মাছ ভাজারও কায়দা আছে। স্বাদ বৃদ্ধিতে শিখে নিন সহজ কৌশল। ছবি: সংগৃহীত।
ডাল-ভাত সঙ্গে গরম মাছভাজা হলেই চলে যায়। ঝাল-ঝোলের যেমন নিজস্ব স্বাদ আছে তেমনই ভাজা মাছেরও স্বাদ কম নয়। তা ছাড়াও মাছ ভাজাও সহজ। ছাঁকা তেলে বা একটু বেশি তেল নিয়ে, তেল গরম হলে উল্টে-পাল্টে ভেজে নিলেই হল।
কিন্তু সত্যিই কি মাছ ভাজা এত সহজ? রন্ধনশিল্পীরা বলেন, মাছ ভাজার উপরে নির্ভর করে রান্নার স্বাদ। কোন রান্নায় কী ভাবে মাছ ভাজতে হবে, তা কড়া হবে, না কি নরম— তার উপর রান্নার স্বাদ নির্ভর করে। আবার মাছ ভাজতে গেলে অনেক সময় মাছের ছাল কড়াইয়ে লেগেও যায়। অন্য দিকে, মশলার গুণে সাধারণ মাছভাজাই হয়ে ওঠে দারুণ সুস্বাদু। তার উপর আছে স্বাস্থ্যের প্রশ্ন। ছাঁকা তেলে সহজে মাছ ভাজা যায় বটে, তবে এর পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
পু্ষ্টিগুণ বজায় রেখে মাছ ভাজার কৌশল শিখে নিন
কাতলা থেকে রুই, ইলিশ থেকে পমফ্রেট, পুঁটি, ভোলা— অনেক মাছই ভাজা খেতে ভাল লাগে। তবে ছাঁকা তেলে ভাজলে মাছের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। পুষ্টিবিদেরা বলেন, মাছ রান্না করা দরকার কম তেলে, কম আঁচে। ননস্টিক তাওয়ায় অল্প তেল ব্রাশ করে আঁচ কমিয়ে সময় নিয়ে ভাজলে, মাছের পু্ষ্টিগুণ বজায় রাখা সম্ভব।
কম তেলে ভাজলে যদি আঁশটে গন্ধ হয়?
কম তেলে মাছ ভাজলে আঁশটে গন্ধ হয়। তা চাড়া, পমফ্রেট, ভোলা— এই ধরনের মাছের নিজস্ব গন্ধও বেশ কড়া। অনেকেরই সেই আঁশটে গন্ধ অপছন্দ। উপায় হল মশলার মিশেল। মাছে নুন-হলুদ মাখানোর সময় পাতিলেবুর রস মিশিয়ে দিলে আঁশটে গন্ধ চলে যায়। এয়ার ফ্রায়ারও ব্যবহার করা যায়। নামমাত্র তেলেই সেখানে মুচমুচে মাছ ভাজা সম্ভব।
স্বাদবৃদ্ধির উপায়
কম তেলে মাছ ভাজা হবে, খেতেও ভাল লাগবে, এমন কৌশলও আছে। জল ঝরানো টক দই, আদা-রসুন বাটা, ধনে-জিরে গুঁড়ো, নুন, হলুদ মাছে মাখিয়ে অন্তত ঘণ্টাখানেক রাখতে হবে। রুই, কাতলা, পমফ্রেট, ভোলা, ভেটকি— যে কোনও মাছই এই কায়দায় ভাজা যায়। মশলা মাখানো মাছের উপর সুজি বা বেসন অল্প করে ছড়িয়ে দিয়ে হাতের সাহায্যে মাখিয়ে উল্টে-পাল্টে ভেজে নিতে পারেন। মাছ ভাজাই হয়ে উঠবে দারুণ স্বাদের। তবে এই ধরনের মাছ ভাজার জন্য ননস্টিক তাওয়া বেছে নিন।
গোটা মাছ ভাজার সময় ছুরির সাহায্যে মাছের গায়ে গভীর ভাবে চিরে দিন। তার ভিতরেও মশলা ভরুন। মশলা দিয়ে মাছ ভাজলে এই কৌশল স্বাদবৃদ্ধির জন্য জরুরি।
মুচমুচে ভাজা, ভিতরে নরম
তেলের তাপমাত্রার সঙ্গেও মাছ ভাজার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বেশি গরম তেলে মাছ ভাজলে বাইরে দ্রুত রং ধরে গেলেও মাছের ভিতরটা কাঁচা থেকে যেতে পারে। মাছ ভাজতে গেলে প্রথমে ভাল করে তেল গরম করে নিতে হবে। মাছ দেওয়ার ২ মিনিট পর আঁচ কমিয়ে দিন। সময় নিয়ে কম আঁচে ভাজলে মাছের ভিতরটা নরম থাকবে, ভাল ভাবে রান্না হবে। বাইরেটা মুচমুচে করার জন্য একেবারে শেষ ধাপে আঁচ একটু বাড়িয়ে দিতে পারেন। তবে খুব বেশি ক্ষণ ধরে মাছ ভাজলে সেটি শক্ত হয়ে যেতে পারে।
মাছ ভাজার সময় কেন ভেঙে যায়?
অনেক সময় মাছ ওল্টাতে গেলে মাছের ছাল কড়ায় লেগে যায় আবার মাছ ভেঙেও যায়। ফ্রিজ থেকে বার করা ঠান্ডা মাছ ভাজতে গেলে এমন হতে পারে। প্রথমে তেল খুব ভাল করে গরম করতে হবে। মাছের গায়ে লেগে থাকা জল টিস্যু পেপারের সাহায্যে মুছে নিন। তেল গরম থাকলে, মাছের গায়ে জল না থাকলে চট করে মাছ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। একটু বেশি তেল দিলেও মাছ কড়ায় আটকে যাবে না।