Art Exhibition

‘শস্য ফুটলে আমি নেব তার মুগ্ধ দৃশ্য’

প্রশান্তের কাজগুলি বেশ বার্তাবহ। জীবনের মূল্যবোধের পাশাপাশি, বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন কর্মের সঙ্গে যা ওতপ্রোত।

Advertisement

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৩৩
Share:

ইমামি আর্ট কর্তৃপক্ষ এই দুঃসময়ের কথা মাথায় রেখেই, কিছু মনে রাখার মতো প্রদর্শনী উপহার দিয়ে চলেছে অনলাইন ও প্রত্যক্ষ ভাবে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের মাধ্যমে। সদ্যসমাপ্ত ‘সাবার্বান শ্যাডোজ়’ এমনই একটি অনলাইন প্রদর্শনী। শান্তিনিকেতন কলাভবনের চিত্রকলার অধ্যাপক প্রশান্ত সাহু ২০১৯ ও লকডাউন পর্বে বেশ

Advertisement

কিছু ছোট আকারের ড্রয়িং বেসড কাজ করেছিলেন কাগজে। সেই কাজের নির্বাচিত অংশ নিয়েই প্রদর্শনী।

প্রশান্তের কাজগুলি বেশ বার্তাবহ। জীবনের মূল্যবোধের পাশাপাশি, বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন কর্মের সঙ্গে যা ওতপ্রোত। কিছু রূপ বা বিষয়, যা মানুষ সে ভাবে তলিয়ে ভাবেন না, সেখান থেকেই জীবনযাপনের কিছু অনুষঙ্গ ও প্রাকৃতিক উপাদান তাঁর ছবির উপজীব্য। কাগজের ত্বককে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছেন। স্পেস সেখানে সাদা, বিস্তৃত। ছড়ানো অবজেক্ট। একটি ‘আনটোল্ড স্টোরি’ খুঁড়ে বার করে আনা কিছু অন্য রকম বেঁচে থাকার বার্তা। সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মানুষের, বিশেষত একজন কৃষকের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি সচেতন। একটি ‘কমোন অ্যাপ্রোচ’ এই ডেটা বেসড কাজগুলিতে। পটভূমিতে মানুষ ও তার ভূমিকা, বিশেষত রূপবন্ধ ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত অনুষঙ্গ, উপাদান... সবই যেন এক দীর্ঘ জার্নি। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু সংকেত সেই রেখা, ড্রয়িং ও সামান্য রঙের আয়োজনে। এখানে একজন মানুষ, তিনি হতে পারেন কোনও কৃষক বা তাঁর যে কোনও মডেল— তিনি কী ভাবে কোনও কাজকে পরখ করছেন, তা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর হাত-পায়ের ভূমিকা, সেই বীজ বা আনাজ বা ভুট্টা, বৃক্ষ, ফল, ফুল, বিভিন্ন খাদ্যবস্তু, নিত্য ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলিকে কী ভাবে ধরছেন, সেগুলির সঙ্গে তাঁর পরিবারের অন্যান্যদের হাত-পা কী ভাবে কাজ করছে— এ সব আশ্চর্য ভাবনাকে তিনি রূপ দিয়েছেন। আর সবই এক-একটি খণ্ডচিত্রের মতো। ছড়ানো বা একক, নীচে বা উপরে একটি বার্তা রেখেছেন। এই ডেটার মাধ্যমে শিল্পী সেই চরিত্রের নাম-ধাম, জন্ম, পিতা-মাতা-স্ত্রীর নাম, বয়স, কোন পঞ্চায়েত, ক’টি সন্তান, গ্রাম, জেলা, মাসিক আয়, জন্মের সময়... এই সব নানা খুঁটিনাটি লিখে রচনাটিকে বেশ চমৎকার অ্যারেঞ্জ করেছেন। কখনও বর্ণ সমতল, কখনও তা ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, কোথাও পাতলা ওয়াশের মতো। খুবই কাব্যিক রেখা ও তার কিছু চলন, বঙ্কিম, ছন্দোময় একটি অনুরণন তৈরি হচ্ছে। ছায়াময় শরীর। একজন কর্মচঞ্চল মানুষের হাত-পা কার্টুনের ড্রয়িংয়ের মতো পরস্পর ডিটেলধর্মী। যেমন তাঁর আলু বপন বা তোলার মুহূর্ত। একটি চমৎকার গ্রাফিক কোয়ালিটি তাঁর ছবিতে বিদ্যমান। রেখা আবার বিন্দু বিন্দু হয়ে ফর্মটিকে তৈরি করে মিলিয়ে যাচ্ছে কাগজের ত্বকে। সেখানে খাদ্যবস্তু, আনাজ, বীজ, চামচ, রেকাবি, কাঁটা, বাস্কেট, চেয়ার, ডাইনিং টেবল সবই আছে। ঢেঁড়স, কুমড়ো, আলু, বেগুন, টম্যাটো, কড়াইশুঁটি, ঝিঙে, গাজর, বাঁধাকপি— সমস্ত কিছুকে একটি সূত্রে বেঁধে, কম্পোজ়িশনের ক্ষেত্রে অদ্ভুত ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলিকে। সেখানে চেয়ার-টেবলের ভূমিকাও মুখ্য।

Advertisement

হাত-পা থেকে উত্থিত নানা আনাজপাতি ও তার শাখাপ্রশাখা খুবই প্রতীকী। তাঁর কাজগুলিতে এই প্রতীকী বার্তার অন্তরালে আছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়। একটি ডকুমেন্টারি স্টাইল বলা যায়। তিনি স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ ও নানা প্রস্তাবনাকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। এই কম্বিনেশনটিই রিয়্যাল ডকুমেন্টেশন। একটি ভিসুয়াল স্টেজে তিনি কাজ করেছেন। এগুলি কখনওই উপেক্ষা করা যাবে না। গ্রামে বেড়ে ওঠা প্রশান্ত কৃষি, কৃষকের জীবন, ভূমি ও কৃষিক্ষেত্র... এগুলিকে সচেতন ভাবে স্টাডি করেছেন। যা থেকে আমাদের জীবন এত কিছু পেলেও কৃষিবিদ, কৃষিভূমি যেন খুবই মূল্যহীন হয়ে পড়েছে মানুষের কাছে। একটি সিম্বলিক মেটাফরকে প্রশান্ত আশ্চর্য রচনার মধ্যে দেখিয়েছেন।

শিল্পীর কাছে সকালবেলাটা যেন একটি ‘ইলংগেটেড শ্যাডো’র মধ্যে অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করা। তিনি ‘বডি পার্টস’-কে ছবিতে প্রত্যক্ষ ভাবে ব্যবহার করেছেন তাঁর স্টাইল ও টেকনিকে। সেটিও একটি মিডিয়াম। এমনকি ত্বক ও তার গভীরতাকেও। আসলে জীবনের দু’টি দিককেই দেখানোর চেষ্টা। সেলিব্রেশন ও স্ট্রাগল। সকলের সহানুভূতি এক জায়গায় হলেই প্রশান্তি ও আনন্দ। পুরোটাই যেন একটা কবিতা। আংশিক ভাবে দেখলেও তা-ই। সিঙ্গল ফর্ম হলেও এর অ্যানালিটিক্যাল অ্যাপ্রোচটাই মূল। স্টাইল মেটেরিয়াল হিসেবে তিনি ওই সমস্ত ডিটেল দিতে চেয়েছেন। অসাধারণ প্রদর্শনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন