ইস্তান্মুল কিংবা জাপান কাবুল নয়, বাংলার প্রতিটি শহর, মফঃস্বল ঘুরে বেরিয়ে পাইস হোটেলের চরিত্র বুঝে নিয়েছিলেন ওরা। চোদ্দ বছর – না রামের বনবাস নয়। ১৪ বছর আগে ভজহরি মান্নার যাত্রা শুরু। আজ দেশ জুড়ে ১৮টি আউটলেট। রাস্তার ধারের পাইস হোটেলে নানা ভাষা নানা মতের বিভিন্ন মানুষ জন পাত পেড়ে খান। যাদের দেখলে মধ্যবিত্ত বাঙালিরও কবজি ডুবিয়ে খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু সংকোচ আর কুন্ঠায় শেষ পর্যন্ত আর তা হয়ে ওঠে না। তাদের জন্যেই ভজহরি মান্নার বিভিন্ন চেনা অচেনা বাঙালি খাবারের আয়োজন। বলছিলেন রাজীব নিয়োগী, বাঙালি রান্না দিয়েই যে পাইস হোটেল আম জনতার মনের মানুষ হয়ে উঠেছে, সেই ভজহরি মান্নার এক অন্যতম শরিক। রাজীবদা বলছিলেন যে শুধু মাত্র খাঁটি বাঙালি রান্নাই ভজহরি মান্নার ইউএসপি। জামাইষষ্ঠী সহ কোনও অনুষ্ঠানেই তার ব্যতিক্রম হয় না। আর আদ্যোপান্ত এই বাঙালি রেস্তরাঁর নামেও আছে এক মজার ট্যুইষ্ট। স্টার্টার এখানে তোমার হল শুরু। মাছ, মাংস বা ভেজিটেবল চপ, ঢপের চপ। ছানার বিভিন্ন পদের নাম ছানার রাজার দেশে।
যেসব স্পেশাল রান্না এখানে মিলবে তাদের কয়েকটির নাম ও দাম –
মোহনবাগানী চিংড়ি কাবাব – ৩০৫ টাকা
মুর্শিদাবাদী রান -৬৯০টাকা
মোচার পাতুরী – ১৩০ টাকা
আড় কালিয়া / সর্ষে -১৫০ টাকা
ডিগামা সাহেবের কষা কাঁকড়া – ২৮০ থেকে ৩৩৫ টাকা
মুরগির ঝোল ও গোয়ালন্দ স্টিমার কারি – ১৯৫
তোপসে সোনার কেল্লা – ১২০
ল্যইটা মাছের ভরতা – ৯৫
মুড়ি ঘন্ট – ১০০
আরও অনেক কিছুই। তবে তার জন্যে সশরীরে যেতে হবে ।
আরও পড়ুন: শিখে নিন সহজে এই রান্না
ডাব চিংড়ি
কচি ডাবের নরম শাঁসের সঙ্গে চিংড়ি আত্মীয়তা সূত্রে আবদ্ধ হলে সৃষ্টি হয় এক অপরূপ স্বাদের অনবদ্য পদ। মোহময় পরিবেশনে ক্ষণিকের জন্যে থ হয়ে থাকার পর যখন চমক ভাঙে, তখন আর দেরি করতে মন চায় না। নরম সবুজ ডাবের মুখ থেকে উঁকি দেওয়া বিশালাকায় লালচে হলুদ বাগদা চিংড়ির লেজের আভাস! কোথা থেকে কী ভাবে শুরু করা যায় ভেবে দেখলাম আর দেই করা উচিত নয়। আহা কী স্বর্গীয় স্বাদ! দেবরাজ ইন্দ্রের পাকশালেও বোধহয় এইভাবেই রান্না হয়। না খেলে বোঝা মুশকিল। ভজহরির এই বিশেষ পদ বাড়িতে বানানোর চেষ্টা করে দেখুনই না!
উপকরণ
বড় বাগদা চিংড়ি: ১০ পিস
কচি শাঁস সহ ডাব: ৫ টা
টক দই: ৫০ গ্রাম
সর্ষে বাটা: ২৫ গ্রাম
লঙ্কা বাটা: ১/২ চামচ
কাঁচা লঙ্কা: ৬ টা
সর্ষে তেল: ৫০ গ্রাম
নুন, চিনি: স্বাদ মতো
হলুদ- সামান্য
প্রণালী: চিংড়ি পরিষ্কার করে ধুয়ে সামান্য নুন হলুদ ও টক দই মাখিয়ে রাখুন। সব কটা ডাবের ডাবের মুখ কেটে জল ও শাঁস বের করে ডাবগুলো ধুয়ে মুছে চাপা দিয়ে রেখে দিতে হবে। দুটো ডাবের জল ও সবকটা ডাবের শাঁস এক সঙ্গে একটি পাত্রে রেখে দিতে হবে। বাকি জল খেয়ে নিতে পারেন। ডাবের শাঁসে জলের মধ্যে নুন, হলু্দ সর্ষে বাটা ভাল করে মিশিয়ে রেখে দিন। কড়াইতে তেল ঢেলে ফেটানো দই, লঙ্কা বাটা, নুন, চিনি ও চিংড়ি দিয়ে সামান্য কষে নিয়ে মশলা মেশানো ডাবের জল দিয়ে ফুটতে দিন। চিংড়ি সেদ্ধ হয়ে এলে ও গ্রেভি ঘন হলে কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে ফুটে উঠলে নামিয় নিন। এ বার প্রত্যেকটা ডাবের মধ্যে দুটো করে চিংড়ি ও সামান্য গ্রেভি পরিবেশন করুন। গরমাগরম ভাত বা পোলাও-এর সঙ্গে জমে যাবে।
অনুলিখন: সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: শুভেন্দু চাকী