শক্তিশালী ‘প্রতিপক্ষে’ কাবু শহরবাসী

আপনার শিশুটি কাশিতে কষ্ট পাচ্ছে খুব। রাতে ঘুমোতে গেলে দমফাটা কাশি নিদ্রাহীন করে দিচ্ছে শিশু এবং তার পরিবারকে। খুসখুসে কাশিতে নাজেহাল বয়স্কেরাও।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৪
Share:

আপনার শিশুটি কাশিতে কষ্ট পাচ্ছে খুব। রাতে ঘুমোতে গেলে দমফাটা কাশি নিদ্রাহীন করে দিচ্ছে শিশু এবং তার পরিবারকে। খুসখুসে কাশিতে নাজেহাল বয়স্কেরাও। শুতে গেলে কাশির চোটে দম আটকে আসছে। যার জেরে মাঝরাতে বসে পড়তে হচ্ছে। যাঁরা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজের (সিওপিডি) রোগী, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরওভয়ানক। নিয়মিত ইনহেলারেও শ্বাসকষ্ট কমছে না বলে চিকিৎসকেদের দরজায় ভিড় বাড়ছে। অথচ এই বয়স্ক এবং শিশুদের অনেকেরই ফ্লু-এর প্রতিষেধক নেওয়া রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন এমন হচ্ছে?

Advertisement

চিকিৎসকেরা বলছেন, এই সমস্যার অন্যতম কারণ ভাইরাস। পাশাপশি ফ্লু-ও হচ্ছে। প্রতিষেধক নিয়েও অনেক সময়েই তা আটকানো যায় না। কারণ এই প্রতিষেধক রোগ প্রতিরোধে একশো ভাগ কার্যকর নয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এই সমস্যাকে ‘এপিডেমিক ভাইরাল’ বলছেন কোনও কোনও চিকিৎসক। যার অন্যতম কারণ তাপমাত্রা নামা-ওঠা। চলতি মরসুমের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে তাপমাত্রা যথেষ্ট কম ছিল। হঠাৎ করেই ফেব্রুয়ারির আগেই তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তখন ছোট-বড় অনেকেই অস্থির হয়ে হাল্কা জামা পরা এবং আরও কিছু অনিয়ম করে ফেলেন। ফের কমে যায় তাপমাত্রা। এই অনিয়মের ফাঁকেই বুকে কফ বসে যাচ্ছে শিশু এবং বয়স্কদের। কষ্ট কমাতে কোনও ক্ষেত্রে বয়স্কদের স্টেরয়েড নিতে হচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, দু’তিন সপ্তাহ ধরে ভাইরালের কারণে এমনটা দেখা যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে রোগীকে। তাঁদের মতে, মিউটেশন করে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে ভাইরাস। এদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মোটেও কাবু করার পক্ষপাতী নন শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তাঁর মতে, ‘‘এ ক্ষেত্রে অ্যাডেনোভাইরাসের দায় সিংহভাগ। তবে ফ্লু-ভাইরাস এবং সোয়াইন ফ্লুয়েও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মোটেও ফল পাওয়া যাবে না। নিজেরা ডাক্তারি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। প্রচুর জল খাওয়ান।’’ অ্যাজ়মার প্রবণতা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের সমস্যা বেশি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তবে নিয়মিত ইনহেলার নিয়ে যাওয়ায় যাতে ছেদ না পড়ে, সেটাও দেখতে বলছেন তাঁরা।

Advertisement

ভাইরাস থেকে কিছু ক্ষেত্রে ন্যাক্রোটাইজ়িং অ্যালভিয়োলাইটিস হচ্ছে শিশুদের। সে ক্ষেত্রে কাশি সারতে মাসাধিককাল লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কী এই ন্যাক্রোটাইজ়িং অ্যালভিয়োলাইটিস? শিশু চিকিৎসক সুব্রত চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ফুসফুস একটি বড় বেলুনের মতো। অসংখ্য ছোট ছোট বেলুনের মতো জিনিস দিয়ে তৈরি সেটি। এই ছোট বেলুনকেই বলে অ্যালভিয়োলাই। ছোট বেলুনকে নষ্ট করে দিচ্ছে কোনও কোনও ভাইরাস। একটানা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব নয়। চেস্ট ফিজ়িয়োথেরাপি করাতে হবে। নষ্ট অ্যালভিয়োলাইয়ের জায়গা যত দিন না নতুন অ্যালভিয়োলাই নিচ্ছে, তত দিন এই কাশি কিন্তু থাকবে।’’

বক্ষরোগ চিকিৎসক রাজা ধর বলছেন, ‘‘এ বছর সোয়াইন ফ্লুর প্রকোপ খুব বেশি। অসংখ্য রোগী গুরুতর অবস্থায় ভর্তি হচ্ছেন। নিউমোনিয়া ও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে বেকায়দায় পড়ছেন বয়স্কেরা। ডায়াবিটিস এবং সিওপিডি-র রোগীদের এ ক্ষেত্রে প্রাণসংশয়ও হতে পারে। ভয় নয়, সচেতন থাকুন।’’ বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়ের পরামর্শ, ‘‘বড়দের পাশাপাশি বয়স্কেরাও ঋতু পরিবর্তনের সময়ে সংযত থাকুন। স্নানের সময়ে হঠাৎ করে জলের তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলবেন না, হাল্কা পোশাক এখনই পরবেন না। খোলা জায়গায় ঢাকা পোশাক পরুন। ঠান্ডা খাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকুন। সিওপিডি-র

রোগীরা নিয়মিত ইনহেলার নিন, ওষুধ খান। ভাল থাকলেও তাতে ছেদ টানবেন না।’’

ছোটদের জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ, এই অবস্থায় খুব বেশি ভিড়ভাট্টায় নিয়ে যাবেন না ওদের। সর্দি-কাশির ছোঁয়া থেকে দূরে রাখুন। পরোক্ষ ধূমপানের আঁচ যেন ওদের উপরে প্রভাব না ফেলে, বাবা-মায়েরা সে দিকে খেয়াল রাখুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন