Drinking

বছর শেষে পার্টি, মদ্যপানের মাত্রা ঠিক থাকছে তো?

অল্প মদ্যপান করার পর তা মস্তিষ্কে পৌঁছে নিউরোহরমোন ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন আমাদের আনন্দ ও ভাললাগার বোধ বাড়াতে সাহায্য করে।কিন্তু অপরিমিত মদ্যপানে আনন্দ বদলে যায় মন খারাপে।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:৪৫
Share:

বর্ষশেষে অপরিমিত মদ্যপান নয়।—শাটারস্টক

কোভিডের জেরে টানা গৃহবন্দি থেকে এখন অনেকেই বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য বেপরোয়া। ভাইরাসকে তাচ্ছিল্য করে বড়দিন আর বছর শেষের আনন্দে মশগুল। আর এই মরশুমে আনন্দ উদযাপন মানেই পানের অনুষঙ্গও থাকবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এখন এ বিষয়ে ছুঁৎমার্গ আর নেই বললেই চলে। তবে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে পানের অভ্যাসই ডেকে আনতে পারে বিপদ। অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপানের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে কোভিড-১৯ সহ অন্যান্য রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, বললেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত।

Advertisement

ধূমপান নয়

অনেকেই মদ্যপান আর ধূমপানের যুগলবন্দি না হলে খুশি হন না। এঁদের বিপদ আরও বেশি, আচমকা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় এক্ষেত্রে। যাঁদের ডায়বিটিস, হাই ব্লাডপ্রেশার, হাঁপানি বা অন্যান্য ক্রনিক অসুখ আছে আর ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, তাঁদের এক ইউনিটের বেশি মদ্যপান করলে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে বলে সাবধান করছেন দেবকিশোর গুপ্ত। জানাচ্ছেন, মদ্যপান করলে সরাসরি মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়ে। মাথা ঝিমঝিম থেকে শুরু করে হাঁটতে গেলে টলোমলো ভাব, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা, কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো নানান অসুবিধের মুখে পড়তে পারেন কেউ কেউ।

Advertisement

সীমারেখা ৩০ মিলিলিটার

আসলে মদ্যপান করার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তার প্রভাব মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। ১০ মিনিটে প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করে। জানাচ্ছেন নিউরোলজিস্ট অংশু সেন। আর মদ্যপানের পর মনে যে উৎফুল্ল ভাব আসে, তারও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। চিকিৎসক অংশু সেন জানাচ্ছেন, অল্প মদ্যপান করার পর তা মস্তিষ্কে পৌঁছে নিউরোহরমোন ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন আমাদের আনন্দ ও ভাললাগার বোধ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে অল্প মদ্যপানে শুরুতে মনে এক ফুরফুরে আমেজ আসে। কিন্তু, সে সময় সামান্য কথা মনে করতেও বেগ পেতে হয়। অংশু সেনের মতে, অপরিমিত মদ্যপানে আনন্দ বদলে যায় মন খারাপে। ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে, চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পৌঁছে যায়। অতিরিক্ত মদ্যপান করলে (ব্লাড অ্যালকোহল লেভেল .৩৫-এ পৌঁছলে) অ্যালকোহলিক কোমা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অংশু সেনের পরামর্শ, ক্রনিক শারীরিক সমস্যা না থাকলে ৩০ মিলিলিটার পর্যন্ত অ্যালকোহল পান করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন : ওজন কমান রাম কাপুরের পথে

হাইপার অ্যাসিডিটি

মদ্যপান করলে পাকস্থলী থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়। বাঙালিদের মধ্যে পানীয়ের সঙ্গে ভাজাভুজি খাওয়ার চল আছে। ডিপ ফ্রাই করা চিকেন, মাটন, প্রনের মতো নানান অনুপান সহযোগে মদ্যপান করায় হাইপার অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বেড়ে যায়, বললেন গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট সুনীলবরণ দাস চক্রবর্তী। এমনিতেই প্রাণীজ প্রোটিন হজমের সহায়ক অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে ভাজা খাবার ও অ্যালকোহল হাইপার অ্যাসিডিটি ডেকে আনে। যাঁদের গ্যাসটাইট্রিসের সমস্যা আছে, তাঁদের কাছে মদ্যপান বিষপানের সমতুল। সুনীলবরণ দাসের মতে, মাত্রাছাড়া মদ্যপান কখনওই কাম্য নয়। ৬০ মিলিলিটারের মাত্রা পেরনো একেবারেই ঠিক নয়। অনেকে সেলিব্রেশনের আনন্দে এর দ্বিগুণ পান করে বিপদে পড়েন। অতিরিক্ত মদ্যপানে প্রবল অ্যাসিডিটি, বমি, ব্রেন ফাংশন এলোমেলো হয়ে মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

পরামর্শ

উৎসবের সময় অ্যাসিডিটি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানালেন সুনীলবরণ। ভাজার পরিবর্তে সেঁকা বা বেকড অথবা গ্রিলড স্ন্যাক্স খেলে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা কমবে, ফ্রুট স্যালাড বা যে কোনও স্যালাড ও সেঁকা বাদাম বা ড্রাই ফ্রুটস সহ পানীয় নিতে পারেন। অনেকে অ্যাসিডিটি প্রতিরোধে প্যান্টাপ্রাজোল জাতীয় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর খেয়ে নেন। সেলফ মেডিকেশন না করাই ভাল। কেন না, এই ধরনের ওষুধ কিন্তু চটজলদি কাজ করতে পারে না। এই ওষুধ কার্যকর হতে চার পাঁচ দিন সময় লাগে। আর কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন এই ধরনের ওষুধ খেতে হয়। তাই দরকার হলেই প্যান্টাপ্রাজোল খাবেন না। সাধারণ অ্যান্টাসিড বেশি উপযোগী। খালি পেটে মদ্যপান করা একেবারেই অনুচিত। ড্রিঙ্কসের আগে বা পরে ব্যথার ওষুধ খাবেন না। এতে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফ্যাটি লিভার থাকলে মদ্যপানের ব্যাপারে সতর্কতা মেনে চলা উচিত।

আরও পড়ুন : দিন যায়, রাত আসে, ডায়েরির পাতা ওল্টায় করোনা

সতর্ক হোন

মদ্যপানের ফলে শরীরে জলের অভাব হয়। তাই পার্টি শুরুর আগে পর্যাপ্ত জল পান করা দরকার। ডায়বিটিস, হাইপ্রেশার ও হার্টের অসুখ থাকলে থাকলে এক পেগের বেশি মদ্যপান অনুচিত। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান হার্টের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে, চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ খেতে ভুললে চলবে না। মদ্যপানের সঙ্গে সঙ্গে ধূমপান করলে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। কোনও ক্রনিক অসুখের কারণে যাঁরা স্টেরয়েড খাচ্ছেন, তাঁরা মদ্যপান করবেন না। একেই স্টেরয়েড খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, মদ্যপানেও ইমিউনিটি কমে। সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। ক্রনিক হাঁপানি বা ফুসফুসের অন্য অসুখ থাকলে মদ্যপান করা ঠিক নয়। যাঁরা সদ্য কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের কাছে মদ্যপান বিষপানের সমতুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন