সন্তান লালন-পালনের পাঁচ কৌশল। ছবি: সংগৃহীত।
জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলির মধ্যে অভিভাবকত্ব যে অন্যতম, স্বীকার করেন সিংহভাগ বাবা-মা। এ যেন রোজের পরীক্ষা, রোজের পাশ-ফেল। প্রতি দিন বদলাচ্ছে অভিভাবকত্বের খুঁটিনাটি। নিত্যনতুন আমদানি হচ্ছে কৌশল। প্রত্যেক বাবা-মায়ের পদ্ধতিতে রয়েছে ভিন্নতা। এই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। সর্বজনীন ভাবে সঠিক পদ্ধতি বলে কিছু নেই, তবে সাম্প্রতিক কালে নতুন যে ক’টি উপায়ে সন্তান লালন-পালন করা হচ্ছে, সেগুলির মধ্যে পাঁচটি নিয়ে বেশ চর্চা চলছে চারদিকে। কী সেই পাঁচ কৌশল? মিলিয়ে দেখুন, আপনি কী ভাবে নিজের সন্তানকে বড় করে তুলছেন।
কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকত্ব
বাবা-মায়েরা সন্তানকে তাদের সীমানা সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন। কতটা রশি আলগা করবেন, কতটার পরে রশি টেনে ধরবেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট জ্ঞান থাকবে সকলের। কিন্তু একই সঙ্গে মানসিক ভাবে সন্তানদের পাশে দাঁড়ান সময় মতো। এই পদ্ধতিতে দু’দিকের ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। একই সঙ্গে দৃঢ় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা হয়। সন্তান কী চাইছে, তার চাহিদা কী, সেগুলি শুনে বোঝার চেষ্টা করেন। সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেন। একটা স্পষ্ট কাঠামো থাকে এখানে। এতে সন্তানেরা নিরাপদ বোধ করেন। আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। সামাজিক পরিবেশে কী ভাবে আচরণ করা উচিত, তা শিখতে পারে। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি হয়।
জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সেরা হওয়ার জন্য চাপ দেন সন্তানদের? ছবি: সংগৃহীত।
ক্ষমতাবাদী অভিভাবকত্ব
কর্তৃত্ব ফলানোয় বিশ্বাসী বাবা-মায়েরা। কঠোর শাসনে বড় হয় সন্তানেরা। বাবা-মায়েরা চান, তাঁদের নির্ধারণ করে দেওয়া নিয়মের লঙ্ঘন করবে না সন্তানেরা এবং কোনও প্রশ্নও করবে না। অভিভাবকদের উদ্দেশ্য, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করব ছেলেমেয়েরা এবং সুগঠিত কাঠামো থাকবে। কিন্তু কখনও সখনও হিতে বিপরীত হয়ে যায়। এমন কঠোর পরিবেশে মানসিক ভাবে বাবা-মাকে পাশে পায় না তারা। ফলে এই ধরনের পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগতে থাকে। বদ্ধ পরিবেশে নিঃশ্বাস নিতে পারে না তারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চাপ তাদের আত্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলে। সমস্যায় পড়লে সহজে উঠে দাঁড়াতে পারে না তারা।
সন্তানদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে অভিভাবকত্ব
যতটুকু না হলেই নয়, ততটুকুই যোগদান। সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সংযোগের অবকাশ খুব কম থাকে। ন্যূনতম যোগাযোগ মানসিক ভাবে দূরে ঠেলে দেয় একে অপরের থেকে। এমন অভিভাবকত্বের ফলে শিশুরা প্রায়শই উপেক্ষিত বা অসহায় বোধ করে। বড় হওয়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তারা। সামাজিক পরিবেশে ঠিক মতো মিশতে পারে না তারা।
হেলিকপ্টার পেরেন্টিং
এই পদ্ধতিতে শিশুর দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে জড়িত থাকেন বাবা-মা। প্রতিনিয়ত যত্ন দু’তরফের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করে বটে, কিন্তু তাতে সন্তানের ক্ষতিও হয়। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা, ইত্যাদি তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
টাইগার পেরেন্টিং
নিয়মশৃঙ্খলাই মূলমন্ত্র। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সেরা হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় সন্তানদের উপর। কখনও কখনও শিশুরা খুব সফল হয়, কখনও বা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। সন্তানদের সীমাবদ্ধতা না বুঝে চাপ দিতে থাকায় মানসিক রোগ দেখা দেয় ছোটদের মধ্যে।