Innovative

Innovative and proteinaceous: প্লেটে থাক নতুনত্ব, পুষ্টিও

বাচ্চাদের খাবারে লেটুস, অলিভ দিতে পারেন। ওদেরও ভাল লাগবে, পুষ্টিগুণও বাড়বে খাবারের

Advertisement

শ্রেয়া ঠাকুর

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২১ ০৭:৫৩
Share:

রবীন্দ্রনাথের যুগ আর নেই। তাঁর ছোটবেলায় তত্ত্বাবধায়ক ঈশ্বর চাকরের সৌজন্যে বিকেলের জলখাবারে বরাদ্দ ছিল ছোলাসিদ্ধ, মুড়ি বা বাদামভাজা। এখনকার বাচ্চাদের জলখাবারসহ রোজকার খাবারেই চাই নতুনত্ব। রোজকারের ফল-আনাজেও তা যোগ করতে পারলে ‘খাব না’ বায়নাক্কা থেকে রেহাই মিলবে, পুষ্টিও বজায় থাকবে।

Advertisement

দুধ, ভাত, রুটি, ডাল, মরসুমি ফল, মাছ, ডিম ও মাংসের মাধ্যমেই বাচ্চারা পুষ্টি পায়। এ ছাড়াও, পাতে এমন কিছু খাবার রাখা প্রয়োজন, যা খাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে, সেই সঙ্গে পুষ্টিও জোগাবে। পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরীর মতে, কাস্টার্ড, স্যান্ডউইচ, পায়েস, স্যালাডের সঙ্গে মিশিয়ে এই খাবার দিতে হবে।

* লেটুস— ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেক্স ও কে থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরে জলের পরিমাণ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের জোগানও দেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে। আর খুব সহজেই নানা মুখরোচক স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায় লেটুস দিয়ে, সে স্যান্ডউইচ হোক বা চিকেন স্যালাড।

Advertisement

* অলিভ— পিৎজ়া টপিংসে এর বহুল ব্যবহার। ইটালি থেকে কলকাতা অবাধ যাতায়াত। বাচ্চাদের জন্য অলিভ ও অলিভ অয়েল অত্যন্ত উপকারী। অলিভ ও তার তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা সার্বিক ভাবে শিশুর স্বাস্থ্য ভাল রাখে। রক্তে ইনসুলিনের মাত্রার নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা রয়েছে। অলিভ অয়েলে মোনোস্যাচুরেটেড ওলেইক অ্যাসিড থাকায় হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

* অ্যাভোক্যাডো— এই সুস্বাদু ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, ডি, ভিটামিন বি৫, বি৬, ই, ফোলেট ও পটাশিয়াম থাকে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় চোখের পক্ষে উপকারী। হজমের সমস্যা ও ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য করে এই ফল। কোয়েল বললেন, ‘‘এই সুস্বাদু ফলের আর এক গুণ শরীরের প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।’’ অলিভের মতো অ্যাভোক্যাডোও হার্ট ভাল রাখে। ফ্রুট পাঞ্চ, স্যালাড বা রোজকার টোস্টের স্বাদ বাড়াতে খাদ্যতালিকায় রাখা যায়।

* আমন্ড ও আখরোট— রাইবোফ্লাভিন ও এল-কারনাইটিন থাকার কারণে মস্তিষ্কে স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক। আমন্ডের ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কম করে হার্ট ভাল রাখে। অন্য দিকে আখরোটের মধ্যে উপস্থিত মেলাটোনিন হরমোন ঘুমের সমস্যা দূর করে। রোজ সকালে জলে ভিজিয়ে দুটো আমন্ড দেওয়া ছাড়াও আপনার সন্তানকে দিতে পারেন আমন্ড মিল্ক বা শেক। এ ছাড়া রোস্টেড আমন্ড ব্লেন্ড করে বানিয়ে রাখতে পারেন হোমমেড আমন্ড বাটার। একই ভাবে বানানো যায় ওয়ালনাট বাটার বা বানানা-ওয়ালনাট শেক। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘কাস্টার্ড, পায়েসে আমন্ড কুচি ছড়িয়ে দিলে বাচ্চারা ভালবেসেই খাবে।’’

* ওটস— ওটসে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এ ছাড়া ওটসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম, ফলে বাচ্চাদের রক্তে শর্করা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে ওটস সাহায্য করে। তবে শুধু ওটসের পরিজ না দিয়ে খিচুড়ি বা রুটি‌ও বানিয়ে দেওয়া যায় বাচ্চাদের। চটজলদি মুখ চালাতে বানিয়ে রাখতে পারেন ওটস-রেজ়িন কুকিও।

* বেরি জাতীয় ফল: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ক্র্যানবেরি ও র‌্যাস্পবেরি বেশ সুস্বাদু। একই কথা বলা যায় কিউই বা চাইনিজ় গুজ়বেরির ক্ষেত্রেও। এটি মূলত হাঁপানি কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। রক্ত পরিশোধনে ও স্মৃতিশক্তি প্রখর করতেও বেরির জুড়ি নেই। সুবর্ণার মতে, ভিটামিন সি-র উৎকৃষ্ট উৎস ইন্ডিয়ান গুজ়বেরি বা আমলকী। সন্তানের দীর্ঘমেয়াদি সর্দি-কাশির সমস্যা থাকলে তা থেকে রেহাই দেয় এই ফল। নিয়মিত খেলে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে। বাচ্চার ডায়েটে সকালে আমলকীর রস আর ব্রেকফাস্টে বেরিজাতীয় ফল তাই রাখা যায়।

এ সবের পাশাপাশি ওবেসিটির সমস্যা না থাকলে বাচ্চাদের মাঝেমধ্যে এক টুকরো ডার্ক চকলেট দেওয়া যেতে পারে। এর কিছু উপকারিতা আছে। বলা হয়, ডার্ক চকলেট মন ভাল রাখতে ও অবসাদ কমাতে সহায়ক। তবে সুবর্ণা জানালেন, পুষ্টির সঙ্গে বাচ্চাদের হাইড্রেশনের উপরে নজর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। শিশু জল খেতে না চাইলে লেবুর জল বা লস্যি বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

অতএব বলা যায়, এই একবিংশ শতকের ‘খাওয়া না খাওয়ার খেলায়’ এই নিত্যনতুন খাদ্যসামগ্রীর পায়েই বল, আর গোল পোস্ট? আপনার সন্তানের পুষ্টি ও আপনার সন্তুষ্টি।

মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় ও স্যমন্তক মৈত্র

ছবি: অমিত দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন