Khichdi

মুঘল থেকে ব্রিটিশ, খিচুড়ির প্রেমে মজেছিল সকলেই

আগামী তিন বছর ধরে দিল্লির ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়ায় বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সুস্বাদু খাবার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ১৬:২২
Share:

ছবি সৌজন্য: পৌলমী মল্লিক কুণ্ডু।

আগামী তিন বছর ধরে দিল্লির ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়ায় বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সুস্বাদু খাবার। বিশ্বের ৪০টি দেশ ও ভারতের ২৭টি প্রদেশের খাবার যখন নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে, সেই সময়ই ভারতের ব্র্যান্ড ফুড ঘোষিত হল খিচুড়ি। কাশ্মীর থেকে কণ্যাকুমারী, আসমুদ্র হিমাচলে বোধহয় এমন কোনও কেউ নেই খিচুড়ির স্বাদ যে চাখেনি। খিচুড়ি যখন সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম আলোচিত হ্যাশট্যাগ, তখন একটু জেনে নেওয়া যাক খিচুড়ির গল্প।

Advertisement

ইতিহাস

চাল ও ডালের মিশ্রণে এক ধরনের খাবার তৈরির কথা ভারতের প্রাচীন লেখায় পাওয়া যায়। খিচুড়িকে ব্যাখ্যা করতে প্রধানত দু’টি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কৃসারান্না ও খিচ্ছা। ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী ভারতে চাল ও ডাল এক সঙ্গে খাওয়ার প্রচলন ছিল। যদিও, চাল, ডাল আলাদাও খাওয়া হত সেই সময়। চাণক্যের লেখাতেও মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের আমলে চাল, ডালের মিশ্রণে খিচুড়ি খাওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। সুষম আহারের কথা প্রসঙ্গে চাণক্য লিখেছেন, এক প্রস্থ চাল (৬০০ গ্রাম মতো) ও সিকি প্রস্থ ডাল, ১/৬২ প্রস্থ নুন ও ১/১৬ প্রস্থ ঘি তৈরি খাবারই হল সুষম আহার। গ্রিক পরিব্রাজক মেগাস্থিনিসের লেখাতেও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের রাজসভার হেঁশেলে চাল, ডাল এক সঙ্গে মিশিয়ে রান্নার উল্লেখ পাওয়া যায়।

Advertisement

পঞ্চদশ শতকে রুশ পরিব্রাজক নিকিতিনের লেখাতে দক্ষিণ ভারতে চাল-ডাল মিশিয়ে খাওয়ার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। সপ্তদশ শতকে ফরাসি পরিব্রাজক তাভেরনিয়ের লিখেছেন, সে সময় ভারতের প্রায় সব বাড়িতেই ‘খিচুড়ি’ খাওয়ার রেওয়াজ ছিল।

আরও পড়ুন: খিচুড়ির খোলা চিঠি, লিখলেন ডায়েটিশিয়ান রুজুতা দিবেকর

মুঘল আমলে খিচুড়ি

মুঘল হেঁশেলেও বিশেষ স্থান ছিল খিচুড়ির। বাবর বা হুমায়ুনের সময়ে খিচুড়ির উল্লেখ পাওয়া না গেলেও আকবরের সময় থেকে মুঘল হেঁশেলে খিচুড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, আকবরই ছিলেন প্রথম মুঘল বাদশা যিনি জন্মসূত্রে ভারতীয়। রাজকীয় হেঁশেলে বিভিন্ন প্রকার খিচু়ড়ি রান্নার কথা লিখেছেন আকবরের মন্ত্রী ও ঐতিহাসিক আবুল ফজল। আইন-ই-আকবরিতে বিভিন্ন প্রকার খিচুড়ির রেসিপিও পাওয়া যায়। এমনকী, ‘বীরবলের খিচুড়ি’ নামে একটি মজার গল্পেরও উল্লেখ পাওয়া যায় ওই বইয়ে।

মুঘল হেঁশেলে জাহাঙ্গিরের প্রিয় বিশেষ ধরনের খিচু়ড়ি তৈরি করা হত বলেও জানা যায়। পেস্তা, কিসমিস দিয়ে তৈরি সেই খিচুড়িকে জাহাঙ্গির আদর করে নাম দিয়েছিলেন ‘লাজিজান’। আবার আওরঙ্গজেবের প্রিয় ‘আলমগিরি খিচড়ি’র কথাও জানা যায়। যেখানে নাকি চাল, ডালের সঙ্গে মেশানো হত বিভিন্ন প্রকার মাছ, ডিম।

আরও পড়ুন: রোজ ব্রেকফাস্টে নকল মাখন, ডিম, দুধ খাচ্ছেন না তো? চিনে নিন

অন্য সাম্রাজ্যে খিচুড়ি

রাজকীয় খাবার হিসেবে হায়দরাবাদের নিজামের হেঁশেলেও জনপ্রিয় হয়েছিল খিচুড়ি। সেই খিচুড়ির পরতে পরতে খোঁজ মিলত সুস্বাদু মাংসের কিমার। ১৯ শতকে ভারতের এই লোভনীয় খাবার ইংল্যান্ডের দরবারে নিয়ে গিয়েছিলেন ব্রিটিশরা। জনপ্রিয় ইংলিশ ব্রেকফাস্ট হয়ে ওঠে ‘কেদেগিরি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন