রক্ত-শূন্য। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।
রক্ত শূন্যতায় ভুগছে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। কমবেশি মাস দেড়েক ধরে এই সঙ্কট চলছে। জেলার একমাত্র ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন রোগীরা। তাঁদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ভাগ্য ভাল থাকলে রক্ত পাওয়া যাচ্ছে। না হলে রোগীদেরই বলা হচ্ছে দাতা জোগাড় করে নিয়ে আসতে হবে। ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার সান্ত্বনা দত্ত বলেন, “রক্তদান শিবির খুব কমে গিয়েছে। যে টুকু রক্ত জোগাড় করা যাচ্ছে, তা বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছি আমরা।”
ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কে আটটি গ্রুপের মোট মজুত রক্তের পরিমান ছিল ১৮ প্যাকেট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ দিন ব্লাড ব্যাঙ্কে ছিল এ পজিটিভ ২টি, বি পজিটিভ ৪টি, ও পজিটিভ ৩টি, এবি পজিটিভ ৬টি, বি নেগেটিভ ২টি এবং এবি নেগেটিভ ১টি। এ নেগেটিভ এবং ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত এ দিন ছিল না।
বলরামপুরের বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র পান্ডা তাঁরা পিসিমার জন্য বি নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত নিতে এসেছিলেন। কিন্তু রক্ত পাননি। তিনি বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা জানাচ্ছেন, পিসিমার যে গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন তা এখানে নেই। এখন ওই গ্রুপের রক্ত দাতা জোগাড় করে নিয়ে আসতে তাঁরা বলছেন। কোথায় দাতা পাব?” পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের বহু এলাকা থেকে এখানে চিকিত্সা করাতে আসেন। সরাইকেলার বাসিন্দা রিবন কুইরির অভিযোগ, “আমারও বি পজিটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু এখানে বলছে রক্তের জোগান কম রয়েছে। বলছে দাতা চাই। এই শহরে পরিচিতজন তেমন নেই। কোথা থেকে রক্ত পাব বুঝতে পারছি না।” একই সমস্যা নিয়ে এ দিন ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে বসেছিলেন পুরুলিয়া শহরের কাটিন পাড়ার বাসিন্দা সুভদ্রা কর্মকার। তাঁর ছেলের জন্য এবি পজিটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “অনেকক্ষণ বসে রয়েছি। জানি না রক্ত পাবো কি না।”
ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, রক্তের এই সঙ্কট চলছে কমবেশি মাস দেড়েক ধরে। জেলায় রক্তদান শিবির না হওয়া তার প্রধান কারন। জেলার একমাত্র এই ব্লাড ব্যাঙ্কে মাসে গড়ে চাহিদা থাকে ৭৫০ থেকে ৮০০ ইউনিট রক্তের। জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ অবধি (২৪ জুলাই পর্যন্ত) বিভিন্ন রক্তদান শিবির থেকে রক্ত মিলেছে ২০৫ ইউনিট। মাঝখানে সঙ্কট চরমে পৌঁছে যাওয়ায় চলতি মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে জেলার বাইরের শিবির থেকে রক্ত নিয়ে আসতে হয়েছে।
জুলাই মাসে জেলায় শিবির হয়েছে চারটি। এই চারটি শিবির থেকে রক্ত পাওয়া গিয়েছে ৯৩ ইউনিট। ১৮ জুলাইয়ের পর থেকে কোনও শিবির না হওয়ায় রক্তের সঙ্কট চরমে পৌঁচেছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মীর কথায়, “জেলায় যে সব সংগঠন রক্তদান শিবির করে তাঁদের কাছ থেকে তেমন সাড়া না পাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থা এ ভাবে তলানিতে ঠেকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের। হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের কাউন্সিলর দেবজিত্ পান্ডা বলেন, “আমাদের বিভাগে প্রতি মাসে গড়ে ২৫০-র কিছু বেশি রোগীকে নিয়মিত রক্ত দিতে বয়। কোনও মাসে ওই সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যায়। কিছুদিন ধরে দেখছি তাঁদের মধ্যে শতকরা ৪০ জন ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত পাচ্ছেন। বাকিদের দাতা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ফলে রক্তের অভাবে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তেরা খুব সমস্যায় পড়েছে।”
বছরের বিভিন্ন সময় যে সব সংগঠন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে তাদের মধ্যে পুরুলিয়া শহরের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা তপতী দাস মাহাতো বলেন, “রক্তের সঙ্কট গ্রীষ্মে ও বর্ষায় কিছুটা থাকেই। কিন্তু এ বার ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থা এতটা শোচনীয় হয়ে পড়েছে জানা ছিল না। আমরা রক্তদান শিবির আয়োজনের চেষ্টা করছি।’’ হুড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র সত্যরঞ্জন কুণ্ডু বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের এই অবস্থার কথা জেনে অগস্টের প্রথম সপ্তাহেই আমরা একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছি।” ডিওয়াইএফ-এর জেলা সভাপতি বিমলেন্দু কোনার বলেন, “আমরা ৪ জুলাই একটি রক্তদান শিবির করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাঙ্কের কর্মীরা সময় দিতে পারেননি। শীঘ্রই একটি শিবির করব।” আদ্রার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তা বাসুদেব বাউরি জানান, তাঁরা গত মার্চ মাসে একটি শিবির করেছিলেন। আবার আরও একটি শিবির তাঁরা করতে চান। ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার সান্ত্বনা দত্ত বলেন, “শুধু কয়েকটি সংগঠন রক্তদান শিবির করলে হবে না। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্নস্তরের মানুষজন ধারাবাহিক ভাবে শিবির করে গেলে তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”