ত্বকের সৌন্দর্যে ঘি

শুধু ডায়েটে নয়, এখন রূপচর্চার রুটিনেও ঘিয়ের কদর বেশ। ফেসপ্যাক থেকে বডি পলিশিং সবেতেই হাজির সেকী ভাবে রূপচর্চায় ঘি ব্যবহার করে ঝকঝকে ত্বক পাবেন, রইল তারই হদিশ। বডি পলিশিংয়ে ঘি

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

মডেল: অন্বেষা ছবি: অমিত দাস

সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘিয়ের উপকারিতা নিয়ে এখন মোটামুটি সকলেই সচেতন। অনেকেই ঘি-কে আধুনিক ডায়েটের ভাষায় সুপারফুড বলেন। তবে সামগ্রিক স্বাস্থ্যরক্ষায় ঘিয়ের ব্যবহার সেই প্রাচীন কাল থেকেই সমাদৃত। রান্নাবান্না, হোমযজ্ঞ থেকে রূপচর্চা— ঘিয়ের ব্যবহার সবেতেই। কারণ ভাল মানের অর্গ্যানিক ঘি নানা রকম পুষ্টিগুণে ঠাসা। তাই ঘি-কে ইংরেজিতে বলা হয় ক্ল্যারিফায়েড বাটার। কারণ মাখনে থাকা ক্ষতিকারক উপাদানগুলোকে ছেঁকে নিলে যা পড়ে থাকে, সেটাই ঘি। তার মধ্যেকার সমস্ত জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড হজমে সাহায্য করা থেকে শুরু করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজ সবই করে।

Advertisement

ত্বকে ঘিয়ের ব্যবহার কিন্তু চমকপ্রদ ফল দেয়। বিশেষ করে, বিয়ের আগে হবু কনেরা যদি তাঁদের ফেসপ্যাক বা ব্রাইডাল রূপটানে ঘি ব্যবহার করেন, অনেক উপকার পাবেন। আসলে ঘিয়ে থাকে ভিটামিন এ, ডি এবং ই— যারা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হাওয়ায় ভেসে থাকা দূষণের কণাগুলির সঙ্গে লড়তে সক্ষম। তার সঙ্গে এই তিনটি ভিটামিনই কোনও না কোনও ভাবে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। ঘিয়ে আবার অ্যান্টি-এজিং প্রপার্টিও রয়েছে। নিয়মিত ব্যবহারে বয়সজনিত কারণে ত্বকে যে সমস্যাগুলি হয়, সেগুলি চলে যাবে। তবে ব্রণপ্রবণ ত্বক হলে বা ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হলে এবং তাতে র‌্যাশ থাকলে ব্যবহার না করাই ভাল।

কী ভাবে রূপচর্চায় ঘি ব্যবহার করে ঝকঝকে ত্বক পাবেন, রইল তারই হদিশ।

Advertisement

বডি পলিশিংয়ে ঘি

বিয়ের আগে অনেকেই ত্বকের যত্নআত্তির দিকে বেশি করে মন দেন। মাসে এক বার থেকে দু’বার বডি পলিশিং করাতে গেলেই কিন্তু অনেক টাকার ধাক্কা। অথচ ঘরোয়া উপায়ে যদি বডি পলিশিং‌ এবং মাসাজ করিয়ে নেন, টাকাও বাঁচে, আবার কাজও দেবে ভাল। বডি পলিশিংয়ে ক্লেনজ়িং, স্ক্রাবিং, প্যাক এবং মাসাজ ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি পদ্ধতিতেই আপনি ঘি ব্যবহার করতে পারেন। ক্লেনজ়িংয়ের জন্য কাঁচা দুধ নিন দেড় কাপ। তাতে বেসন এবং এক চামচ ঘি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে সারা শরীরে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে একটি গরম জলে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে ঘষে ঘষে তুলে নিন। দেখবেন প্রথম ধাপেই জমে থাকা সব ময়লা দূর হবে।

তার পরে এক্সফোলিয়্যান্ট হিসেবে আধ কাপ চালের গুঁড়ো, তিন চামচ জল ঝরানো টক দই, কমলালেবুর খোসা বাটা, গোলাপের পাপড়ির গুঁড়ো, সামান্য জাফরান এবং দু’চামচ ঘি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। স্ক্রাব নরম করতে খানিক গোলাপজল মেশাতে পারেন তাতে। শরীরের যে সব অংশে কালো ছোপ পড়েছে বা বেশি শুষ্ক, সেই জায়গাগুলোয় স্ক্রাব বেশি পরিমাণে লাগিয়ে নেবেন। লাগানোর দশ মিনিট পরে ভাল করে এক্সফোলিয়েট করুন। মাসাজের সময়ে মিশ্রণ যাতে শুকিয়ে না যায়, তার জন্য গোলাপজল দিতে থাকবেন অল্প করে। ধোয়ার পরে দেখবেন ট্যান চলে গিয়েছে অনেকটাই।

বডি প্যাকের জন্য এক কাপ মুসুর ডাল বাটা, দু’চামচ চন্দনের গুঁড়ো, এক চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা এবং তিন চামচ ঘি দিন। ভাল করে সব মিশিয়ে মুখে-গলায়-হাতে-পায়ে-পিঠে লাগিয়ে নিন। কুড়ি মিনিট পরে ভাল করে ধুয়ে নিয়ে স্নান করে ফেলুন। তার পরে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে মুছে নিয়ে খানিকক্ষণ বসুন। একদম শেষ ধাপে চার চামচ ঘি একটু গরম করে গলিয়ে নিন। খানিকটা ঠান্ডা হলে সেটা দিয়েই বডি মাসাজ করুন। দেখবেন, বডি পলিশিংয়ের প্রথম ধাপেই ত্বক ঝলমল করছে! এমনকি পলিশিংয়ের পরে মনও হয়ে উঠবে ফুরফুরে, প্রসন্ন। তবে প্রফেশনাল কোনও ম্যাসিওরকে বাড়িতে ডেকে এই সেশন করাতে পারলে মাসাজ এবং পলিশিংয়ে ঝঞ্ঝাট কম হবে।

ফেসপ্যাকে ঘি

শুধু দেশি ঘি দিয়েই ফেস মাসাজ করাতে পারেন। সঙ্গে অল্প একটু জাফরান মিশিয়ে নেবেন। মিনিট পনেরো মাসাজের পরেই দেখবেন ত্বকে সুন্দর গ্লো এসেছে।

যাঁরা র‌য়্যাল বিউটি ট্রিটমেন্ট পছন্দ করেন, তাঁরা একটু ভারী ফেসপ্যাকও ব্যবহার করতে পারেন। তিন টেবিল চামচ ময়দা নিন, তাতে তিন টেবিল চামচ কাঁচা দুধ, দু’চামচ গোলাপজল, দু’চামচ মধু আর এক চামচ ঘি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। তার পরে মুখ ভাল করে ফেসওয়াশ বা ক্লেনজ়ার দিয়ে ধুয়ে প্যাক লাগিয়ে নিন। মিনিট দশেক রেখে ধুয়ে ফেলুন।

ব্রাইডাল গ্লো পেতে হলে আর একটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। কমললেবুর খোসা গুঁড়ো, চন্দন গুঁড়ো, গোলাপজল, একটুখানি কাঁচা হলুদ বাটা এবং ঘি মিশিয়ে সপ্তাহে দু’দিন করে ব্যবহার করুন। দেখবেন, আপনার নরম-উজ্জ্বল ত্বকের মোহে বাঁধা পড়ছেন সকলেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন