hot

ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে পুজোর আগে অসুখ এড়ান, মেনে চলুন এ সব নিয়ম

অসুস্থতার ধরন ও তার প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা থাকলে রোগ সামলানো সহজ হয়। ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে নানা অসুস্থতা কী ভাবে সামলাবেন?

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৪৫
Share:

এমন গরমে শুধু এসি–র উপর ভরসা না করে, অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে৷ —নিজস্ব চিত্র।

ভাদ্র মানেই হয় গনগনে আঁচে ঝলসে দিচ্ছে দিনভর, নয়তো মেঘলা হয়ে মুখভার করে বসে থেকেও বৃষ্টির দেখা নেই, উল্টে বাড়িয়ে চলেছে আপেক্ষিক আর্দ্রতা।

Advertisement

এমন ভ্যাপসা গরমে তরতাজা মানুষই যেখানে নাকাল হয়ে পড়েন, শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক মানুষ ও রোগীদের কী হাল হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়৷ কাজেই এমন গরমে শুধু এসি–র উপর ভরসা না করে, অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে৷ নইলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন৷

পুজোর আগে তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে ও অসুখ এড়াতে কিছু সাবধানতা নিতেই হবে। সতর্ক থাকতে হবে বাড়িতে কোনও বিশেষ রোগে আক্রান্ত সদস্য থাকলেও। অসুস্থতার ধরন ও তার প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা থাকলে রোগ সামলানো সহজ হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: হার্নিয়া থেকে মুক্তি দিচ্ছে রোবোট! কেমন করে?

আস্থা রাখুন ডাবের জলে।

ভ্যাপসা গরমের অসুস্থতা

এমন গরমে অতিরিক্ত কাজ, খেলা বা ব্যায়াম করলে পেশিতে তীব্র ব্যথা হতে পারে৷ একে বলে হিট ক্র্যাম্প৷ ঘাম ও চড়া রোদের যুগলবন্দিতে র‌্যাশ বেরোতে পারে চামড়ায়৷ রান্নারান্না সেরেই এসি চালিয়ে বিশ্রাম নিলে, বাইরে থেকে এসে ঘাম না শুকিয়ে ঠান্ডা জল খেলে বা ঠান্ডা ঘরে বসে পড়ার মতো অনিয়ম করলে জ্বর–সর্দি–কাশি এড়ানো কঠিন৷ ভাদ্রের রোদের দিন হিট এক্সারসানে খুব বেশি ঘাম হয়৷ রোগী ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েন৷ দ্রুত শ্বাস পড়ে৷ তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা না নিলে এখান থেকে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা প্রবল৷ হিট সিনকোপ নামের সমস্যায় রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান৷ হিট স্ট্রোকে তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমজোরি হয়ে হঠাৎ শরীরের তাপ বেড়ে যায়৷ ১০৫ ডিগ্রির উপর৷ এটা কিন্তু জ্বর নয়৷ এর সঙ্গে ঘাম হয় না বলে শরীরের তাপ বেরোতে পারে না৷ বিপদ বাড়ে৷ ভাদ্রে সারা দিন খুব ভ্যাপসা গরমের পর সন্ধের দিকে ঝড়বৃষ্টি এলে হঠাৎ ৭–৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমে যায়। অ্যাজমার রোগীদের এই সময় যত্নে রাখুন। তাপমাত্রার ওঠানামায় এঁদের অ্যাটাক হতে পারে৷

বিপদ ঠেকাতে

হলদেটে ইউরিন হলে বা ইউরিনের পরিমাণ কমে গেলে জল খাওয়া বাড়ান৷ জল খাওয়ার বিধিনিষেধ থাকলে অবশ্য আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷ ডিহাইড্রেশন এড়াতে মদ–কফি–কোলা খাওয়া কমান৷ হালকা খাবার খান, পেট একটু খালি রেখে৷ বেশি খেয়ে রোদে বেরোবেন না বা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না৷ চড়া রোদ এড়ানো সম্ভব না হলে বেরনোর আগে এক গ্লাস জল খান৷ প্রেশার–সুগার না থাকলে নুন–চিনির জল বা ওআরএস খেতে পারেন৷ এক–আধবার ডাবের জল, টাটকা ফলের রস বা ঘোলও খেতে পারেন৷ রাস্তার জল, শরবত বা কাটা ফলের রস খাবেন না৷ রোদে বেরোলে ছাতা/টুপি, সানগ্লাস ও হালকা সুতির পোশাক পরুন। রোদে বা গরমের মধ্যে অনেক ক্ষণ টানা কাজ করবেন না৷ কাজের ফাঁকে ঠান্ডা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজে ফিরুন৷ হাঁপানি রোগীরা এই সময় দিনের শেষে আকাশে মেঘ দেখলে প্রিভেন্টার ইনহেলারের একটা পাফ নিন৷ বা যদি মনে হয় কষ্ট শুরু হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের ডোজ বাড়ান৷

আরও পড়ুন: সন্তান পরীক্ষা-ভীতিতে ভোগে? ভাল ফল পেতে এ সব উপায়ে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করুন​

রোদ থেকে বাঁচান শিশুদেরও। ছবি: আইস্টক।

সমস্যা হলে

পেশিতে ব্যথা হলে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় গিয়ে ব্যথা না কমা পর্যন্ত বিশ্রাম নিন৷ ওআরএস খেতে হবে৷ ছাতা, টুপি ও সানস্ক্রিনে সান বার্ন ও র‌্যাশ ঠেকানো না গেলে দিনে দু’–তিন বার ঠান্ডা জলের ঝাপটায় মুখ ধুয়ে ক্যালামাইন লাগান৷ অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধ খেতে হতে পারে৷

হিট এক্সারশন হলে গরম থেকে সরে গিয়ে বিশ্রাম নিন৷ কষ্ট না কমা পর্যন্ত নুন–চিনির শরবত বা ওআরএস খেতে থাকুন৷ ডাবের জলও খেতে পারেন৷ কষ্ট কমতে শুরু করার পর হাত–মুখ ধুয়ে ফ্যান বা এসি চালিয়ে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিন৷

অজ্ঞান হয়ে গেলে ব্যাপারটা এমারজেন্সি৷ খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে গরম থেকে সরিয়ে ঠান্ডা জলে শরীর বার বার মুছে মাথা ধোওয়াতে থাকুন৷ ফ্যান বা এসি চালিয়ে দিন৷ স্বাভাবিক ঠান্ডা জলে স্নানও করাতে পারেন৷ অজ্ঞান না হলে বাথটবে শুইয়ে দেওয়া যায়৷ এর পাশাপাশি শরীরে নুন–জলের ঘাটতি মেটাতে হয় দ্রুত৷ জ্ঞান থাকলে ওআরএস খাওয়াতে থাকুন৷ অজ্ঞান হলে বা বমি করলে স্যালাইন চালাতে হবে৷ দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান৷ সর্দিগর্মি হলে দু’-চারটে প্যারাসিটামল ও অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধ খান৷ দু’–এক দিনেই কষ্ট কমে যাবে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন