প্রতীকী ছবি।
হাসি পাচ্ছে, কিন্তু হাসতে গেলেই বিপদ। আশপাশে থাকা বন্ধুরা সরে দাঁড়াবে! এতটা না হলেও নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ নিয়ে জেরবার মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। সঙ্গে আছে দাঁত, জিভ আর মাড়ির সমস্যা। ওরাল ক্যানসারের কথাই বা বাদ যায় কেন! এই সব সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আজ, ২০ মার্চ বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে। আজ থেকে মুখগহ্বরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার শপথ নিতে অনুরোধ করলেন ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জেন উদয় মুখোপাধ্যায়।
আমাদের দেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৫ জন আর বিশ্বের ৯০ জন মানুষ মুখগহ্বরের সমস্যা নিয়ে জীবনের কোনও না কোনও সময়ে কষ্ট পেয়েছেন। ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় ন্যাশনাল ওরাল হেলথ প্রোগ্রামের সমীক্ষায় আশ্চর্য এক তথ্য উঠে এসেছে। ভারতবর্ষের মাত্র ৫০ শতাংশ মানুষ টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজেন। একই সঙ্গে এ-ও জানা গিয়েছে যে ১৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের দাঁতের ক্ষয়, অর্থাৎ ডেন্টাল কেরিস আছে। আসলে খাওয়ার পর যে ভাল করে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলা উচিত তা ভাল করে বড়রাই জানেন না তো বাচ্চাদের শেখাবেন কী ভাবে! একই সঙ্গে জার্নাল অব ন্যাচারাল সায়েন্স, বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ইউটিলাইজেশন অব ডেন্টাল কেয়ার, অ্যান ইন্ডিয়ান আউটলুক’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে এ দেশের শহরাঞ্চলে প্রতি ১০,০০০ জন পিছু মাত্র এক জন ডেন্টাল সার্জন ও গ্রামাঞ্চলে প্রতি ১,৫০,০০০ জন পিছু মাত্র এক জন ডেন্টাল সার্জন বরাদ্দ। একেই চিকিৎসকের অপ্রতুলতা, অন্য দিকে ওরাল হাইজিন সম্পর্কে সচেতনতার অভাব— দুইয়ে মিলে এ দেশের মুখগহ্বরের সমস্যা-সহ ক্যানসারের ঘটনা যথেষ্ট বেশি, আর দিনে দিনে তা বাড়ছে।
মুখ, মাড়ি, দাঁত ও জিভ পরিচ্ছন্ন রাখুন
মুখগহ্বরের সমস্যার মূল কারণ দু’টি। এক, ঠিক ভাবে মুখ ও দাঁত পরিষ্কার না করা আর দুই, তামাক চিবোন সমেত মদ্যপান ধূমপানের নেশা। এ ছাড়া বারে বারে ধারাল দাঁতের আঘাত লেগে মুখগহ্বরের নানা সমস্যা হতে পারে। এর হাত থেকে বাঁচবার একটাই পথ, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার অভ্যাস থাকলেও রাত্তিরে ঘুমনোর আগে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করা অনেকেরই না-পসন্দ। আমাদের মুখে অনেক জীবাণু থাকে, রাত্রে ব্রাশ করে ভাল করে মুখ পরিষ্কার রাখলে এই জীবাণুদের সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কোনও সমস্যা হোক বা না হোক, বছরে অন্তত দু’বার ডেন্টাল সার্জেনের কাছে গিয়ে মুখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া আবশ্যক। আর কোনও রকম ব্যথাবেদনা বা মুখে ঘা হলে নিজেরা ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে না খেয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন- ইংরাজিতে কথা বলার সময় এই ভুলগুলো কি আপনিও করেন?
আরও পড়ুন- কী ভাবে ওজন কমবে নির্ভর করছে নিজেদের ওপর
সাংবাদিক, নেতা ও অভিনেতাদের সমস্যা
পান, সুপুরি বা তামাকের নেশা না থাকলেও অনেক সময় ওরাল ক্যাভিটির গুরুতর সমস্যা হতে পারে। সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, অভিনেতা অথবা জীবিকার প্রয়োজনে যাঁদের বেশি কথা বলতে হয় তাঁদের মুখগহ্বরের সমস্যার ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশি। কথা বলতে বলতে অনেক সময় গালের একই অংশে কামড় পড়ে যায়। আর ‘খোঁড়ার পা খানায় পড়ে’ প্রবাদবাক্য মেনে ব্যথার জায়গায় বারে বারে কামড় লেগে লেগে প্রথমে মুসুর ডালের মত ছোট্ট একটা গ্রোথ হয়ে যায়। প্রথম অবস্থায় এই কিছু দিন পর পর এই গ্রোথ মিলিয়েও যায়। কিন্তু আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। নাগাড়ে তাড়াহুড়ো করে কথা বলা ও দ্রুত খাবার খাওয়া ও খেতে খেতে কথা বলা— এ সবই গালে বা জিভে কামড় পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বারে বারে একই জায়গায় আঘাত লেগে ও কোনও গ্রোথ বছরাবধি থেকে গেলে তার থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এই রকম সমস্যা হলে প্রথমত ওরাল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে ও অবশ্যই নিয়মিত ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। কামড় পড়ে যে গ্রোথ হয়েছে ও বেশ কয়েক মাস ধরে আছে ও আকারে বাড়ছে, তা সার্জারি করে বাদ দিয়ে দ্রুত বায়োপ্সি করানো উচিত। একই সঙ্গে কথা বলা ও খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা নেওয়া দরকার। প্রয়োজনে দাঁতের ধার কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে এই ধরনের পেশার মানুষদের মধ্যে অনেকেই ধূমপান ও মদ্যপান করেন। অনেকে আবার একাধিক বার চা-কফি পান করেন। তাই সমস্যার প্রবণতাও বেশি।
হুকা বারও বিপদজনক
তামাকের নেশা যে শরীরের নানা সর্বনাশ ডেকে আনে সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সিগারেট, বিড়ি ছাড়াও গুটখা, জর্দা পান, দোক্তা, নানান রকমের তামাকের আদ্যোপান্ত খারাপ দিক সম্পর্কে সকলেই অবগত। কিন্তু নেশার মোহময় জাল কেটে বেরোনও সহজ নয়। ইদানীং ওয়াই জেনারেশনের মধ্যে হুকা বার অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক হুকাপ্রেমী আবার এ কথাও রটিয়ে দিয়েছেন, হুকার সুগন্ধি অম্বুরি তামাকে শরীরের কোনও ক্ষতিই নাকি হয় না। কেননা জলের মধ্যে দিয়ে আসে বলে তামাকের ক্ষতিকর দিক জলে বিলীন হয়ে যায়। এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। একছিলিম হুকোর টান প্রায় এক প্যাকেট সিগারেটের সমান ক্ষতিকর। অথচ কলকাতা-সহ শহরাঞ্চলে হুকা বারের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, যেখানকার অধিকাংশ কাস্টমার সদ্য টিন এজে পা দিয়েছে বা পেরিয়েছে। মুখের ক্যানসার-সহ ফুসফুসের অসুখ প্রতিরোধে অবশ্যই এই ব্যাপারে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। এই প্রসঙ্গে একটা কথা জেনে রাখা ভাল, ভারতবর্ষ মুখ, জিভ বা মাড়ির ক্যানসারে একেবারে সামনের সারিতে। মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে তামাকের সঙ্গে বিচ্ছেদ একমাত্র পথ। আসুন, আজ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে-তে সকলে মুখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার শপথ নিই।