Hilsa Recipes

চেনা ইলিশের অচেনা রান্না! দুই বাংলার স্বাদ-বন্ধনে ফোড়ন দিচ্ছে কলকাতার রেস্তরাঁ

ইলিশের মরসুমে গোটা কলকাতা যখন ভাজা-ভাপা-পাতুরি-কালোজিরে আর বেগুনের ঝোল নিয়ে মাতোয়ারা, তখন শহরে ও পার বাংলার নানা জেলা থেকে তুলে আনা অচেনা ইলিশের স্বাদ নিয়ে হাজির হয়েছে এক রেস্তরাঁ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ১৭:০৭
Share:

ইলিশের অজানা গল্প! —নিজস্ব চিত্র।

কুলের টক খেয়েছেন, ইলিশের টকও খেয়েছেন। কিন্তু টোপা কুল দিয়ে ইলিশের টক খেয়েছেন কি?

Advertisement

কোনও এক বর্ষার দুপুরে ইলিশের এলাহি ভোজ খাওয়ার ইচ্ছে হল। দেখলেন প্রথম পাতে ইলিশ মাছের তেল বা ভাজা মাছ দেওয়া হল না। বদলে বেড়ে দেওয়া হল লাউপাতায় মোড়া হালকা মশলায় মাখানো আঙুলের মাপের ইলিশের মোটা মোটা টুকরো। যেগুলো পাতলা চালের গুঁড়োর পরতে হালকা লালচে আর মুচমুচে করে ভেজে আনা হয়েছে!

ইলিশের মরসুমে এলাহি ইলিশ ভোজ খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে! এক থালাতেই থাকবে নানা অচেনা স্বাদের সমাহার। —নিজস্ব চিত্র।

ইলিশ ভোজে ডালের কথা কারই বা মনে পড়ে! কিন্তু ভাজাভুজির সঙ্গে ডালও পাবেন। ইলিশের মাথা দিয়ে বাসন্তী রঙা সেই ডাল মাসকলাইয়ের। তাতে ভাত মাখতে না মাখতেই এসে হাজির হবে ঝুরঝুরে ইলিশ মাছের ভর্তা। তাতে পুঁইশাকের মিলমিশ।

Advertisement

এ পার বাংলায় ইলিশ নিয়ে কম আহ্লাদ নেই। কিন্তু বরাবরই এক এক জেলার রান্না এক এক প্রকার। ইলিশ তাতে ব্যতিক্রম নয়। এ মাছ রান্নারও যে কম চেনা নানা উপায় আছে, তা দেখিয়ে দিচ্ছে ‘৬ বালিগঞ্জ প্লেস’।

আমসত্ত্ব আর সর্ষেবাটার ইলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

চাইলে নারকেল দুধে কাঁকরোল-ইলিশ খেতে পারেন, সর্ষেবাটা-আমসত্ত্বের ইলিশও চেখে দেখতে পারেন। কিংবা পেঁয়াজের ভর্তা দিয়ে ইলিশ ভাতে! প্রত্যেকটি রান্না ও পার বাংলার মাটি থেকে তুলে আনা। প্রতিটা রান্নার সঙ্গেই জড়িয়ে নানা গল্প। যা ও পার বাংলার ছোট-বড় নদী থেকে সেঁচে এনেছেন কলকাতার কন্যা আর বাংলাদেশের বৌমা নয়না আফরোজ।

ইলিশ ভাতে। — নিজস্ব চিত্র।

ইলিশ ভাতের কথাই ধরা যাক। এ রান্নার সঙ্গে মিশে আছে মাঝি আর মাঝিবৌয়ের ছোট্ট ভালবাসার গল্প। মাছ নিয়ে ঘরে ফেরে ক্লান্ত মাঝি। তাকে স্নানে পাঠিয়ে ভাতের হাঁড়ি চড়ায় মাঝিবৌ। হাতে অল্প সময়। স্নান সেরেই এক পেট খিদে নিয়ে ভাত চাইবে মাঝি। ফলে এক দিকে ভাত ফোটে আর অন্য দিকে চলতে থাকে মশলার তোরজোড়। পেঁয়াজ-রসুন-হলুদ-নুনের মতো সাধারণ মশলায় ইলিশ মাখা হয়। ভাত হয়ে আসার একটু আগে সেই ইলিশ দিয়ে দেয় সে ভাতের মধ্যে। ভাপে রান্না হয় ইলিশ। গন্ধে ভরে যায় ভাতের হাঁড়ি। গরম ভাত যখন মাঝির পাতে পড়ে, তখন তাতে কাঁচা হলুদ রং। ইলিশের গন্ধ। সঙ্গে পাওনা ভাপে সেদ্ধ হওয়া টাটকা ইলিশ। বাড়তি স্বাদের জন্য কুঁচনো পেঁয়াজ লেবু আর গুঁড়ো লঙ্কা দিয়ে মেখে দেয় মাঝিবৌ। সে রান্না যে কোনও বিরিয়ানি, পোলাওকে টেক্কা দিতে পারে। নয়না সেই গল্পে মাখা ভাত আর ইলিশই কলাপাতায় সাজিয়ে দিয়েছেন এ বার ‘৬ বালিগঞ্জ প্লেস’-এর ইলিশ পার্বণে।

নারকেল দুধে কাঁকরোল দিয়ে ইলিশের রান্না (উপরে) এবং ইলিশের রোস্ট (নীচে)। — নিজস্ব চিত্র।

ইলিশের মরসুমে গোটা কলকাতা যখন ভাজা-ভাপা-পাতুরি-কালোজিরে আর বেগুনের ঝোলে ইলিশ নিয়ে মাতোয়ারা, তখন শহরে খাঁটি বাংলাদেশের জেলা থেকে তুলে আনা অচেনা ইলিশের স্বাদ নিয়ে হাজির হয়েছে ওই রেস্তরাঁ। রেস্তরাঁর প্রধান রন্ধনশিল্পী সুশান্ত সেনগুপ্ত জানালেন, শহরের সব ইলিশ উৎসব থেকে নিজেদের আলাদা করতেই রন্ধনশিল্পী নয়নার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, নয়না তাঁর শেখা নানা রেসিপির সংগ্রহ থেকে সাজিয়েছেন ইলিশ পার্বণের মেনু। সেখানে যেমন ফরিদপুরের কাঁকরোল দিয়ে নারকেল দুধের ইলিশ রয়েছে। তেমনই রয়েছে সিলেটের সর্ষেবাটা আর আমসত্ত্ব দিয়ে তৈরি ইলিশ-ব্যাঞ্জন। এ ছাড়া খুলনার টোপাকুলের ইলিশ টক, বরিশালের বরগুনার ইলিশভাতে, ঢাকার ইলিশ রোস্ট, হাতে মাখা মশলা ইলিশ, খুলনা বিভাগের লাউপাতায় মোড়া ইলিশ পিটুলি, পুঁই ইলিশের ভর্তাও আছে। সবই ও পার বাংলার। সবই চেনা স্বাদের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে একটু আলাদা। যে স্বাদ খাওয়ার পরেও মুখে লেগে থাকবে। বারে বারে চেখে দেখতে ইচ্ছে করবে। তবে সে স্বাদের ভাগ পাওয়া যাবে শুধু ১৭ অগস্ট পর্যন্ত।

একটু অন্য রকম ইলিশের স্বাদে মন ভাল করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন কলকাতার বাঙালি খাবারের ওই রেস্তরাঁ থেকে। সেখানেই আগামী রবিবার পর্যন্ত চলছে এই অন্যরকম ইলিশ পার্বণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement