Travel

বেড়ানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলে বাড়বে সংক্রমণের আশঙ্কা

সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ব্যক্তিগত জীবনের প্রদর্শনের প্রবণতা অনেক খানি বেড়ে গিয়েছে। হালে প্রচুর সেলিব্রিটিও এমন ধরনের বেড়ানোর ছবি পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁদের অনুরাগীরা এই ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বেড়াতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:১৩
Share:

সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ‘ডিসপ্লে’ হতে পারে ভয়াবহ। গ্রাফিক্স—শৌভিক দেবনাথ

২০২০-২১-এর টাইমলাইন ওলোট-পালট। নিয়মমাফিক বাড়িতে ‘লকড’। কিন্তু ছুটির লোভ কি সামলানো যায়? তাই অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন আউটিংয়ে। আর সেই বেড়ানোর ছবিও দেদার পোস্ট করে চলেছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। করোনার আবহে এই বেড়ানো তো ভয়াবহ, কিন্তু তার চেয়েও ভয়াবহ এই ‘ডিসপ্লে’।

Advertisement

আসলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি। অনেকের কাছেই এই সময়টা বেড়ানোর জন্য তুলে রাখা থাকে। ঘরের কাছাকাছি ডে-ট্রিপ থেকে শুরু করে, একটু বেশি দূরের লম্বা ট্যুর।

কেন ভয়াবহ?

Advertisement

ছোট একটা ঘটনার কথা দিয়ে শুরু করা যাক। হালে স্ত্রী প্রকৃতি আর ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে একদিনের জন্য দিঘা বেড়াতে গিয়েছিলেন সুরজিৎ। ফিরে এসে সেই বেড়ানোর ছবি পোস্ট করেন প্রকৃতি। প্রকৃতির সোশ্যাল নেটওয়ার্ক লিস্টেই আছেন তাঁর বন্ধু অনির্বাণ। দীর্ঘদিন বাড়িবন্দি। ঘর থেকেই চলছে অফিস। তাতেই দমবন্ধ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল অনির্বাণের। প্রকৃতির ছবি পোস্ট দেখে রীতিমতো বেড়ানোর লোভ বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। ফলে প্রকৃতির সঙ্গে ফোনে একটু কথা বলে নিয়েই অনির্বাণ রওনা দেন সমুদ্রসৈকতের দিকে। এবং সেখানেই বিপত্তি।

তিন দিন পরে যখন ফিরলেন, তখন থেকেই অল্প জ্বর, শ্বাসকষ্ট। পরীক্ষা করিয়ে দেখা গেল অনির্বাণের কোভিড সংক্রমণ হয়েছে। অথচ, বেড়াতে যাওয়ার আগেই নিজের কোভিড টেস্ট করিয়েছিলেন তিনি। সেই পরীক্ষার ফল নেগেটিভই এসেছিল তাঁর।

আরও পড়ুন : নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত! বাড়তে পারে ওজন

অনির্বাণের এই পরিস্থিতির জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ‘ডিসপ্লে’কেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। কোনও অভিসন্ধি ছাড়াই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্ট করা একটা সাধারণ ছবিও হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক বিপজ্জনক। হালে প্রচুর সেলিব্রিটিও এমন ধরনের বেড়ানোর ছবি পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁদের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার বা অনুরাগীরা এই ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বেড়াতে। তা হলে সাধারণ মানুষের ছবি পোস্ট করতে বাধা কোথায়? বহু বিশেষজ্ঞই কিন্তু বলছেন অন্য কথা। তাঁদের মতে, সেলিব্রিটিদের দেখে অতিমারির সময় অনেকেই বেড়ানোর উৎসাহ পেতে পারেন। কিন্তু সেই উৎসাহের মাত্রা বাড়লেই তো বিপদ! কারণ সেলিব্রিটিরা যে ভাবে বেড়ান, সে ভাবে পাঁচ জন সাধারণ মানুষের পক্ষে বেড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয়কে বেড়াতে দেখলে, সেই বেড়ানোকে অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। আর তাতেই বাড়ে বিপদের আশঙ্কা।

এই ধরনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের পিছনে কারণ কী? মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ব্যক্তিগত জীবনের প্রদর্শনের প্রবণতা অনেক খানি বেড়ে গিয়েছে। তাঁর মতে, ‘ছোট ছোট খুশির মুহূর্ত ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ থাকে। সেটা যে সব সময় খারাপ, তাও নয়। আর এই ছবি দেখে, কেউ যদি বেড়াতে যাওয়ার উৎসাহ পান, সেটাও খারাপ নয়। বদ্ধ জীবনের বেড়াজাল কেটে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পাওয়ার ইচ্ছে সকলেরই থাকে। আর সেই কারণেই ছোট ছোট ট্যুর কার্যকরও হয়ে উঠতে পারে।’ তবে তাঁর মত, এই প্রতিটা ক্ষেত্রেই কোভিড-সুরক্ষাবিধি মেনে চলাটা খুব দরকারি। সেটা মেনে চললে, ছোট আউটিং মানসিক উত্তরণও ঘটাতে পারে।

কোভিড পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলেও, এখানে তা কতটা নিরাপদ? এ প্রশ্নেরও উত্তর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসক দেবর্ষি রায়ের মতে, কোভিড পরীক্ষার ফল নেগেটিভ মানেই যে আপনি নিরাপদ, তা নয়। ‘সাধারণত কোভিড পরীক্ষার ফল হাতে আসে এক-দু’দিনের মধ্যে। কিছু ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও ফল পাওয়া যেতে পারে। তবে পরীক্ষার ফল যত ক্ষণে হাতে এল, তত ক্ষণের মধ্যে যে কেউই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন’, বলছেন দেবর্ষিবাবু। তাঁর মতে, একবার ফল নেগেটিভ আসা মানেই, বেশির ভাগের প্রবণতাই হল, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টা কিছুটা শিথিল করে ফেলা। আর তাতেই বাড়ে বিপদের আশঙ্কা। যখন পরীক্ষা করানো হয়েছিল, তার পর যে কোনও মুহূর্তেই নতুন করে সংক্রামিত হতে পারেন সেই ব্যক্তি। সে ক্ষেত্রে বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়লে সংক্রমণের আশঙ্কা কতটা বাড়বে? দেবর্ষি রায়ের মতে, ‘যতটা সম্ভব অচেনা লোকজনকে এড়িয়ে চলুন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাটা দরকারি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দরকারি স্বাস্থ্যবিধি মনে চলা এবং নিজেকে নিরাপদে রাখা।’

আরও পড়ুন : কিছু খোলা, কিছু চাপা পোশাকে শীতে উষ্ণ হয়ে উঠবেন কী ভাবে?

তাই সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, এই মরসুমে ঝুঁকি নিয়ে যদিও বা বেড়াতে যান, তার ছবি পোস্ট করবেন না সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারণ তা আরও অনেক বেশি মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। আপনার বেড়ানোর ছবির পোস্ট থেকে যদি পাঁচ জন মানুষও বেড়ানোয় উৎসাহ পান, তা হলে তাও বাড়িয়ে দেবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন