ভাস্কর্য: বার্ডস আই ভিউ-এর প্রদর্শনী। অ্যাকাডেমিতে
উদ্দেশ্য যা-ই থাক, কিছু সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি মাধ্যম হিসেবে সংস্থাগত ভাবে যদি একগুচ্ছ তরুণ শিল্পীর ছবি ও ভাস্কর্য নিয়ে কোনও প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করা হয় তাঁদের তরফে, ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রথমেই যা দেখা দরকার, তা প্রদর্শিত শিল্পকর্মের মান। এমন প্রদর্শনী বহু জায়গায় দেখা যায়, যেখানে তার গুণমান বিচার্য নয়। অন্তরালের উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন! কমবয়সিদের কাজ গ্যালারির ঝকঝকে পরিবেশে এসে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে দর্শককুলের সামনে, এ প্রাপ্তির মহানন্দে নিজেকে জড়াতে কার না ভাল লাগে! সে জন্য যতটা সহযোগিতা দরকার, সেই সংস্থা সে ক্ষেত্রে সেটাও পেয়ে যান।
প্রদর্শনীর জন্য একেবারে উপযুক্ত নয় এমন কাজের পাশেই অসাধারণ কিছু কাজও তাই এই সব ক্ষেত্রে নিঃশব্দ অবস্থান করে। ‘বার্ডস আই ভিউ’ অ্যাকাডেমির প্রবেশকক্ষের ছোট্ট ঘরের সাম্প্রতিক প্রদর্শনী। বড্ড ঘন ঘন ছবি। একে গ্যালারির স্পেস অপরিসর, তার উপর সকলেরই প্রায় দুটি করে শিল্পকর্ম। সবই অবশ্য ছোট ছবি। ভাস্কর্য একটি মাত্র। সেই সঙ্গে রিলিফ ওয়র্ক-ও স্থান পেয়েছে।
সামনে দীর্ঘ শাখাপ্রশাখা প্রসারিত সবুজ বৃক্ষের পিছনে রাস্তাঘাট, অটো, গ্রাম-শহরের খণ্ডদৃশ্যকে অল্প স্পেসে ধরতে চেয়েছেন অরুন্ধতী চৌধুরী। তাঁর শিল্পকর্মের ধরনটি মন্দ নয়, তবে অন্যটি কেন এটির তুলনায় অত বেশি অপরিণত?
অভিজিৎ দাসের বাঁকানো দুটি শিং নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চতুষ্পদের পরিচয় কী? ষাঁড় না গরু? দুইয়ের সংমিশ্রণে এমনটা মনে হতেই পারে যে— গরুই, তবে ষাঁড়ই বা নয় কেন? ব্রাশিং বা স্টাইলে যতটা মনোযোগী হয়েছেন, পটভূমিকায় ততটাই অমনোযোগী।
মালবিকা ঘোষ তাঁর কম্পোজ়িশনকে ছড়িয়ে দিয়ে কিছু একটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পিছনে আপাতহালকা বর্গক্ষেত্রের বাহুল্যে পটভূমি ও কুকুরগুলির মধ্যবর্তী অংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখানে স্পেসকে কোনও রূপারোপের মাধ্যমেই ভাঙতে বা গড়তে চেষ্টা করেননি বলে ছবি বড্ড সাদামাঠা হয়ে গিয়েছে। আর মধ্যবর্তী দূরত্বও গিয়েছে হারিয়ে।
সুচরিতা দাস তাঁর গরুর ছবিটিতে বেশ একটা সাবলীল তুলিচালনা ও রঙের মিশ্র মনোরম কমনীয়তায় অল্প জায়গায় গাছগাছালি-সহ পরিবেশকে বাঙ্ময় করে তুলেছেন। অন্য কাজটিতে কিন্তু তাঁর ব্যর্থতা লক্ষ করা গেল। কৃষ্ণ ঘোষের একটি কাজ এই প্রদর্শনীর কোথাও দেখা গেল না। তা হলে ভাস্কর্যটি ফোল্ডারে মুদ্রিত করার কারণ কী? যেমন প্রদর্শনীতে অনিরুদ্ধ বিশ্বাসের না-থাকা একটি কাজও মুদ্রিত। দর্শক যা দেখতে পাবেন না, পরিচিতিতে সে কাজ থাকার অর্থ কী? তাঁর অন্য দুর্বল কাজটির মাধ্যম হিসেবে ‘গোয়াশ’ বানান দেখে যে-কেউ আঁতকে উঠতে পারেন।
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য চেষ্টা করেছেন ভাস্কর্যসুলভ মূর্তিতত্ত্বের ভাবনাকে দ্বিমাত্রিকতার রঙিন আবহে প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করতে। ততটা ঠিক পারেননি হয়তো, তবে তাঁর উদ্দেশ্যকে স্বাগত। কুন্তল মান্নাও দুর্বলতর দিকটিকে উপেক্ষা করে, নাটকীয় নীল আলোর পরিবেশে মানানসই কম্পোজ়িশনকে রক্ষা করতে পারেননি।
ঋত্বিকা মণ্ডলের কাজে শিশুসুলভ সারল্যের সঙ্গে মিশেছে রূপকথার পাঁচমিশেলি রহস্য। যা একই সঙ্গে রোম্যান্টিক ও আদিবাসী শিল্পকলার দুর্লভ মুহূর্তকে ফিরিয়ে দেয়। আত্রেয়ী ভট্টাচার্যকে কম্পোজ়িশন ও নারীর অবয়ব নিয়ে ভাবতে হবে। বিশেষত মুখের অভিব্যক্তি ও সমগ্র ড্রয়িং। তবু বিশ্বরুণ কুণ্ডুর দুর্বল পেন্টিং কিছু মাত্র আভাস রেখে যায় উল্লম্ব রূপারোপের আধিক্য থেকে ভেঙে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে বার করার ক্ষেত্রে। শিল্পীর কম্পোজ়িশনটিকেও একটা জায়গায় থিতু হয়ে বসতে হবে! তার পর তো আলোছায়ার খেলা।
এ ছাড়া প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন পূজা ঘোষ, সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়, শাশ্বতী দাস, সুপ্রীতা চন্দ, তন্ময় আহির প্রমুখ শিল্পী।
ভালমন্দের মাপকাঠির বিচার শিল্পকর্মের বিষয়ের উপর নির্ভরশীল নয়, কাজের গুণমানই মূল। পরবর্তী প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে উদ্যোগী সংস্থা বা শিল্পীরা এ কথা মাথায় রাখলে মঙ্গল। শিল্পের শ্রেষ্ঠত্বর জন্য প্রয়োজন শুধু নিরন্তর চর্চার।
অতনু বসু
স্মরণীয় সঙ্গীতসন্ধ্যা
হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া
সঙ্গীত কলা মন্দিরের ৭৩তম বর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে এক সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে।
সুমিষ্ট রাগ মধুবন্তী দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া।
সুরবিস্তারের প্রতিটি মোচড়ে তাঁর অভিজ্ঞতাঋদ্ধ বাদনশৈলীর পরিচয় পেলেন শ্রোতারা। মধুবন্তীর পরে শোনালেন ইমন। তিনতালে নিবদ্ধ কম্পোজ়িশনটি ছিল চমৎকার। সবশেষে তিনি বাজালেন রাগ শিবরঞ্জনী। দাদরায় বাঁধা এই কম্পোজ়িশনটিও মন্দ লাগেনি। কিন্তু কোথায় যেন একটু অপূর্ণতা থেকে গেল পণ্ডিতজির বাদনে। বাঁশির মতো বাদ্যযন্ত্র, যেখানে শ্বাসাঘাতই মূল কথা, সে ক্ষেত্রে পণ্ডিতজির বয়স একটা বড় অন্তরায়। শ্বাস ধরে রাখতে না-পারলে সুর বেপথু হবেই। সে দিনের অনুষ্ঠানে তেমনটাই ঘটেছে। পণ্ডিতজির সঙ্গীতবোধ প্রশ্নাতীত, কিন্তু শরীর সঙ্গ না দিলে উপস্থাপনায় খামতি থাকবেই। তাঁর বর্ণময় উপস্থিতি সেই খামতিটুকু ঢেকে দেয় ঠিকই, কিন্তু সুরসন্ধানীরা হতাশ হন।
শিল্পীকে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, পাখোয়াজে ভবানী শংকর এবং তবলায় শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পীর সঙ্গে তাঁদের তালমেল প্রশংসনীয়। বংশীবাদনে শিল্পীকে সঙ্গ দিয়েছেন দেবপ্রিয়া রণদিবে। বাঁশিতে তাঁর নিয়ন্ত্রণ চমৎকার। পরিচ্ছন্ন সুরবিন্যাসে বর্ষীয়ান শিল্পীকে আগাগোড়া সহযোগিতা করে গেলেন দেবপ্রিয়া।
চিত্রিতা চক্রবর্তী
সুন্দর উপস্থাপনা
৫ এপ্রিল ২০১৮ বিড়লা অ্যাকাডেমিতে সোনার তরী কলাকেন্দ্র আয়োজিত রবীন্দ্রসজ্জা ‘শেষ বসন্তে’ পরিবেশিত হল।
রবীন্দ্রনাথের বসন্তের গানের ডালি নিয়ে একে একে শিল্পীরা গান গাইলেন। সুতপা হালদারের কণ্ঠে ‘চৈত্র পবনে’ গানটি সুগীত। ‘এ বেলা ডাক পড়েছে’ গানটি সুন্দর পরিবেশন করেন অঞ্জলি গঙ্গোপাধ্যায়। এ দিনের ‘ঝরা পাতা গো’ ও ‘দিয়ে গেনু বসন্তের’ গান দু’টি মন ছুঁয়ে যায়।
‘পুরাতন কে’ গানটি খুবই কম শোনা যায়। এই পরিবেশনের জন্য ঝিমলি চক্রবর্তী ধন্যবাদের যোগ্য।
অনুষ্ঠানে সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধিত হন অধ্যাপক সমরেন্দ্রনাথ বর্ধন ও কবি-সাহিত্যিক বরুণ চক্রবর্তী। আগামী দিনে আরও ভাল কাজ করার উৎসাহ দেন তাঁরা।
সমগ্র অনুষ্ঠানে আয়োজকদের নিষ্ঠা ও যত্নের পরিচয় স্পষ্ট।
আয়োজকের কাছে তবুও একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। গানের মান বজায় রেখেও শিল্পীসংখ্যা কি কমানো যায় না? আর শেষ বসন্তের অনুষ্ঠানে ‘নুপূর বেজে যায়’ গানটি শিল্পী কেন নির্বাচন করলেন?
সমগ্র অনুষ্ঠানে যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পীরা ও শিশু আবৃত্তিশিল্পী প্রশংসাযোগ্য।
শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়
অনুষ্ঠান
• সম্প্রতি বেহালার শরৎ সদনে আয়োজিত হল দশ দিন ব্যাপী এক নাট্যোৎসবের। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব পশ্চিম-এর ‘এক মঞ্চ এক জীবন’, রঙ্গলোক-এর ‘হন্তারক’, বাঘাযতীন আলাপ-এর ‘গয়নার বাক্স’, কলকাতা রঙ্গিলা-র ‘অটো’। এ ছাড়াও সেখানে মঞ্চস্থ হয়েছিল কোরাস কলকাতা-র ‘বন্ধের ১০ দিন’, অযান্ত্রিক-এর ‘প্রথম পাঠ’, নান্দীকারের ‘ব্যতিক্রম’, বেলঘরিয়া অভিমুখ-এর ‘কোজাগরী’, চাকদহ নাট্যজন-এর ‘তিনমোহনা’
এবং চেতনা-র ‘ডন’ নাটকটি। দশ দিন ব্যাপী এই নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছিল সাবর্ণ নাট্যোৎসব।