চিকিৎসকদের মতে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দ্রুত শুরু হওয়া জরুরি। অর্থাৎ রোগীর সমস্যা শুরুর এক ঘণ্টা বা ‘গোল্ডেন আওয়ারের’ মধ্যে। ওই সময়ের মধ্যেই ইসিজি রিপোর্ট দেখে বুঝে নিতে হয় রোগীর হৃদ্যন্ত্রের অবস্থা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রিপোর্ট পেয়ে চিকিৎসা শুরু করতেই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। ফলে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শহরে রোগীকে আনতে পেরিয়ে যায় ‘গোল্ডেন আওয়ার’!
এ বার এই সমস্যার সমাধানে এক বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে রোগীর নাগালের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা (অ্যাকসেসেবল হেলথ কেয়ার) শুরু হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে তা শুরুও হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ওই যন্ত্র থাকবে। সেখান থেকে সরাসরি রোগীর ইসিজি রিপোর্ট শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হবে। যা দেখে হাসপাতালে বসেই চিকিৎসকেরা বুঝতে পারবেন রোগীর হৃদ্স্পন্দন অনিয়মিত কি না। পরবর্তী ধাপে চিকিৎসার পরামর্শও দেবেন তাঁরা। আলিপুরের ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় তাঁরা ওই যন্ত্র দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন।
হাসপাতালের ইউনিট হেড শান্তনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলেই তৎক্ষণাৎ রোগীকে শহরে আনার প্রয়োজন নেই। গ্রামে বসেই ওই যন্ত্রের মাধ্যমে ইসিজি রিপোর্ট পাঠানো যাবে। রিপোর্ট দেখে আমাদের চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেবেন। যদি তাঁরা মনে করেন, দ্রুত অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা দরকার তা হলেই আসতে বলা হবে।’’ শান্তনুবাবুর মতে, অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতেও চিকিৎসা হতে পারে। এর ফলে হয়রানি কমবে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই যন্ত্রের ব্যবহারের জন্য রোগীকে বাড়তি টাকাও গুনতে হবে না।
কার্ডিও থোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারের মতে, ‘‘দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই পরিষেবা খুবই উপযোগী। জাতীয় স্তরে এমনই একটি উদ্যোগ ইতিমধ্যেই চলছে। তবে এ রাজ্যে এখনও তা শুরু হয়নি।’’ তিনি জানান, এ দেশে হৃদ্রোগে আক্রান্তদের মাত্র ২৫ শতাংশের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর অবস্থা বুঝতেই সময় পেরিয়ে যায়। এই যন্ত্রের উপযুক্ত ব্যবহার করতে প্রতি জেলায় একটি সেন্ট্রাল পয়েন্ট রাখতে হবে। তার ২০-৩০ মিটারের মধ্যে প্রস্তুত প্যারামেডিক্যাল দল রোগীর ডাক পেলেই ইসিজি যন্ত্রের মাধ্যমে রিপোর্ট সেন্ট্রাল পয়েন্টে পাঠাবে। এই ব্যবস্থা থাকলেই রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
কার্ডিও থোরাসিক সার্জন সত্যজিৎ বসু বলছেন, ‘‘এমন ব্যবস্থায় তৎক্ষণাৎ বোঝা যাবে, কোন রোগী হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, কে হননি। ফলে অযথা রোগীকে শহরে আনিয়ে হয়রানির পাশাপাশি খরচও কমবে।’’