অরক্ষিত ছাদে ওঠার সিঁড়ি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
মহিলা মেডিক্যাল ওয়ার্ডের ছাদ থেকে পড়ে জখম হলেন এক রোগিণী। ঘটনাস্থল জঙ্গলমহলে চিকিৎসার প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই ঘটনার পর ফের প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ল হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
গোড়া থেকেই জঙ্গলমহলের উন্নয়ন নিয়ে হাজারও পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত তাঁর উদ্যোগেই জেলা হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে ঝাড়গ্রামের এই চিকিৎসা কেন্দ্র। কিন্তু বারবার নানা ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছাড়াই তড়িঘড়ি একে জেলা হাসপাতালের মর্যাদা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রেই সামনে এসেছে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি।
এই জেলা হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে কার্যত কোনও নিরাপত্তা নেই বলে অভিযোগ। মূল ওয়ার্ডে সংস্কার কাজ চলায় গত দু’বছর ধরে অস্থায়ী ভাবে ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডটি চলছে বহির্বিভাগের একতলায় ঘেরা বারান্দায়। অস্থায়ী ওই ওয়ার্ডের ভিতরেই রয়েছে একতলা ভবনের ছাদে ওঠার সিঁড়ি। ছাদের মুখে সিঁড়ির দরজাটিও ভাঙা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আচমকা ওই ছাদে উঠে নিচে ঝাঁপ দেন বিমলা খিলাড়ি নামে বছর পঁয়তাল্লিশের এক রোগিণী। তবে হাসপাতাল ভবনের লাগোয়া একটি পান দোকানের টিনের চাল থাকায় বড় ধরনের বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান বিমলাদেবী। দোকানের টিনের চাল থেকে গড়িয়ে মাটিতে পড়েন তিনি। হাসপাতালের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। বিমলাদেবীর কোমরে চোট লেগেছে। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক অবশ্য দাবি করেছেন, “ওই রোগিণী সরাসরি ছাদ থেকে ঝাঁপ দেননি। তিনি ছাদ থেকে একটি দোকানের টিনের চালে নেমেছিলেন। তারপর গড়িয়ে মাটিতে পড়ে যান। এক্স-রে করে দেখা হয়েছে ওঁর চোট গুরুতর নয়।”
অসুস্থ বিমলা খিলাড়ি।
গত মঙ্গলবার পেটে যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি হন বিমলা খিলাড়ি। পেশায় দিনমজুর বিমলাদেবীর বাড়ি ঝাড়গ্রামের ছোট পারুলিয়া গ্রামে। তাঁর সম্পর্কিত বোন মাইনো বেসরা বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে দিদির কাছেই আছি। দু’টো নাগাদ দিদি আচমকা ওয়ার্ডের মধ্যে ছোটাছুটি করতে থাকে। ওই সময় কর্তব্যরত নার্স একজন বিষ খাওয়া রোগিণীকে নিয়ে হিমসিম খাচ্ছিলেন। দিদি এক ছুটে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে যায়। আমিও পিছন পিছন ছুটে যাই। কিন্তু তার আগেই দিদি ঝাঁপ দেয়। ছাদের দরজা বন্ধ থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।” মাইনোদেবী জানান, ব্যথা বাড়লে বিমলাদেবীর খিঁচুনি হয়। তখন তিনি পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে থাকেন।
ছাদে ওঠার ভাঙা দরজাটির জন্য অরক্ষিত ওয়ার্ডে যে কোনও সময় অঘটন ঘটতে পারে বলে দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছিলেন নার্স ও কর্মীদের একাংশ। ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সরা ইতিপূর্বে ‘কল বুক’-এ লিখিত ভাবে এই আশঙ্কার কথা একাধিকবার হাসপাতাল সুপারকে জানিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় নি। তবে ওই ঘটনার পরে শুক্রবার ছাদের ভাঙা দরজাটি দু’টি বোর্ড দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘটনার পরে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন কর্তব্যরত নার্স ও কর্মীরা।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে হাসপাতালের ছ’টি ওয়ার্ডের সংস্কার ও ঢেলে সাজার কাজ শুরু হয়। ওই সময় ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডটি অস্থায়ী ভাবে বহির্বিভাগের ঘেরা বারান্দায় সরিয়ে আনা হয়। কিন্তু অস্থায়ী ওই ওয়ার্ডের ভিতরেই রয়েছে ছাদে ওঠার সিঁড়ি। ছাদের মুখে সিঁড়ির দরজাটি ভাঙা। ফলে, যখন তখন রোগিণী ও তাঁদের পরিজনেরা ছাদে উঠে পড়েন। আবার ওয়ার্ডে ঢোকার মূল কোলাপসিবল দরজাটির অবস্থাও বেহাল। রাতের বেলা কোলাপসিবল্ দরজাটিও ঠিকমতো বন্ধ করা যায় না। নার্স ও মহিলা কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, রাতের বেলা চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে কাজ করতে হয়।
হাসপাতালের সুপার বলেন, “পূর্ত দফতরকে বার বার বলা সত্ত্বেও ভাঙা দরজা সারায়নি। তবে এ দিন আমরা নিজেরাই দরজাটি অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করেছি। ওয়ার্ড সংস্কারের কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব তাড়াতাড়ি আগের জায়গায় ওয়ার্ডটি স্থানান্তরিত করা হবে।”