস্টিংয়ের সুফল আর কিছু পাবেন না। তাই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শুরু করার আগে নিজেকে মানসিক ভাবে তৈরি করা জরুরি।

কী ভাবে কাজ হয়?

খাবার খাওয়ার পরে যখন শরীর তা গ্রহণ করে, সেটাকে বলে ফেড স্টেট। সাধারণত খাওয়ার সময় থেকেই এই স্টেট শুরু হয়। আর খাবার হজম করা অবধি ৩-৪ ঘণ্টা এই ফেড স্টেট চলে। এই সময়ে ইনসুলিন লেভেল বেড়ে যাওয়ায় শরীর ফ্যাট বার্ন করতে পারে না। ফেড স্টেটের পরে শুরু হয় ফাস্টেড স্টেট, এটা সাধারণত ৮-১০ ঘণ্টাই থাকে। এই সময়ে ইনসুলিনের মাত্রা কম থাকায় ফ্যাট বার্ন করে তাড়াতাড়ি। এ সময়টা বাড়ালে ফ্যাট বার্নের পরিমাণও বাড়বে। ফলে অল্প সময়ে ওজন কমতে পারে। তবে এই টাইম শেডিউল সেট করাও জরুরি।

কতক্ষণ ফাস্টিং করবেন?

এ বিষয়ে নানা মত রয়েছে। নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

১৬/৮ মেথড: এই পদ্ধতিতে ব্রেকফাস্ট স্কিপ করা যায়। এ ক্ষেত্রে টানা ষোলো ঘণ্টা উপোস থাকতে হবে। তার পরের আট ঘণ্টা আবার খেতে পারবেন। তবে জাঙ্ক ফুড নয়।

এ ছাড়াও ২৪ ঘণ্টা ফাস্টিং কিংবা ৫:২ অর্থাৎ গোটা সপ্তাহকে পাঁচ এবং দু’দিনে ভাগ করে নিয়ে এই ফাস্ট করতে পারেন।

সচেতনতাও জরুরি

• ডায়াবিটিক রোগীদের খাবার খাওয়ার সময় মাপা থাকে। অনেক ডায়াবেটিক রোগী দু’ঘণ্টার ব্যবধানে খাবার খান। সে ক্ষেত্রে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং তাঁদের জন্য ঠিক নয়। ঠিক সময়ের ব্যবধানে তাঁদের খাদ্যগ্রহণ করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের ফাস্ট শুরু করা উচিত নয়।

• অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ক্যানসারাস কোষের গ্রোথ কমাতে সাহায্য করে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। সুস্থ মানুষের শরীরেও ক্যানসারাস সেল থাকতে পারে। তা ম্যালিগন্যান্ট হলেই অসুখ ধরা পড়ে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ফাস্টিংয়ের ফলে ক্যানসারাস সেল ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে না। সাধারণত গ্লুকোজ় গ্রহণেই এই ধরনের কোষের বাড়-বৃদ্ধি হয়। সরাসরি ফুড এনার্জি পেলে ক্যানসারাস কোষের গ্রোথ বাড়ে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ফাস্টিংয়ে থাকলে এরা সরাসরি খাবার পায় না। তখন এই কোষ ভাঙতে শুরু করে। এক সময়ে মৃত হয়ে যায়।

• ফাস্টিং শেেষ খাওয়ার ব্যাপারেও সচেতন থাকুন। খাওয়ার সময় শুরু হওয়া মাত্রই বিরিয়ানি, চাঁপ জাতীয় ভারী খাবার খেতে বসে পড়বেন না। বরং ঈষদুষ্ণ জল খেয়ে অল্প ফল খেয়ে খাওয়া শুরু করুন। কিছুক্ষণ পরে ভাত, ডাল, স্যালাড, মাছের ঝোল জাতীয় খাবার খেতে পারেন। আর রাতের দিকের মিলে আনাজপাতির পরিমাণ বেশি রাখতে হবে। শর্করা না রাখলেই উপকার পাবেন বেশি। প্রোটিন রাখতে চাইলে অল্প রাখতে পারেন।

• এ ধরনের ফাস্টিংয়ে অ্যাসিড হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই শরীরে অ্যালকালাইন ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। তার জন্যই বেশি আনাজপাতি রাখতে হবে ডায়েটে।

• এই ধরনের ফাস্ট শুরু করার সময়ে দিনে বারো ঘণ্টা এবং সপ্তাহে তিন-চার দিন করে শুরু করতে পারেন। বাকি দিনগুলিতে আপনার স্বাভাবিক ডায়েটে চলতে পারেন।

• জল ছাড়া ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বেশি কার্যকর। তবে তাতে ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে উপোসের ধরন পালটাতে হবে।

• শরীরে এনার্জি বজায় রাখতে রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক টেবিল চামচ ভার্জিন নারকেল তেল খেতে পারেন। ঈষদুষ্ণ জল বা কালো কফিতে দিয়ে খেলে তা বেশি কার্যকর। তা ছাড়া চালকুমড়োর জুস বা শসার রসে মিশিয়েও খেতে পারেন। ফলের রস চলবে না।

তথ্য: ডায়াটিশিয়ান পূজা আগরওয়াল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন