স্বাস্থ্য জেলার হাসপাতাল যেন নেই রাজ্য

নামেই জেলা হাসপাতাল! পরিকাঠামোর দিক থেকে এখনও মহকুমা হাসপাতালের পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে ঝাড়গ্রামের সরকারি হাসপাতালটি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালটিকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু দু’বছর পরেও সর্বত্রই বেহাল পরিকাঠামোর ছবি। ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে বছর দু’য়েক আগে ঝাড়গ্রামকে স্বাস্থ্য জেলা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ একটি জেলা হাসপাতালে যা যা থাকা দরকার, তার অধিকাংশই এখানে নেই। শয্যা বাড়েনি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০২:১৩
Share:

ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডের বাড়তি রোগীদের এ ভাবেই বাইরে মশারি টাঙিয়ে রাখা হয়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নামেই জেলা হাসপাতাল! পরিকাঠামোর দিক থেকে এখনও মহকুমা হাসপাতালের পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে ঝাড়গ্রামের সরকারি হাসপাতালটি।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালটিকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু দু’বছর পরেও সর্বত্রই বেহাল পরিকাঠামোর ছবি। ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে বছর দু’য়েক আগে ঝাড়গ্রামকে স্বাস্থ্য জেলা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ একটি জেলা হাসপাতালে যা যা থাকা দরকার, তার অধিকাংশই এখানে নেই। শয্যা বাড়েনি। থাকার কথা ৫০০টি। আছে মাত্র ২৫৭টি শয্যা। অথচ রোগীর চাপ বেড়েছে বহুগুণ। ফলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়তি রোগীদের মেঝেয় শুইয়ে রেখে চিকিৎসা করাতে হয়। স্থানাভাবে একটি অস্থায়ী টিনের ছাউনির তলায় আইসোলেশন ওয়ার্ডের বাড়তি রোগীদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২০১২ সালের এপ্রিলে আইসিইউ এবং আইটিইউ তৈরির জন্য রাজ্য সভার সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর সাংসদ তহবিল থেকে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পূর্ত দফতর ও স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এখনও কাজটি শুরু করা যায় নি। পূর্ত দফতরের তৈরি নকশাটি পছন্দ হয়নি স্বাস্থ্য দফতরের। নতুন নকশা তৈরির কাজ চলছে। জেলা হাসপাতালে এখনও বার্ন ইউনিট নেই। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ রোগীদের কলকাতায় পাঠানো হয়। নেই ক্যান্সার নির্ণয় কেন্দ্র। সব থেকে বিপজ্জনক হল, প্রসূতি বিভাগ থেকে লেবার রুমের দূরত্ব প্রায় ৮০ফুট। প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, লেবার রুমটি প্রসূতি বিভাগের লাগোয়া হওয়া উচিত।

Advertisement

যে প্রসূতির শৌচাগারে প্রসব এবং তারপরে এক ঘণ্টা শৌচাগারের মেঝেতেই সদ্যোজাতকে নিয়ে কাতরানোর ঘটনায় এই হাসপাতাল ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে, সেই কবিতা গড়াইকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত নার্স ঝর্না গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। এ দিন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে হাসপাতালের পরিকাঠামো সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়।

শৌচাগারে প্রসবের পরে কবিতার কাছে না যাওয়ার কারণ হিসেবে রোগীর চাপ এবং কর্মী-সঙ্কটের কথা বলেছিলেন নার্স ঝর্নাদেবী। এ কথা ঠিক যে বেশি রোগী এলে সমস্যা হয়। কারণ, ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লক ছাড়াও লোগায়া রাজ্য ঝাড়খণ্ড ও বাঁকুড়া থেকে রোগীরা এখানে আসেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা। আছেন ৩০ জন। সার্জেন (শল্য চিকিৎসক) ৩ জন থাকার কথা। আছেন ২ জন। সাধারণ মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা ১৫ জন, আছেন ৭ জন। দু’জন রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ পদের একটি শূন্য। ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য এক জন প্যাথলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-সহ মোট ৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। সাধারণ একজন চিকিৎসক কাজ চালান। হাসপাতালে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। সরকারি ডোমও নেই। এতজন অস্থায়ী অনভিজ্ঞ ডোম মর্গের দায়িত্বে রয়েছেন।

নার্স থাকার কথা অন্তত ১৩৫ জন, আছেন ৮০ জন নার্স। ডিউটি করেন ৭৩ জন নার্স। ১১১টি জেনারেল ডিউটি অ্যাটেনডেন্ট (জিডিএ) কর্মী পদের ৬৮ টি পদই শূন্য, আছেন মাত্র ৪৩ জন। ৩৪টি সুইপার পদের ১৯টি শূন্য। ব্লাড ব্যাঙ্কের নিজস্ব গাড়িও নেই। সিটিস্ক্যান ইউনিট নেই। ডিজিট্যাল এক্স রে নেই। হাসপাতালের ইসিজি মেশিনটি মান্ধাতা আমলের। মাঝে মধ্যেই সেটি বিগড়ে যায়। দেড় বছর ধরে আলট্রা সোনোগ্রাফি (ইউএসজি) মেশিনটি বিকল। অভিযোগ, বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্র গুলির স্বার্থে ইউএসজি মেশিনটি সারানো হচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে রোগীর চাপ বাড়লে ভীষণই সমস্যা হয়। এত কিছু অভাবের কারণে রোগীর অবস্থা একটু খারাপ থাকলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা কলকাতায় রেফার করে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের খবর, রাজ্যের সর্বত্রই সরকারি চিকিৎসকদের আকাল। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও টেকনিশিয়ানের অসংখ্য পদ খালি। ফলে, কর্মী নিয়োগ না করে নতুন নতুন বিভাগ চালু করে ও মেশিনপত্র দেওয়াটাও অর্থহীন। আউটডোরে আসা রোগীদের বক্তব্য, “পরিকাঠামোর উন্নয়ন না-করে জেলা হাসপাতাল করা হয়েছে, অথচ এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যায় শয্যা নেই। নার্স নেই। জেলা হাসপাতালের কোনও সুযোগ সুবিধা এখান থেকে এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। নামেই ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল। আমাদের সেই মেদিনীপুর কিংবা বাঁকুড়ায় যেতে হয়।”

মহকুমা হাসপাতালে যতজন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী থাকার কথা, তার থেকেও ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে সংখ্যাটা যথেষ্ট কম। ফলে, সামাল দিতে প্রতি মুহূর্তে হিমসিম খেতে হয় বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় চিকিৎসক না থাকায় আউটডোরে নাক-কান-গলা (ইএনটি), দাঁত, অস্থি ও চর্ম বিভাগ গুলি সপ্তাহে সবদিন নিয়মিত খোলা রাখা সম্ভব হয় না। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “মাত্র তিন সপ্তাহ হল আমি সুপারের দায়িত্বে এসেছি। পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন