ভয়ের কিছু নেই, চাই সাবধানতা

সকালে বৃষ্টি, দুপুরে রোদ। বিকেলে ফের বৃষ্টি। সন্ধ্যার পরে গুমোট। ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রার এমন ওঠানামায় বেশ কিছু ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফল? খুশখুশে কাশি, হাঁচি-সর্দি। এ সময় করণীয় কী, তা নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ দেবাশিস চক্রবর্তী কথা বললেন কিশোর সাহার সঙ্গে।সকালে বৃষ্টি, দুপুরে রোদ। বিকেলে ফের বৃষ্টি। সন্ধ্যার পরে গুমোট। ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রার এমন ওঠানামায় বেশ কিছু ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফল? খুশখুশে কাশি, হাঁচি-সর্দি। এ সময় করণীয় কী, তা নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ দেবাশিস চক্রবর্তী কথা বললেন কিশোর সাহার সঙ্গে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৫
Share:

পরীক্ষা: রোগীর চিকিৎসায় দেবাশিষ চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

প্র: কখনও গরম। কখনও স্যাঁতসেতে আবহাওয়া। দুপুরে দাবদাহ। রাতে বৃষ্টি। ভোরে শীতের আমেজ। শরীর খারাপ হচ্ছে অনেকের। ভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছে। এটা বোঝার উপায় কি? উপসর্গ কি?

Advertisement

উ: ভাইরাসের আক্রমণের প্রধান লক্ষণগুলো এ রকম: কারও নাক দিয়ে জল পড়তে পারে। বার বার হাঁচি হতে পারে। হাত-পা ব্যাথা। শরীর ম্যাজম্যাজ করবে। অল্প গা গরম হতে পারে। জ্বর-জ্বর ভাব হলে আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মনে হবে নিজেকে। এটাই ‘ফ্লু’ মানে ‘ভাইরাল ফ্লু’ হিসেবে পরিচিত।

প্র: এটা কি ভয়ের ব্যাপার? তা হলে কী করা উচিত?

Advertisement

উ: অতটা ভয়ের কিছু নেই। তাপমাত্রার হেরফেরের সঙ্গে শরীর মানিয়ে নিতে না পারলে অনেকের ভাইরাল ফ্লু হতেই পারে। কাজেই সাবধান থাকতে হবে যেন ঠাণ্ডা না লাগে। তার পরেও হালকা জ্বর, মাথা ব্যাথার মত উপসর্গ থাকলে হুটহাট অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। নিজে ডাক্তারি করবেন না। সাধারণ জ্বর অনেক সময়ে নিজে ডাক্তারি করে ওষুধ খাওয়ায় জটিল হয়ে যেতে পারে। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল, অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খেতে হবে। সাধারণত, ২-৩ দিনের মধ্যেই কিছুটা আয়ত্বে আসে। যে ওষুধ খান, সঙ্গে ভিটামিন জাতীয় কিছু অবশ্যই খেতে হবে।

প্র: ভাইরাল ফ্লুতে তাপমাত্রা কত ফারেনহাইট অবধি হতে পারে?

উ: এমন রোগীও দেখেছি ফ্লুতে ৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়েছে। কয়েক জনের ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট অবধি দেখেছি। তেমন হলে জলপটি দিতে হবে। তবুও জ্বর না কমলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তবে ভাইরাল ফ্লুতে জ্বর বেশি হলে, শরীর জল দিয়ে মুছিয়ে দিলে, মানে ‘স্পঞ্জ’ করে দিলে, তাপমাত্রা কম যায়। অসুস্থ মানুষটির আরাম হয়।

প্র: জ্বর হলে পথ্য কি?

উ: এ সময়ে শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। বেশি পরিমাণে জল খেতে হবে। যাঁদের জল বেশি খাওয়া বারণ, তাঁদের মেপে খেতে হবে। মশলাযুক্ত খাবার জ্বরের কদিন না খাওয়াই ভাল। মনে রাখবেন, জ্বরের সময়ে হজমশক্তি স্বাভাবিক থাকে না। কাজেই সহজ পাচ্য খাবার খাবেন। তেলে-ঝোলে, ঝালঝাল রান্না থেকে দূরে থাকতে হবে। তবে ছোট মাছ, চিকেন, ডিম হালকা মশলা দিয়ে খাওয়া দরকার। নিরামিষভোজীদের জন্য সয়াবিন, দুধ জরুরি। কারণ, এ সময়ে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিনও দরকার। স্যুপ খাওয়া ভাল। আদা-চায়ের মতো টোটকাও অনেক সময়ে কাজে দেয়। টানা গলা খুশখুশ থাকলে গরম জলে নুন দিয়ে দিয়ে কয়েক বার গার্গল করলে তা কমে যেতে পারে।

প্র: কাশির সিরাপ খাওয়া নিয়ে কি বলবেন?

উ: এটা নিয়ে অনেক মতানৈক্য রয়েছে। অনেকে খেতে বলেন। আবার অনেকে নিষেধ করেন। আসলে কাশির সিরাপে খুব একটা লাভ হয় বলে আমি মনে করি না। এতে গলায় একটা কুলিং এফেক্ট আসে এই আর কি! আমি তো কাশির সিরাপ খেতে খুব একটা পরামর্শ দিই না।

প্র: শিলিগুড়িতে গত বছর ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ফলে, জ্বর হলেই একটা আতঙ্ক। গত বছর যাঁদের ডেঙ্গি হয়েছিল, সুস্থ হয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে কী পরামর্শ?

উ: গত বছর ডেঙ্গি হয়েছিল, সুস্থ হয়েছেন অনেকে। তাঁদের কিন্তু, এ বার যে কোনও জ্বর হলে অতি মাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে। এক দুদিনের মধ্যে জ্বর না কমলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, সাধারণ জ্বরের উপসর্গের সঙ্গে ডেঙ্গির জ্বরের উপসর্গের ফারাক রয়েছে। ডেঙ্গির জ্বরে অসহনীয় ব্যাথা হবে, আচমকা জ্ঞান হারানোর ঘটনা ঘটতে পারে। জ্বর কিছুতেই কমতে চায় না। সাধারণ জ্বরে অসহ্য ব্যাথা সাধারণত হয় না। ম্যাজমেজে ব্যাপারটাই বেশি থাকে। আমার পরামর্শ, গত বছর যাঁদের ডেঙ্গি হয়েছিল বলে প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, তাঁদের এ মরসুমে জ্বর হলে অতি মাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।

প্র: ভাইরাল ফ্লুতে রক্ত পরীক্ষার দরকার নেই?

উ: ২-৩ দিনে জ্বর না কমলে রক্ত পরীক্ষা করানো দরকার। আর হ্যাঁ, ডায়াবেটিস, রক্তচারপের রোগী, যাঁদের কেমো চলছে, রেনাল ফেলিওরের সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ভাইরাল ফ্লু হলেও বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। গোড়া থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন