Anoushka Shankar

‘বডি শেমিং’-এর প্রতিবাদে অনুষ্কা শঙ্কর, সমাজমাধ্যমে নারীকে অসম্মান কেন? মতামত জানালেন শিল্পীরা

পোশাক পরার জন্য সমাজমাধ্যমে কটাক্ষের শিকার হয়েছেন সেতারবাদক অনুষ্কা শঙ্কর। তাঁর প্রতিবাদের সূত্র ধরেই ‘ট্রোলিং’ প্রসঙ্গে মতামত জানালেন বাংলার শিল্পীরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:২৫
Share:

বাংলা থেকে অনুষ্কা শঙ্করকে সমর্থন জানালেন সোহিনী সেনগুপ্ত, শিলাজিৎ মজুমদার এবং শ্রীনন্দা শঙ্কর। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সমাজমাধ্যম যত দৈনন্দিন জীবনকে বেঁধে ফেলছে, ততই বাড়ছে ট্রোলিং। আর যেখানে নারীর উপস্থিতি, সেখানে বাড়ছে ‘বডি শেমিং’। সম্প্রতি সেতারবাদক অনুষ্কা শঙ্কর সমাজমাধ্যমে তার শিকার হয়েছেন। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার উদাহরণও তিনি ফেসবুকে তাঁর দীর্ঘ পোস্টের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

অনুষ্কা যে ছবিগুলি পোস্ট করেছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে, কোথাও বিকিনি পরার জন্য তাঁকে কটাক্ষ করা হয়েছে। আবার কোথাও মঞ্চে সেতার বাদনের সময় তাঁর বক্ষবিভাজিকা প্রকাশ্যে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার কোথাও বাবা রবিশঙ্করকে তিনি যেন অসম্মান না করেন, সে কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনুষ্কা তাঁর পোস্টের একটি অংশে লিখেছেন, ‘‘আমার দেহে যা যা ঘটেছে বা সেটি যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে, তার জন্য আমি আমার শরীরকে ভালবাসি।’’ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে সমাজমাধ্যমে নারীশরীরকে প্রশ্নে বিদ্ধ করার প্রবণতা অনুষ্কার ভাষায় নেহাতই ‘বোকামো’। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘আমার শরীর অন্য কারও মন্তব্য করার জন্য নয়।’’

তারকাদের ক্ষেত্রে কটাক্ষ বা ‘বডি শেমিং’ যে সময়ের সঙ্গে বাড়ছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শালীনতার মাত্রা বা ব্যক্তির সহ্যক্ষমতা অতিক্রম করলে, অনেকেই তার প্রতিবাদ করেন। অনুষ্কার প্রতিবাদ বাংলার শিল্পীমহলেরও অগোচরে নেই। অভিনেত্রী তথা নাট্যকর্মী সোহিনী সেনগুপ্ত যেমন সমাজমাধ্যম ব্যবহার করেন না। তাই ট্রোলিংকে বিশেষ পাত্তাও দিতে নারাজ। বললেন, ‘‘সমাজমাধ্যম দেখি না বলে কে কী বলছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। সেই দৃঢ়তা আমার আছে।’’

Advertisement

সোহিনীর মতে, কেউ চাইলে সমাজমাধ্যমের ‘বিষাক্ত’ পরিবেশ থেকে সচেতন ভাবেই দূরে থাকতে পারেন। কিন্তু সমাজমাধ্যমে না থাকলেও যে তারকারা লক্ষ্যবস্তুই রয়ে যান। সোহিনীও তা জানেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল বা খারাপ, মন্তব্য যা-ই হোক না কেন, গায়ে মাখি না। কখনও নেতিবাচক কিছু কানে এলেও সেটা বেশ হাস্যকরই লাগে। ফলে সমস্যা হয় না।’’

ফেসবুকে অনুষ্কা শঙ্করের পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত।

সমাজমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই ট্রোলিংয়ের শিকার হন গায়ক শিলাজিৎ মজুমদার। কাউকে পাল্টা উত্তর দিতে হলে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরই তাঁর হাতিয়ার। বললেন, ‘‘এমন দিন চলে এসেছে, একটা গান পোস্ট করলেও কমেন্টে লেখা হচ্ছে আমি তৃণমূল করি! আবার দেখছি কখনও ‘মাকু’ লেখা হল! আমি সত্যিই বুঝতে পারি না।’’ ‘বডি শেমিং’ নিয়ে তিনি কথা বলতে গিয়ে তিনি অতীতে ফিরতে চাইলেন। শিলাজিতের মতে, অতীতে পাড়ায় কেউ কাউকে টিপ্পনী করলে অন্যেরা তা মেনে নিতেন। কারণ, দু’পক্ষই পরস্পরকে চিনতেন। বাড়াবাড়ি হলে প্রতিবাদও হতো। শিলাজিৎ বললেন, ‘‘ছোটবেলায় আমার মোটা ছিলাম বলে বলে পাড়ার ক্লাবে নাম হলে গেল ‘ভুঁড়ি’। স্কুল বাসের ড্রাইভার আমাকে 'ছুঁচো' বলে ডাকতেন। আমি তো গায়ে মাখিনি।’’

শিলাজিতের মতে, তাঁর শৈশবে ‘বডি শেমিং’ শব্দটাই ছিল না। এখন সময়ের সঙ্গে তার সংজ্ঞা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিলাজিতের মতে, ‘‘পাড়ার মানুষ খারাপ বললেও গায়ে লাগে না। কারণ তাঁরাই বিপদে পাশে দাঁড়ান। আর সমাজমাধ্যমের পাড়া ব্যক্তি নিজে তৈরি করে।’’ তাই গায়েকের মতে, সেই পাড়ায় অপরিচিত ব্যক্তিকে সময় দেওয়ার অর্থ, নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করা। শিলাজিতের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সেতার বাজানোর সময় একজন মহিলা সেতারশিল্পীর বক্ষবিভাজিকা দেখা গিয়েছে তো কী হয়েছে?’’

অনুষ্কা তাঁর পোস্টে শৈশবে যৌন হেনস্থার পাশাপাশি মাতৃত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, চার বার দেহে অস্ত্রোপচার এবং ‘পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হওয়ার কথা। কটাক্ষ বা ‘বডি শেমিং’কে অনেকে গায়ে না মাখতে শিখে গিয়েছেন। আবার প্রকাশ্যে প্রতিবাদ না করলেও যে তা মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্বাস করেন নৃত্যশিল্পী তনুশ্রী শঙ্করের কন্যা শ্রীনন্দা শঙ্কর। বলছিলেন, ‘‘এটা তো আজকের বিষয় নয়! ছোটবেলায় আমি খুব মোটা ছিলাম। বিখ্যাত বাবা-মায়ের সন্তান বলে আমি কেন ‘হাতি’র মতো মোটা, সেই প্রশ্নের সম্মুখীনও হতে হয়েছে।’’

তবে সময়ের সঙ্গে ত্বক ‘পুরু’ করে নিতে শিখেছেন শ্রীনন্দা। স্পষ্ট বললেন, ‘‘আমি দেখেছি, খোলামেলা বা গা ঢাকা পোশাকই হোক বা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অপারেশন— মানুষের মন্তব্য থাকবেই। কারণ সমাজমাধ্যম।’’ সময়ের সঙ্গে সমাজমাধ্যম যে দ্বিচারিতায় ভরে উঠছে, সে কথা মনে করিয়ে দিতে চাইলেন তিনি। মহিলাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দার পরামর্শ, ‘‘গায়ের চামড়া মোটা করে নিন। কারণ প্রতিক্রিয়া জানালেই ট্রোলিংও বাড়বে। জানবেন, বেআইনি কাজ না করলে আপনাকে নিয়ে কারও কোনও মন্তব্য করা সাজে না!’’

ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এক জন ব্যক্তি নারীশরীরকে প্রকাশ্যে সমালোচনায় বিদ্ধ করতে পারেন? নেপথ্যে তাঁর মনের অবচেতনে কী চলে? এ প্রসঙ্গে মনোবিদ শর্মিলা সরকার বললেন, ‘‘সমাজে সমষ্টিগত মানসিকতাই হল, অন্যের ভাল দেখতে না পারা। সেখানে সমাজমাধ্যমে স্বাধীনতা রয়েছে। ফলে এক জন কথা বললে, বাকিরাও বলতে শুরু করেন।’’

শর্মিলার মতে, একটা সময়ে শুধু তারকাদেরই ট্রোলিংয়ের শিকার হতে হত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এক জন সাধারণ মানুষও সেই পরিসরে চলে এসেছেন। শর্মিলার আক্ষেপ, ‘‘নিজে ভাল না থাকলে অন্যের প্রশংসা করা যায় না। ফলে সার্বিক ভাবে ব্যক্তি মানসিকতার বড় রকমের পরিবর্তন হচ্ছে। সমাজমাধ্যমে বলা কথার দায়িত্ব নিতে হয় না বলে অন্যকে অপমান করার প্রবণতাও বাড়ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement