দেহের পিএইচ ব্যালান্স বিষয়টি ঠিক কী? এই ভারসাম্যের তারতম্য হয় কেন, প্রতিকারই বা কী? জেনে নিন বিশদে ।
Health

পিএইচের সমতা এত জরুরি কেন?

হাসপাতালে ভর্তি কোনও রোগীর পিএইচ ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে তিনি অসংলগ্ন কথা বলতে পারেন। তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বাড়বে। বাড়াবাড়ি হলে তিনি কোমাতেও চলে যেতে পারেন।

Advertisement

চিরশ্রী মজুমদার 

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

রীরের পিএইচ ব্যালান্স রক্ষা করা নিয়ে আমরা প্রায়ই নানা আলাপ-আলোচনা শুনি। মনে রাখা উচিত, শরীরের পিএইচ ব্যালান্স বললে মূলত রক্তের পিএইচ ব্যালান্সকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ রক্তের পোটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন ব্যালান্স। এই পিএইচ ব্যালান্স চিকিৎসাবিদ্যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত। দেহের পিএইচ ভারসাম্যের বিষয়টি বুঝিয়েবললেন জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীরকুমার মণ্ডল।

Advertisement

পিএইচ ভারসাম্যের অর্থ

উৎসেচক ও হরমোনের সাহায্যে শরীরে নানা বিপাকক্রিয়া চলে। উৎসেচক ও হরমোনগুলি বিশেষ কোনও পিএইচ বা অ্যাসিডের মাত্রা এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কাজ করে। তাপমাত্রা কমে গেলে বা পিএইচ কোনও কারণে কমে বা বেড়ে গেলে এই বিপাকক্রিয়াগুলি ব্যাহত হয়। ‘‘এমনকি, ছোট্ট একটি ব্যাকটিরিয়ার উৎসেচকগুলি নির্দিষ্ট পিএইচে কাজ করে, অন্য পিএইচে কাজ করে না। দেখবেন, গ্রামাঞ্চলে কুমড়ো পচে গেলে চুন লাগানো হয়, গালে ব্রণ হলেও অনেকে চুন লাগিয়ে নেন। কারণ, চুন অ্যালকাইন মিডিয়া (ক্ষারজাতীয়)। অর্থাৎ ওখানে পিএইচ বদলে দেওয়া হল। সেই পিএইচে আর ব্যাকটিরিয়ার বাড়বৃদ্ধি হল না। আমাদের রক্তের পিএইচ হল ৭.৪। সেই গড় পিএইচে .১ কম বা .১ বেশি হতে পারে। এর বাইরে তারতম্য হলেই বিপদ,’’ উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন ডা. মণ্ডল।

Advertisement

পিএইচের তারতম্য হলেই শরীর নিজে সেই ক্ষতিপূরণ করে তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়াকে ‘বাফার’ বলা হয়। সাধারণত, বৃক্ক ও ফুসফুস এই বাফারের কাজ করে।

উপসর্গ

হাসপাতালে ভর্তি কোনও রোগীর পিএইচ ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে তিনি অসংলগ্ন কথা বলতে পারেন। তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বাড়বে। বাড়াবাড়ি হলে তিনি কোমাতেও চলে যেতে পারেন। গোটা বিষয়টির দিকে চিকিৎসকের সতর্ক প্রহরা থাকে।

তারতম্যের কারণ চিকিৎসা

ডা. মণ্ডল জানালেন, পিএইচ-এর ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া কোনও আলাদা অসুখ নয়। এটি সাধারণত অন্য কোনও রোগের প্রকাশ। কোভিড বা নিউমোনিয়ার কারণে ফুসফুস কাজ না করলে এই বিঘ্ন ঘটতে পারে। হাসপাতালে আগে থেকেই অন্য অসুখ নিয়ে ভর্তি রোগীর ক্ষেত্রে এই অসুবিধে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঙ্কটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে নিয়মিত পিএইচ পরীক্ষা চলে। রক্তে পিএইচ-এর মাত্রা জানতে হাসপাতালে আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাসের (এবিজি) সাহায্য নেওয়া হয়। কোনও হেরফের দেখলেই চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।

বিপাকগত কারণে পিএইচ ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। সেপসিসের জন্য বা বয়সের জন্য শরীরের ক্রিয়া-বিক্রিয়া ব্যাহত হলে, পিএইচ ভারসাম্যে সমস্যা হয়। একে বলে মেটাবলিক অ্যালকালোসিস বা অ্যাসিডোসিস। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা একটু শক্ত। অনিয়ন্ত্রিত সুগার থাকলে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস রোগ হতে পারে।

শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত কারণে পিএইচ ভারসাম্যে হেরফের হলে সহজেই চিকিৎসা করা যায়। রেসপিরেটরি ব্লকেজ থাকলে এই সমস্যা হতে পারে। তখন অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রায় সমতা ফেরালেই পিএইচ ভারসাম্য স্বাভাবিক হয়ে যায়।

শরীরে ব্যাকটিরিয়া ঢুকলে বা সংক্রমণ হলে এই তারতম্য হতে পারে। হয়তো রোগীর শরীরে কোনও জীবাণু ঢুকেছে। সেই জীবাণুগুলি শরীরে টক্সিক পদার্থ তৈরি করে। ফলে অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটার ফলে বেশির ভাগ সময়েই পিএইচ কমে যায়। কখনও কখনও বেড়েও যায়। শরীর এই ক্ষতিপূরণ করতে না পারলে মুশকিল হয়। তখন শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। এ ভাবে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে ও শরীর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বার হয়ে যায়। পিএইচ স্বাভাবিক হয়ে যায়। তা না হলে, চিকিৎসকেরা ভেন্টিলেটরের সাহায্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড বার করে দেন।

শরীরে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে গেলে, তা রক্তরস বা প্লাজ়মার মধ্যে দ্রবীভূত যায়। এতে কার্বলিক অ্যাসিড তৈরি হলে, পিএইচ কমে যেতে থাকে। চিকিৎসক ওষুধ বা যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বাড়িয়ে দিলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেরিয়ে যাবে।

রক্তের পরিবর্তিত পিএইচ গলব্লাডার প্রভৃতি নানা অঙ্গে পাথরও তৈরি করতে পারে। তার চিকিৎসা আবার অন্য রকম।

সুস্থ মানুষের দেহের পিএইচ বাড়া বা কমার কথা নয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরই এই সমস্যা হতে পারে। কাজেই খুব বেশি টক খেলে শরীরে রক্তের অম্ল ভাব বেড়ে যাবে কিংবা খাওয়াদাওয়া বা ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমে শরীরের পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এই সব ধারণাও ঠিক নয়। নিজে থেকে শরীরের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে কোনও পদক্ষেপ করবেন না। ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, এমন কোনও ওষুধও খাবেন না। যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন