কবিতার কথালাপে

নির্বাচনে, নিবেদনে-আবৃত্তি নয়, উপস্থাপনা করলেন কবিতার কথালাপে। যেখানে ধরা দেয় সময়, রাজনীতি, সমকাল, সংকট ও আন্তর্জাতিকতায়। চন্দ্রিমা রায়ের ‘একলা একা পথের বাঁকে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে। তাঁর সংকলনে একলব্য থেকে রোহিত ভেমুলা, রূপ কানোয়ার থেকে দীপার অলিম্পিক গমন। তাঁদের একার লড়াই, সুদীর্ঘ পথ হাঁটার অভিজ্ঞতা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৯
Share:

নির্বাচনে, নিবেদনে-আবৃত্তি নয়, উপস্থাপনা করলেন কবিতার কথালাপে। যেখানে ধরা দেয় সময়, রাজনীতি, সমকাল, সংকট ও আন্তর্জাতিকতায়। চন্দ্রিমা রায়ের ‘একলা একা পথের বাঁকে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে। তাঁর সংকলনে একলব্য থেকে রোহিত ভেমুলা, রূপ কানোয়ার থেকে দীপার অলিম্পিক গমন। তাঁদের একার লড়াই, সুদীর্ঘ পথ হাঁটার অভিজ্ঞতা। যেন কাঁটাতার মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন। চন্দ্রিমার নির্বাচনে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলও। অন্য দিকে পূর্ণেন্দু পত্রী, সুনীল, শক্তি থেকে জয় গোস্বামীও। চর্চিত ও জোরালো কণ্ঠে সেই সব কবিতায় দৃঢতার সঙ্গে একলা চলার ডাক।

Advertisement

দুই শিবিরে

Advertisement

গোরা’ সংবিৎ-এর নতুন প্রযোজনা। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের ছায়ায় নাটকের প্রেক্ষাপট। এখানে দুই যুযুধান শিবিরের এক দিকে গোরা, অন্য দিকে হাসান। নাট্যকার, নির্দেশক ইন্দ্র মাইতি তথ্য সমৃদ্ধ এই নাটকে তীব্র উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে পেরেছেন সারাক্ষণ। চরিত্রাভিনেতারা প্রায় সকলেই ভাল অভিনয় করেছেন। বিশেষভাবে সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জনা দাস, স্বপন দত্ত, উপল গঙ্গোপাধ্যায়, চন্দ্রানী ভট্টাচার্য, সৌম্য ভট্টাচার্য, রুমা রায়, দেবাশিস পাত্র, পায়েল মাইতি, প্রদীপ দত্ত ও রাখী দাস সিংহ।

পিনাকী চৌধুরী

এখনও সখারাম

প্রাচ্য-র প্রযোজনায়। লিখছেন পিয়ালী দাস

প্রাচ্য-র প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল বিজয় তেন্ডুলকরের বিতর্কিত নাটক অবলম্বনে ‘সখারাম’। অনুবাদ এবং নির্দেশনায় অবন্তী চক্রবর্তী। এ নাটক একটা মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকে না। কতগুলো মাধ্যমের মিশেল বলা যেতে পারে। চোখের সামনে একের পর এক নাট্য-মুহূর্ত রচিত হয় বাস্তব-পরাবাস্তবের। মূল টেক্সটকে অক্ষত রেখেই নির্দেশক মেটাফরের আশ্রয়ও নিয়েছেন। নাটক তো নয়, যেন পর্দায় সিনেমা চলছে, কখনও মনে হয় তা চূড়ান্ত ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে গেছে। এমনও মনে হয় যেন সিঁধ কেটে কোনও দম্পতির হেঁশেলে ঢুকে পড়েছি। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি তাঁদের জীবন-যাপন, যৌনতাও। নাটকে বিনোদন, মশলা, স্ল্যাঙ্গ, বলিউডি নাচা-গানা সবই আছে।

নাটকের গল্পে সখারাম একজন বাইন্ডার। সে স্পষ্টবাদী, মেজাজি ও কামুক। শরীরের খিদে নিয়ে সহজেই কথা বলেন। লেন-দেনের সম্পর্কে বিশ্বাসী। কোনও নারীর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে বা গভীরতায় জড়াতে চান না। অবসর কাটে গান গেয়ে এবং প্রাণের বন্ধু দাউদ মিঞ্রার সঙ্গে বসে কল্কেতে সুখটান দিয়ে। অন্য দিকে যৌন চাহিদা পূরণের জন্য সংসারে জুটেই যায় কোনও না কোনও নারী। সম্পূর্ণ নাটকটাই মেদহীন এবং বেশ টান টান।

এ নাটকে সখারাম-গৌতম হালদারকে পাওয়া যায় অন্য মেজাজে। নিজস্ব ঘরানাকে বজায় রেখেই নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন সখারাম চরিত্রে। কখনও যার মধ্যে পৌরুষ ধরা পড়ে। জীবনের এক বাঁকে আবার লক্ষ্মী-র মতো নারীর সংস্পর্শে স্বভাব সুলভ আচরণের বদল ঘটতে থাকে। এই বৈচিত্র চরিত্রটিকে অন্য মাত্রা দেয়। ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র কুসুম-এর পর চম্পার মতো এক সাহসী চরিত্রের হাত ধরে মঞ্চে ফিরলেন মনীষা আদক। দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে আবারও নিজেকে প্রমাণ করলেন। চম্পা চরিত্রের তেজ, জ্বালা, যন্ত্রণা, কামুকতা টেনে হিঁচড়ে বের করে আনলেন তিনি। লক্ষ্মী চম্পার বিপরীতধর্মী। স্নেহ মমতা মাখা, কল্পনাপ্রবণ এক নারী। দেখতে সাধারণ হলেও যার সত্তাটা একটু অন্য রকম। এই চরিত্রে সেরাটা দিয়েছেন দ্যুতি ঘোষ হালদার। ছোট চরিত্র হলেও দাউদ মিঞার ভূমিকায় মনে দাগ কাটেন বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। চম্পার বরের চরিত্রে বেশ মজাদার অসীম রায়চৌধুরী।

কিছু দৃশ্যের উল্লেখ করতেই হয়, যেখানে অবন্তী মনস্তাত্তিক নাট্য মুহূর্ত তৈরি করেছেন। যেমন- সখারামের সংসারে একাকী লক্ষ্মী যখন সামান্য পিঁপড়েকে নিঃসঙ্গতার সঙ্গী করে, কথা বলে সময় কাটায়। অস্তিত্বের সংকট কিংবা আধিপত্য কায়েম প্রতিটা মানুষেরই মজ্জাগত। সেই সংকট প্রকট হয় লক্ষ্মী-চম্পার মুখোমুখি ‘ক্যাট ফাইট’ সিকোয়েন্সে। এ দৃশ্য মনে থেকে যায়। নাটকে আলো (দেবাশিস রায়) এবং আবহ (দিশারি চক্রবর্তী) যেন চরিত্র হয়েই ধরা দেয়।

তোমার অসীমে

সম্প্রতি জ্ঞানমঞ্চে রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক গানের অনুষ্ঠানে সুন্দর গায়কিতে নজর কাড়লেন ইন্দ্রাক্ষী ঘোষ বসু। ‘তাই তোমার আনন্দ’ ও ‘তোমার অসীমে’ দুটি গানে। সব শেষে সংস্থার ছোটদের নৃত্যনাট্যটি মনে থাকবে বহু দিন।

আশ্চর্য ফ্যানটাসি

বৃত্তান্ত-র ‘সেকেন্ড ওপিনিয়ন’ নাটকটি দেখলেন আশিস চট্টোপাধ্যায়

যেন এক আশ্চর্য ফ্যানটাসির জগৎ। মনে হল যাদবপুরের নাট্যদল বৃত্তান্ত-র ‘সেকেন্ড ওপিনিয়ন’ নাটকটি দেখে। কল্পনা আর বাস্তবের বৈপরীত্য নাটকটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। এক অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী খগেন পুরকাইত-এর জীবনে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এক আশ্চর্য ঘটনা নিয়েই নাটকটির বিস্তার। খগেনবাবু মধ্যবিত্ত আকাঙ্খা থেকে হঠাৎ বিশ্ববিখ্যাত হবার স্বপ্ন দেখেন। সত্যিই চরিত্রটি হয়ে ওঠে বহুমাত্রিক। খগেনের স্ত্রী ও ছেলে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি খগেনকে মনোবিদ দেখানোর পরামর্শ দেন।

ছবি: শৌভিক সরকার

খগেন রেগে গিয়ে পরিচিত সাংবাদিক চঞ্চলকে ডেকে এনে তাকে ডিম পাড়ার গল্প শোনায়। চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন ওগুলি ডিম নয়, ক্যাপসুল, যা ডিমের আকারে বেরিয়ে এসেছে। সে তখন উন্মাদের মতো ‘সেকেন্ড ওপিনিয়ন’ চায়। মিলন মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি সূত্র থেকে নাটকটি নির্মাণ করেছেন নির্দেশক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। জমিয়ে অভিনয়ও করেছেন খগেন পুরকাইতের চরিত্রে। ভাল অভিনয় করেছেন চয়নিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, উমা নস্কর, প্রদীপ দে, উৎপল আগুয়ান প্রমুখ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement