Weight Gain

ওজন বাড়লে হার মানতে পারে হাড়ও

শরীরের ওজন বাড়লে তা থেকে বাড়তে পারে হাড়ের নানা রোগবালাই।

Advertisement

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বয়স বাড়লে হাড়ের নানা রোগ— চেনা ছবি। কোমর-হাঁটুর ব্যথা, সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট, অস্থিসন্ধিগুলির আগের মতো দৌড়ঝাঁপের ধকল নিতে না পারা— এমন হরেক অসুবিধেয় জর্জরিত হন অধিকাংশ প্রবীণ-প্রবীণাই। সাধারণ ভাবে মনে করা হয়, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়ের পরিমাণও বাড়ে, তা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে একটুতেই কনকনে ব্যথা, ফোলা ভাব, অসুখের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়।

Advertisement

কিন্তু এই সব সমস্যা যে শুধু বেশি বয়সেই দেখা যায়, তেমন ভাবা ঠিক নয়। কম বয়সেও হাড়ের অসুখ, অস্থিসন্ধির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিরিশ-চল্লিশের কোঠায় যাঁদের বয়স, বা আরও কম, তাঁরাও ঠিক একই ভাবে পা-কোমরের সমস্যা নিয়ে জেরবার হতে পারেন। অল্পবয়সিদের মধ্যে হাড়ের অসুখের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ— ওজন। যাঁদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন, হাড়ের সমস্যার ধরন ও মাত্রাও তাঁদের সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি হয়।

অস্টিয়োপোরোসিস

Advertisement

অস্থিবিশেষজ্ঞ ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বললেন, “অল্প বয়সে ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে, যদি বিএমআই ৩০-এর বেশি হয়ে যায়, তবে অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগ দেখা দিতে পারে। অস্টিয়োপোরোসিস সাধারণত ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু ওবেসিটি থাকলে অনেক কম বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। অস্টিয়োপোরোসিস এক ধরনের হাড়ের রোগ, যার ফলে হাড়গুলির শরীরের ভার বহনের ক্ষমতা কমে যায়। হাড় নরম হয়ে যায় এবং ভিতরের অংশটি ফাঁপা হয়ে যায়। ফলে অল্প আঘাতেই চিড় ধরার সম্ভাবনা দেখা দেয়, মূলত ফিমার নেক এবং শিন বোনের ধারেকাছে। আঘাত নিরাময়ের রাস্তাটিও জটিল হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উপায়ে হাড় জোড়া লাগলেও চিকিৎসকদের বিশেষ ইমপ্ল্যান্টের সাহায্য নিতে হতে পারে। তা ছাড়া পায়ে ওজন তোলার প্রক্রিয়াটিও পিছিয়ে যায় চিড়ের জায়গাটি পুরোপুরি সারা পর্যন্ত। মরবিড ওবেসিটি রয়েছে এমন রোগী চিকিৎসকের কাছে এলে তাঁর হাড় জোড়ার ক্ষেত্রে একাধিক সার্জারি করতে হয়েছে— এমন উদাহরণও প্রচুর।

অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস

আমাদের শরীরে যে সমস্ত ভার বহনকারী অস্থিসন্ধি (ওয়েট বেয়ারিং জয়েন্টস) থাকে, যেমন— হিপ জয়েন্ট, হাঁটু, অ্যাঙ্কল, পায়ের পাতা, তাতে খুব দ্রুত অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস ধরে যায় যদি ওজন নিয়ন্ত্রণে না থাকে। কারণ, বাড়তি ওজনের কারণে হাড়ের উপরে থাকা পাতলা কার্টিলেজগুলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে, সেগুলি সময়ের অনেক আগেই দ্রুত ক্ষয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঠিক এই কারণে তিরিশ-চল্লিশ বছর বয়সিদের মধ্যে এক বড় অংশ ইদানীং অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের সমস্যা, হাড়ে ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে ভিড় জমাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে আবার মহিলাদের সংখ্যা তুলনায় বেশি।

চক্র

ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়ও জন্ম নেয়। যেমন— ডায়াবিটিস, ব্লাডপ্রেশার, থাইরয়েড ইত্যাদি। এই অসুখগুলোর কারণেও আবার হাড়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, বাড়তি ওজন— লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়— হাড়ের অসুখ— এই পুরো ব্যাপারটাই চক্রের মতো। এক বার প্রবেশ করলে সম্পূর্ণ আরোগ্যর সম্ভাবনা প্রায় নেই। সুতরাং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। এক বার ওজন বেড়ে যাওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণের চেয়ে ছোট থেকেই ফিট থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বাস্তব যে, অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা এখন ছোটদের মধ্যে ভীষণ ভাবে বাড়ছে। সুতরাং, খাওয়াদাওয়ায় সংযম, বাইরের তেল-মশলাদার খাবার যতটা সম্ভব কম খাওয়া এবং অবশ্যই পড়াশোনার সঙ্গে নিয়মিত যোগব্যায়াম, খেলাধুলো চালিয়ে যাওয়া শৈশব থেকেই শরীরকে ঝরঝরে রাখতে সাহায্য করবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ছোটদের হাড়ের সমস্যাও এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন