Art exhibition

দেবভাষার এক দশক: উৎসব ও আধুনিকতা

শিল্পীর পরিণত বয়সের কাজের পাশাপাশি ষাট ও সত্তরের দশকের ছবিগুলি তাঁর চর্চার বিভিন্ন দিক প্রকাশ করে, যা দর্শকের জন্য সাধারণত দুর্লভ।

Advertisement

শর্মিষ্ঠা বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২২ ০৭:১৭
Share:

উদ্‌যাপন: দেবভাষার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম

নিজেদের প্রতিষ্ঠানের এক দশক পূর্তি উদ্‌যাপনে সম্প্রতি এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল দেবভাষা। প্রদর্শনীতে ছিল বাংলার আধুনিক শিল্পজগতের স্বনামধন্য শিল্পীদের ছবি ও ভাস্কর্য।

Advertisement

অতুল বসু, সুধীররঞ্জন খাস্তগীর, গোপাল ঘোষ, দিনকর কৌশিক, হরেন দাস, সোমনাথ হোর, কে জি সুব্রহ্মণ্যম, রেবা হোর, রবীন মণ্ডল, সনৎ কর, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, গণেশ হালুই, লালুপ্রসাদ সাউ, যোগেন চৌধুরী, শ্যামল খাস্তগীর, শুভাপ্রসন্ন, বিমল কুণ্ডু, সুশোভন অধিকারী, শেখর রায়, অলয় ঘোষাল, কৃষ্ণেন্দু চাকী, চন্দনা হোর, সুমিত দাস, অতীন বসাক, তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, কবরী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পীর সমাবেশে আয়োজিত জন্মদিনের প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল দেবভাষা প্রকাশিত প্রথম বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশ। বইটির নাম ‘সময়মঞ্জীর’, লেখক তুষার চৌধুরী।

অনাড়ম্বর এই প্রদর্শনীতে উঠে এসেছিল বাংলার আধুনিক শিল্পের বিভিন্ন ধারা। স্বাভাবিকভাবেই একাধিক ভাষা ও আঙ্গিকের ব্যবহার স্থান পেয়েছিল সেখানে। পাশাপাশি ছিল মাধ্যম ও বিষয়গত বৈচিত্র।

Advertisement

হরেন দাসের রঙিন এচিং ও উডকাট প্রিন্টে সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষকে দেখতে পাওয়া যায়। কর্মরত মানুষগুলির কাজের ধরন, বসার ভঙ্গি ও প্রেক্ষাপটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা, রেখা, রং ও রচনার নৈপুণ্যে এক-একটি বিশেষ সময় ও পরিবেশের আবহ তৈরি হয়েছে। সমাজ ও মানুষের পাশাপাশি, ছবির বিষয় হয়ে উঠেছে প্রকৃতির বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর সহাবস্থান। অন্যান্য সমস্ত পশুপাখির সঙ্গে সেখানে স্থান পেয়েছে গ্রামের রাখালবালকও। বন্ধুত্ব ও সহাবস্থানের দৃশ্য ফিরে ফিরে এসেছে একাধিক ছবিতে।

সোমনাথ হোরের অ্যাকোয়াটিন্ট এচিং, উডকাট ও কালি-কলমের ছবিগুলি মূলত সাদাকালো। কয়েকটি রৈখিক ছবি নীল কালিতে সাদা কাগজে আঁকা। শিল্পীর পরিণত বয়সের কাজের পাশাপাশি ষাট ও সত্তরের দশকের ছবিগুলি তাঁর চর্চার বিভিন্ন দিক প্রকাশ করে, যা দর্শকের জন্য সাধারণত দুর্লভ।

প্রদর্শনীর একটি বিশেষ অংশ অধিকার করেছিল ছাপা ছবি বা প্রিন্ট। কবরী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুশোভন অধিকারী এচিং মাধ্যমটির বিভিন্ন দিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এচিং ও উডকাট প্রিন্টের সঙ্গে ছিল উড ইন্টাগ্লিয়ো ও লিথোগ্রাফ।

এর পাশাপাশি দেখা গেল গণেশ হালুইয়ের সাম্প্রতিক কিছু সাদাকালো ছবি। স্বল্প পরিসরে কালি-কলম ও কালি-তুলিতে আঁকা বিমূর্ত ছবিগুলি প্রদর্শনীতে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। কালি-কলমের ছবিতে প্যাস্টেলের ব্যবহারে এক নিজস্ব ভাষা সৃষ্টি করেছেন যোগেন চৌধুরী। মানুষের মুখ, শরীর বা ফুলের ছবি তাঁর ভাষায় স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে।

গোপাল ঘোষের মিশ্র মাধ্যমের ছবিতে প্রকৃতির পাশাপাশি দেখা যায় বিমূর্ত শিল্পভাবনার প্রকাশ। অপরদিকে, মিশ্র মাধ্যমের বিভিন্ন দিক ও অভিব্যক্তি স্থান পেয়েছে রেবা হোরের একাধিক কাজে। রং, রেখা ও মাধ্যমের প্রতি সংবেদনশীলতা তাঁর ছবির বিশেষ চরিত্র। সেখানে কখনও সাধারণ মানুষ, কখনও নাগরিক জীবনে পশুদের উপস্থিতি।

বিষয়গত দিক থেকে এর বিপ্রতীপে রয়েছেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ‘গণেশজননী’ ছবিটি পৌরাণিক আঙ্গিকে হলেও, তা মা ও শিশুর সনাতন বিষয়বস্তুকে রূপায়িত করে। শ্যামলী খাস্তগীরের মিশ্র মাধ্যম ও চন্দনা হোরের তৈলচিত্রেও বারবার ফিরে এসেছে দেবী ও মানুষীমূর্তিরা।

টেম্পারার কাজে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্ম ও ভাষার পরিচয় দিয়েছেন সুধীররঞ্জন খাস্তগীর, সুজিত দাস ও অতীন বসাক। ভিন্ন প্রজন্মের এই শিল্পীদের রেখা ও রঙের ব্যবহার, রচনা ও বিষয়ের তারতম্য মাধ্যমটির বৈচিত্র ও বিস্তারের প্রসঙ্গ নিয়ে আসে।

লালুপ্রসাদ সাউয়ের নতুন ছবিতে পাওয়া যায় আধুনিক জীবনের অস্তিত্বের সঙ্কট। বর্ণনা নয়, বরং প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছেন এক অনিশ্চিত সময়ের ছবি। এই অনিশ্চয়তা অন্য ভাবে দেখা যায় তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যানভাসে। অ্যাক্রিলিক ও চারকোলে আঁকা তাঁর সাদাকালো ছবিগুলি এক দুঃসময়ের আশঙ্কা বয়ে আনে। শেখর রায়ের নীলাভ ছবিতেও যেন সমকালীন বিষণ্ণতার আভাস। অন্য দিকে, অলয় ঘোষাল ও কৃষ্ণেন্দু চাকীর মিশ্র মাধ্যমের ছবিগুলিতে সৃষ্টি হয়েছে এক বর্ণিল, মায়াময় জগৎ।

কে জি সুব্রহ্মণ্যম, দিনকর কৌশিক, রবীন মণ্ডল, শুভাপ্রসন্ন প্রমুখ প্রখ্যাত শিল্পীর স্বল্পপরিচিত বেশ কিছু ছবি ছিল এই প্রদর্শনীতে। বিমল কুণ্ডুর একাধিক ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য প্রদর্শনীকে দ্বিমাত্রিক ধারাবাহিকতার বাইরে আনতে সাহায্য করেছে। প্রদর্শনীটিতে ভাষা, আঙ্গিক বা বিষয়ের সামগ্রিকতার পরিবর্তে প্রাধান্য পেয়েছে বৈচিত্র ও ব্যাপ্তি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement