Coronavirus

আপাতদৃষ্টিতে ‘সুস্থদের’ হঠাৎ মৃত্যু পুজোর মুখে বাড়াচ্ছে চিন্তা

ফলে সার্স কোভ-২ শরীরে ঢোকার পরে কী কী করতে পারে, সেই সম্পর্কেও আগাম কিছু বলা কঠিন।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০২:৫৫
Share:

উদ্বেগ: কেনাকাটার ভিড়ের জেরেই সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞেরা। শনিবার, গড়িয়াহাটে। নিজস্ব চিত্র

আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ। কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু শরীরে হয়তো কোনও ‘ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি’ রোগ রয়েছে। সার্স কোভ-২-এর সংস্পর্শে এসে যেটি নিজের শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছে। যে কারণে সংক্রমিতের হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। আর তার পরেই মৃত্যু! সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম বেশ কয়েকটি ঘটনা পুজোর আগে গবেষক এবং চিকিৎসকদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। কারণ, পুজোয় সংক্রমণের রেখচিত্র কোথায় পৌঁছবে এবং পরিস্থিতি কী হবে, তা কেউই আন্দাজ করতে পারছেন না।

Advertisement

চিকিৎসাবিজ্ঞা‌ন বলছে, কার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন, তা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়। ফলে সার্স কোভ-২ শরীরে ঢোকার পরে কী কী করতে পারে, সেই সম্পর্কেও আগাম কিছু বলা কঠিন। দেখা গিয়েছে, একই বাড়িতে এক জন সংক্রমিত হয়েছেন, অথচ বাকি সদস্যদের কোভিডের নমু‌না পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। আবার একই বয়সিদের মধ্যে ব্যক্তিবিশেষে সংক্রমণের ফলও পৃথক হচ্ছে। ফলে কোভিডের এই অধরা (আনপ্রেডিক্টেবল) চরিত্র পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে, মনে করছেন অনেকে। এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘এই ভাইরাস সম্পর্কে গত সাড়ে ন’মাসে আমরা অনেক কিছুই জেনেছি। তবু বহু তথ্যই অজানা।

সেগুলো জানতে আরও সময় দরকার। শুধু সার্স কোভ-২ নয়, যে কোনও নতুন প্যাথোজ়েনের ক্ষেত্রে এমনই হয়ে থাকে।’’

Advertisement

মাইক্রোবায়োলজিস্ট ভাস্করনারায়ণ চৌধুরী জানাচ্ছেন, কারও পক্ষেই এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে সার্স কোভ-২ শরীরে প্রবেশের পরে তাঁর কী ধরনের পরিণতি হতে পারে। এক জন হয়তো পুরো সুস্থ। আপাতদৃষ্টিতে তাঁর

কোনও রোগ নেই। ভাস্করনারায়ণবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু শরীরে হয়তো এমন একটা ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ডিজ়িজ় রয়েছে, সেটা ওই ব্যক্তি জানেন না। কিন্তু ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পরেই সব মিলিয়ে এমন জটিল পরিস্থিতি তৈরি হল, যেখানে যাবতীয় প্রতিরোধ শক্তিই আর কাজ করল না। অনেক ক্ষেত্রেই এমন দেখা যাচ্ছে।’’

চিকিৎসকদের একাংশের আবার বক্তব্য, বাইরে বেশি বেরোতে হয় বলে তরুণ-যুব সম্প্রদায়ের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বরাবরই বেশি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একাধিক রিপোর্টেও সেই তথ্য উঠে এসেছে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘কোমর্বিডিটি যাঁদের বেশি তাঁদের মৃত্যুহার নিঃসন্দেহে বেশি। কিন্তু কম বয়সিদের ইমিউনিটি ভাল, তাই কোভিড ১৯ হলেও তাঁদের চিন্তা

নেই, এই মিথ ভেঙে গিয়েছে।’’ ফলে সুস্থ কোনও মধ্যবয়সি ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার পরে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর অবস্থার অবনতি এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণগুলি কী কী হতে পারে, আপাতত তারই খোঁজ চলছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, বেশি ক্ষণ বাইরে থাকার কারণে কম বয়সিদের ‘ভাইরাল লোড’ অনেক বেশি হয়। তাই তাঁদের মৃত্যুহারও বেশি। তাঁদের ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’-এর প্রাবল্যও বেশি হয়। কী এই সাইকোটাইন? প্রোটিন, পেপটাইড বা গ্লাইকোপ্রোটিনের একটি বৃহৎ গোষ্ঠী যা প্রতিরোধ ব্যবস্থার নির্দিষ্ট কোষ থেকে নিঃসৃত হয়। শরীরে কোনও প্যাথোজ়েন প্রবেশ করলে সেটি তাকে ধ্বংস করতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। কিন্তু তা অতিসক্রিয় হয়ে উঠলে ‘সাইকোটাইন স্টর্ম’ (সাইকোটাইন ঝড়) শুরু হয়। যার জন্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসকে মারার পাশাপাশি ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গের রক্তবাহককে (ব্লাড ভেসেল) ধ্বংস করে দেয়। অর্থাৎ, ভাইরাসকে ধ্বংস করতে গিয়ে অতি সক্রিয় প্রতিরোধ শক্তি শরীরের সুস্থ কোষকেই ধ্বংস করতে শুরু করে। অর্পণবাবুর কথায়, ‘‘অপেক্ষাকৃত তরুণ-যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সাইটোকাইন স্টর্মের প্রাবল্য বেশি দেখা যাচ্ছে।’’

কিন্তু পুজোয় তো এই বয়সিরাই সব থেকে বেশি বার হন। ফলে পুজোর পরবর্তী সময়ে সংক্রমণের হার নিয়ে শঙ্কিত অনেকেই। শহরের কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্রের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কেউ জানেন না পুজো ও তার পরে ঠিক কী অবস্থা হতে চলেছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন