circadian rhythm

রাতে জেগে, দিনে ঘুম? কোভিড আবহে কতটা ক্ষতি করছেন জানেন

যাঁদের জীবিকার কারণে রাত জেগে কাজ করতে হয়। এঁদের সকলেরই জীবন ঘড়ির সময় উল্টে পাল্টে যায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:০৯
Share:

মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ এই বায়োলজিক্যাল ক্লককে নিয়ন্ত্রণ করে। ফাইল ছবি।

কোভিড পরিস্থিতিতে অনেকেরই রাতের ঘুম পিছিয়ে গেছে। মোবাইল বা ল্যাপটপে গেম খেলতে গিয়ে ঘুম উধাও হয়ে গেছে। ঘুম আসতে আসতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। তার পর বেলা গড়িয়ে গেলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে শরীর মন— দুই-ই গড়িমসি করে।

Advertisement

আনলকের চতুর্থ পর্বেও স্কুল-কলেজ বন্ধ বটে, কিন্তু তা আর কতদিন! ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ বদলে গেলে তার প্রভাব পড়বে রোজকার জীবনেও। এত গেল ইচ্ছে করে দেরিতে ঘুমনোর কথা, কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের জীবিকার কারণে রাত জেগে কাজ করতে হয়। এঁদের সকলেরই জীবন ঘড়ির সময় উল্টে পাল্টে যায়।

এই ঘড়ি অনুযায়ী মানুষ সহ বেশ কিছু প্রাণীর রাতে ঘুমিয়ে পড়ার কথা। আবার বাঘ, সিংহ, শেয়াল, বাদুড়ের মতো প্রাণীদের জীবন ঘড়ির কাঁটা চলে আমাদের বিপরীতে। এরা রাতে জাগে, দিনে ঘুমোয়। এককোষী প্রাণী থেকে শুরু করে এই সবুজ গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান জীব হোমো সেপিয়েন্স, বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম চলে এক নির্দিষ্ট ছন্দে। এরই নাম ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ অর্থাৎ ‘জীবন ঘড়ি’, বিজ্ঞানীরা বলেন ‘সার্কাডিয়ান রিদম’।

Advertisement

আরও পড়ুন: কমবে খরচ, বাড়বে সঞ্চয়, মেনে চলুন এই সব বিষয়গুলি​

এটি আদতে একটি শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় সম্পূর্ণ হয়। অনেকটা পৃথিবী যেমন নিজের কক্ষে ঘোরে, সেই রকমই প্রাণীদের অস্তিত্বকে এক অদৃশ্য ছন্দে বেঁধে দেয় এই প্রক্রিয়া। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির সময় থেকেই এই জীবন ঘড়ি চালু হয়েছে।

সারা দিনের কাজকর্ম এবং সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি্র প্রভাবে দিনের বেলায় যে কোষগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে, রাতে ঘুমের সময় সেগুলি মেরামত হয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ এই বায়োলজিক্যাল ক্লককে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনও কারণে জীবন ঘড়ির কাঁটা জোর করে উল্টোদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলে মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সারা দিনের স্বাভাবিক কাজকর্মে তার প্রভাব পড়ে, বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক অর্পণ চৌধুরী। সারা দিন কাজকর্ম আর রাতে ঘুম— এটাই আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ। এই ছন্দেই কাজ আজীবন কাজ করে যায় দেহের প্রতিটি কোষ, শারীরিক প্রক্রিয়া এবং স্নায়ুতন্ত্র, বললেন অর্পণবাবু।

রাতে আড্ডা, দিনে ঘুম, চরম ক্ষতি হচ্ছে শরীরে, বলছেন চিকিৎসকরা। ফাইল ছবি।

এক-আধ দিন রাতে ঘুম না হলে বা রাত জেগে কাজকর্ম করলে খুব অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কেউ যদি রাতের পর রাত জেগে কাজকর্ম করেন বা মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে গেম খেলেন বা সোশ্যাল সাইটে আড্ডা দিয়েই চলেন, তাঁদের ঘুমের সময় বদলে যায়। হয়তো রাত ১টা বা ২টো পর্যন্ত জেগে খেলে আড্ডা দিয়ে তার পর ঘুমলেন, দিনে বেশি সময় ঘুমিয়ে নিলেন, অর্পণবাবুর মতে এটা মোটেও ঠিক নয়। এতে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।

আরও পড়ুন: করোনা হয়নি, প্রবল জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি, আর কী বললেন সেরে ওঠা রোগী

খিটখিটে স্বভাব, বিষণ্ণতা, হঠাৎ ভীষণ রেগে যাওয়ার মতো অসুবিধের পাশাপাশি রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হার্টের সমস্যার মতো গুরুতর শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। সার্কেডিয়ান রিদম নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী— জেফ্রি সি হল, মাইকেল রসবাস এবং মাইকেল ডব্লিউ ইয়াং।

সার্কেডিয়ান রিদম বা বায়োলজিক্যাল ক্লক মানুষ সহ প্রাণীদেহের উপর কী ভাবে প্রভাব বিস্তার করে তার অনেক কিছু খুঁটিনাটি তথ্য তাঁরা জেনেছেন সুদীর্ঘ গবেষণার পর। এই বিজ্ঞানী ত্রয়ী ফ্রুট ফ্লাই (কাটা ফল খোলা থাকলে যে ছোট্ট মাছি উড়ে বেড়ায়)-এর উপর গবেষণা করে জেনেছেন, এদের শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক নিয়ন্ত্রণকারী জিন থেকে এক বিশেষ প্রোটিন শরীরের কোষে কোষে জমা হয় রাতে। তাই ঘুম নেমে আসে। দিনের বেলায় ঘুম ভাঙলে আর কোষের মধ্যে প্রোটিন খুঁজে পাওয়া যায় না।

শুধু ফ্রুট ফ্লাই-ই নয়, মানুষ সহ সব প্রাণীর শরীরে ঘুম নেমে আসার এই একই ফর্মুলা। নিয়ম মেনে রাতে ঘুম, দিনে কাজকর্ম—এই ছন্দ মেনে চললে শরীরের হজম শক্তি ঠিক থাকার পাশাপাশি, হরমোনের নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় থাকে, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে এবং সমগ্র শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম নির্দিষ্ট ছন্দ মেনে চলে।

কোনও কারণে ঘুমের সময় বদলে গেলে শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লকের উপর চাপ পড়ে। পুরো সিস্টেমটাই ওলট পালট হয়ে বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলস্বরূপ বেড়ে যায় অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি। তাই রাতের ঘুম রাতেই হোক, বেলা পর্যন্ত পড়ে পড়ে না সকালে ঘুম ভাঙুক। যাঁদের রাতের ডিউটি সেরে ভোর হয়ে যায় বিছানায় যেতে, তাঁরা চেষ্টা করুন ৫–৬ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেওয়ার। ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন