মা হওয়ার পরে পুরনো চেহারায় ফিরে যেতে বেগ পেতে হয় অনেক মা-কেই। বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোয় এ সময়ে পুষ্টিও দরকার। জেনে নিন নতুন মায়েদের ডায়েট ও শারীরচর্চার খুঁটিনাটি
Mother

Mothers' Health: সন্তানের পাশাপাশি যত্ন দরকার মায়েরও

মা ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া করলেই সন্তান পুষ্ট হবে, এই ধারণার বশবর্তী হয়েই অনেক সময়ে ঘি, মাখন বেশি খাওয়ানো হয়ে থাকে নতুন মায়েদের।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২২ ০৮:১৯
Share:

মা হওয়ার আগে ও পরে মেয়েদের ওজন বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু তা যদি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়েই চলে এবং আগের চেহারায় ফিরে আসতে বেগ পেতে হয়, তখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বইকী। তা ছাড়া সন্তানকে স্তন্যপান করান যে সব মা, তাঁদের ডায়েটও সে কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়। সব দিক বিবেচনা করে একজন ল্যাকটেটিং মাদার কী ভাবে সুস্থ থাকবেন, ফিরে পাবেন ফিটনেস, তা নিয়ে কিছু আলোচনা রইল।

Advertisement

পরিমাণে বেশি নয়, পুষ্টিকর খাবার জরুরি

Advertisement

ল্যাকটেটিং মাদারের ডায়েট প্রসঙ্গে ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী প্রথমেই জানালেন, নতুন মায়েদের বেশি করে খাওয়ানোর প্রবণতা ছাড়তে হবে পরিবারের মানুষদের। ‘‘পরিমাণে বেশি নয়, পরিমিত ব্যালান্সড ডায়েটই দরকার এ সময়ে। সাধারণ অবস্থার চেয়ে এ সময়ে একজন পূর্ণবয়স্ক নারীকে রোজ মোটামুটি ২০০০-২২০০ ক্যালরি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। সাধারণ অবস্থায় যে ক্যালরির দরকার, তার চেয়ে কমবেশি ৫০০ ক্যালরি বেশি। কিন্তু তার বেশি নয়,’’ বললেন তিনি।

মা ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া করলেই সন্তান পুষ্ট হবে, এই ধারণার বশবর্তী হয়েই অনেক সময়ে ঘি, মাখন বেশি খাওয়ানো হয়ে থাকে নতুন মায়েদের। ব্রেস্টমিল্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্যেও যোগ হয় হাই-ক্যালরির খাবার। ‘‘এ সবে আদতে লাভ হয় না তেমন। প্রেগন্যান্সির সময়ে সাধারণ ভাবেই ১০-১৫ কেজি ওজন বেড়ে যায়। ডেলিভারির পরেও সেই মায়েরা অন্তত ৫-৭ কেজি ওভারওয়েট থাকেন। সেই সময়ে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে জমলে পরে তা ঝরানো কঠিন হয়ে পড়ে,’’ বললেন সুবর্ণা।

কী খাব, কী খাব না

জলখাবারে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন সুবর্ণা, ‘‘প্রোটিনের উৎস হিসেবে সারা দিনে ১৫০ গ্রাম মাছ বা মাংস, একটা ডিম আর ৫০০ মিলি দুধ যদি খাওয়া যায়, যথেষ্ট। তবে ফুল ক্রিম, ফ্যাটযুক্ত দুধ নয়। দই, ছানা, পনিরও চলতে পারে। ভাত-রুটির বদলে ওটস, ডালিয়া, সুজি, ব্রাউন ব্রেড রাখা যেতে পারে, যাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। বাদাম, ফল, সবুজ আনাজ থাকতে হবে। তাহলে ওজন না বাড়লেও পুষ্টির জোগান বজায় থাকবে।’’

সারা দিনে বিভিন্ন মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাত-আট টেবিল-চামচ তেল (টোটাল স্যাচুরেটেড ফ্যাট) ইনটেক করলেই যথেষ্ট। আলাদা করে মেপে রান্না করা অনেক সময়েই সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে চার-পাঁচজনের পরিবারে সারা দিনে মোট ১২০-১২৫ মিলি তেল ব্যবহার করে রান্না করলে সকলের জন্য মোট ফ্যাট ইনটেকের পরিমাণে সমতা থাকবে। বাচ্চারা আলাদা করে চিজ় বা মাখন খেতেই পারে কমবেশি।

সঙ্গে শারীরচর্চা

প্রেগন্যান্সির ঠিক পরেই শারীরচর্চার অভ্যেসে ফিরতে সময় লাগে নতুন মায়েদের। সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিলে অন্তত মাস তিন-চারেক বিশ্রামের পরে এক্সারসাইজ় করার পরামর্শ দেওয়া হয় সাধারণত। অনেকের ক্ষেত্রে এই বিরতি সাত-আট মাস বা তারও বেশি হয়ে থাকে। মাস তিনেক পরেই যাঁরা ব্যায়াম শুরু করছেন, আর প্রায় এক বছরের কাছাকাছি বিরতি নিয়ে যাঁরা শুরু করবেন, দু’ক্ষেত্রে ব্যায়ামের তারতম্য আছে।

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস জানাচ্ছেন, নতুন মায়েদের মূল সমস্যা হয় লুজ় হয়ে যাওয়া শরীরকে টাইট ও টোনড-আপ করা। তাঁর কথায়, ‘‘এ সময়ে শরীর থলথলে হয়ে যায়, তলপেট ঝুলে যায়। তবে বাচ্চা হওয়ার পর-পরই অনেক এক্সারসাইজ় করা চলে না। এই সময়ে তাই লো-ইনটেন্সিটি ওয়ার্কআউট দিয়ে থাকি। চেয়ারে বসে করা যাবে, এমন ব্যায়ামও দিই। সদ্য যাঁরা মা হয়েছেন, আর যাঁরা অনেক দিন পরেও বডি ফ্যাট লুজ় করতে না পেরে এসেছেন— দু’ক্ষেত্রের এক্সারসাইজ় আলাদা।’’

সদ্য মা হয়েছেন যাঁরা

* ফুল বডি টোনিং অ্যান্ড টাইটেনিং: চেয়ারে বসে দু’হাত টাইট করে মাথার উপরে তুলতে হবে। পা থাকবে আঙুলের উপরে। পেট টানা থাকবে ভিতরে। দম ধরে রেখে ২০ কাউন্ট করতে হবে। ১০-১২ সেট।

* অ্যাবস স্ট্রেংদেনিং: চেয়ারে বসে হাত মুঠো করে কনুই থেকে উপর-নীচ করতে হবে। অল্প ওজন নিয়ে বা নিজের বডি স্ট্রেংথ দিয়ে করতে পারেন। ২০ বার করে, দু’টি হাতে। হাতের পেশির জোর বাড়ায় ও আপার হ্যান্ডের ফ্যাট লুজ় করে।

* চেয়ারে বসে পায়ের আঙুল নীচের দিকে করে পা ওঠানো-নামানো। ১৬ কাউন্ট করে ১০ সেট, প্রতি পায়ে। পায়ের পেশির জোর বাড়বে এতে।

* সিট অ্যান্ড জগ: চেয়ারে বসে হাত মুঠো করে দৌড়নোর ভঙ্গি করতে হবে। ৫০ কাউন্টে চার সেট।

মা হওয়ার মাস দশেক পরে

জ়ুম্বা, কার্ডিয়ো, অ্যারোবিক্সের হালকা ব্যায়ামগুলি শুরু করতে পারেন এঁরা।

* স্পট জগিং: ঘড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট স্পট জগিং করুন, ৪-৫ সেট। মাঝে ১ মিনিট বিশ্রাম দিয়ে।

* ওয়াল পুশ-আপস: দেওয়ালে হাত রেখে, পা চওড়া করে ছড়িয়ে, দুটো কনুই ভেঙে শরীর আগু-পিছু করে পুশ-আপস করুন। ৮-১০টা করে, তিন সেট।

এ ছাড়া চেয়ারে বসে স্কোয়াট, হিপ থ্রাস্ট, ক্রাঞ্চ, প্ল্যাঙ্ক, লেগ রাইজ়, ব্রিজ ওয়ার্কআউটও করতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন