ভরপুর খেয়েই কমান ওজন

সামনেই রি-ইউনিয়ন পার্টি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়াদাওয়ায় কলেজের দিনগুলো ফিরে পাওয়া। মনেই হয় না কলেজের গণ্ডী পেরিয়ে এরই মধ্যে কেটে গিয়েছে দশটা বছর। বেড়েছ দায়িত্ব, সঙ্গে বেড়েছে ওজনটাও। যা নিয়ে কলেজ-দোস্তদের সামনে যেতে অস্বস্তিতে থাকেন অনেকেই।

Advertisement

নবনীতা গুহ

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ২৩:৩৪
Share:

সামনেই রি-ইউনিয়ন পার্টি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়াদাওয়ায় কলেজের দিনগুলো ফিরে পাওয়া। মনেই হয় না কলেজের গণ্ডী পেরিয়ে এরই মধ্যে কেটে গিয়েছে দশটা বছর। বেড়েছ দায়িত্ব, সঙ্গে বেড়েছে ওজনটাও। যা নিয়ে কলেজ-দোস্তদের সামনে যেতে অস্বস্তিতে থাকেন অনেকেই। তাই হয়তো বয়সের সঙ্গে বাড়ছে কাজের ফাঁকে ইন্টারনেট ঘাঁটার অভ্যাসটা। যদি হাতে এসে যায় কোনও চটজলদি স্লিমিং ডায়েট।

Advertisement

এমন ক্ষেত্রে সবার আগে চোখ টানে ‘ক্র্যাশ ডায়েট’। কম সময়ে অনেকটা ওজন কমানোর সহজ উপায়। ব্যাস, সাত দিন পড়ি কি মরি করে কম খেয়ে, কখনও বা না খেয়ে শুরু হল ওজন কমানোর সাধনা। ওজন সত্যিই কমে খানিক। আর সেই আনন্দে খেয়াল থাকে না, কম খাওয়ার জন্য শরীরে কোনও উপাদানের ঘাটতি হল কি না! আখেরে যে হয় নিজেদেরই ক্ষতি, সে দিকে আর খেয়ালই থাকে না।

মোটা হওয়ার প্রবণতাটা কিন্তু আগে এতটা ছিল না, বলছেন ডায়েটিশিয়ানরাই। অতি-ওজনের সমস্যার জন্য তাঁরা দায়ী করছেন আধুনিক জীবনযাত্রাকেই। মূলত জাঙ্ক ফুড নির্ভর খাওয়া আর শারীরিক ভাবে কম সচল থাকাই এর মূল কারণ। তবে কষ্ট করে কম খেয়ে থাকার চেয়ে জীবনযাত্রা খানিক শুধরে নেওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন তাঁরা। অনিয়মে ব্যস্ত জীবনকে খানিক নিয়মে বাঁধলেই নিশ্চিন্ত।

Advertisement

কী খাচ্ছেন সে দিকে নজর রাখাটা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি খাবারের পরিমাণের দিকে নজর রাখা। এমনটাই মত ডায়েটিশিয়ান ঈশানী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘খেয়াল রাখতে হবে যাতে রোজের খাবারে শরীরের প্রয়োজনীয় সব উপাদান থাকে। কোনও খাবার ভাল বলে তা বেশি খাওয়া কাজের কথা নয়। তাতে আখেরে পেটের উপরেও চাপ পড়ে এবং মেদও জমে বেশি।’’

ডায়েটিশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী আবার জোর দিচ্ছেন খাওয়ার সময়ের দিকেও। তাঁর মতে, মূল খাবারের সময় তিনটে— সকাল, দুপুর এবং রাত। এর মধ্যে সকালেই সবচেয়ে বেশি খাওয়া উচিত এবং দিন গড়ানোর সঙ্গে কমিয়ে ফেলতে হবে পরিমাণ।

এত নিয়ম কি মানা সম্ভব? ব্যস্ততার মধ্যে নিয়ম করে খাওয়া তো অনেক সময়েই হয়ে ওঠে না। ঈশানী অবশ্য জানালেন, নিজের সময় মতো পরিমিত খাবার খেলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে শরীর। এর না হয় সমাধান হল, কিন্তু এখন তো রাত জেগে পড়াশোনা বা কাজ প্রায় নিয়মের মধ্যেই পড়ে। রাতের খাওয়া সারার পরেও কাজ করতে গিয়ে খিদে পাওয়া এবং তখন খুচখাচ খাওয়াও তাই প্রায় রুটিন। এ দিকে বি়জ্ঞান বলে, রাতে আমরা কম সচল থাকি বলে ক্যালোরি পোড়ে কম। রাতে বেশি খেলে তা আখেরে জমে মেদ হিসেবে। এ সমস্যারও সমাধান আছে ঈশানীর কাছে। জানালেন, এ ক্ষেত্রে গোটা দিনে খাওয়ার পরিমাণ হিসেব করে পেটে খানিক জায়গা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা হলেই আর রাতের দিকে হাল্কা স্বাস্থ্যকর কিছু খেলে অসুবিধে হবে না।

এর সঙ্গে প্রয়োজন শারীরিক ভাবে সচল থাকাও। তবেই কমবে মেদ। ঈশানী জানালেন, একটু হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে থাকলেও ক্যালোরি পোড়ে। তা মাথায় রাখলেই রোগা হওয়া অনেক সহজ।

না খেয়ে ওজন কমানোর মতো মানুষ যেমন আছেন, তেমনই আবার অনেকেই এখন শরীর সম্পর্কে বেশ সচেতন। খাবার নিয়ে, শরীর চর্চা নিয়ে অনেকেই ভাবেন— সেটা অবশ্যই ভাল দিক, বলছিলেন রেশমী। তবে জানালেন, অনেকে অত্যধিক মাত্রায় সচেতন হয়ে পড়েন। যতই রোগা হন না কেন, তাঁদের মনে হয় আরও রোগা হতে হবে। ভেবে ভেবেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

বিপদ রয়েছে আরও। রোগা থাকার জন্য বেশির ভাগই খাওয়াদাওয়ার পরিমাণ কমান নিজের ইচ্ছে মতো। ডায়েটিশিয়ানদের কাছে না গিয়ে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে বন্ধু বা সহকর্মীর ডায়েট চার্ট মেনে চলতে শুরু করেন। অথচ প্রত্যেকের শরীরের গঠন আলাদা। সব প্রয়োজনীয় উপাদানও সকলের শরীরে এক পরিমাণে দরকার হয় না, জানালেন ঈশানী। তাই প্রত্যেকের খাবার তালিকাও হওয়া উচিত আলাদা। এ সব দিকে খেয়াল রাখলে তবেই শরীর সুস্থ রেখে রোগা হওয়া সম্ভব। কাজেই না খেয়ে বা কম খেয়ে থাকার কিন্তু আর প্রশ্নই ওঠে না। মনকে শুধু বুঝতে হবে, চলো নিয়ম মতে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন