বাঘ দেখতে তাড়োবা

মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে পুরনো টাইগার রিজার্ভ তাড়োবা। বর্ষাতেও বেশ কিছুদিন খোলা থাকে এই জঙ্গল। বাঘ ছাড়াও অন্যান্য পশু পাখি, অসংখ্য গাছ, মনোরম ল্যান্ডস্কেপ নিয়ে তাড়োবা এক কথায় অপরূপ!মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে পুরনো টাইগার রিজার্ভ তাড়োবা। বর্ষাতেও বেশ কিছুদিন খোলা থাকে এই জঙ্গল। বাঘ ছাড়াও অন্যান্য পশু পাখি, অসংখ্য গাছ, মনোরম ল্যান্ডস্কেপ নিয়ে তাড়োবা এক কথায় অপরূপ!

Advertisement

ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share:

বাঘ না দেখে মহারাষ্ট্রের তাড়োবা় আন্ধেরি টাইগার রিজার্ভ থেকে ফিরে এসেছেন, এমন লোক কমই আছেন। এখানে হামেশাই দেখা যায় পর্যটক ভর্তি সাফারি জিপের সামনে বাঘিনী তার ছানাদের নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, কখনও রাস্তা পার হতে গিয়ে বাঘ দাঁড়িয়েও যান। কখনও হয়তো রাজকীয় কায়দায় তিনি মাথা ঘুরিয়ে দেখেন পর্যটকদের। বুঝতেই পারছেন, ওয়াইল্ড লাইফ ফোেটাগ্রাফারদের জন্য বাঘের ভাল ছবির শট নেওয়ার তাগিদে তাড়োবা নিঃসন্দেহে উপযুক্ত জায়গা।

Advertisement

তাড়োবা় আন্ধেরি টাইগার রিজার্ভ, মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও পুরনো টাইগার রিজার্ভ। এক সময় এই জঙ্গলে বাঘ শিকার বৈধ ছিল। কিন্তু ১৯৩৫ সালের পর শিকার নিষিদ্ধ হয়। এর কুড়ি বছর পর, ১৯৫৫ সালে এই অরণ্য সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৮৬ সালে এর ঠিক পাশেই ‘আন্ধেরি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি’ তৈরি হয়। ১৯৯৫ সালে তাড়োবা ন্যাশনাল পার্ক ও ‘আন্ধেরি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি’ একসঙ্গে করে নাম হয় তাড়োবা আন্ধেরি টাইগার রিজার্ভ। বর্ষায় যেখানে অন্যান্য অভয়ারণ্য বন্ধ থাকে, সেখানে এই জঙ্গল ২৯ জুন অবধি খোলা থাকে। বর্ষায় ওয়াইল্ড লাইফ চর্চা করার ইচ্ছে থাকলে চলে যান তাড়োবায়। এই সময় জায়েন্ট উড, সিগনেচার উড, রেড উড স্পাইডার এবং কোবরারও (গোখরো/ কেউটে) এখানে দেখা মেলে।

অক্টোবর থেকে নভেম্বর ও মার্চ থেকে মে হল এই অভয়ারণ্যে বাঘ দেখার জন্য পারফেক্ট সময়। অক্টোবরে তাড়োবার জঙ্গল সবুজে ভরে থাকে। জঙ্গলে পলাশ ফুলের আগুন-খেলা দেখতে গেলে অবশ্যই যেতে হবে মার্চ মাসে। ২০১৬-র গণনা অনুযায়ী এখানের বাঘের সংখ্যা প্রায় ৮৮টি। বাঘ ছাড়াও এই অভয়ারণ্যে দেখা যায় ইন্ডিয়ান লেপার্ড, ওয়াইল্ড ডগ, হায়না, হরিণ, লেঙ্গুর, নীল গাই, অ্যানটিলোপ, প্যাঙ্গোলিন, সোনালি শেয়াল ইত্যাদি। এ ছাড়া আছে সার্পেন্ট ঈগল, গ্রে হেডেড ফিশিং ঈগল, হানি বাজার্ডের মতো শিকারি পাখি। দেখতে পাওয়া যায় লম্বা লেজওয়ালা দুধরাজ পাখিও। পাশাপাশি আছে বিভিন্ন ধরনের গাছ। গাছ, পাখি, বন্যপ্রাণ, মার্শল্যান্ড, হ্রদ নিয়ে তাড়োবার ল্যান্ডস্কেপ মনোরম। ক্যামেরার শাটার থেকে হাত সরাতে ইচ্ছে করবে না।

Advertisement

তাড়োবা। এই নামের পিছনে একটা পৌরাণিক কাহিনিও আছে। কথিত আছে, ভগবান তাড়ুর নাম থেকে এই জঙ্গলের নাম তাড়োবা। শোনা যায়, তাড়ু ছিলেন এখানকার আদিবাসী গ্রামের গ্রামপ্রধান। বাঘের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণ দেন তাড়ু। এই মৃত্যু তাঁকে মানুষের কাছে ভগবান বানিয়ে দেয়। তাড়োবা লেকের কাছে তাড়ু দেবতার মন্দিরও আছে। এই ঠাকুরের পুজো ও মেলা দেখতে হলে আসতে হবে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। এই অভয়ারণ্যে জঙ্গল সাফারির সময় প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা অবধি এবং বিকেল ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা অবধি।

তাড়োবায় থাকার জন্য বেশ কিছু বেসরকারি লজ ও হোটেল আছে, আছে মহারাষ্ট্র ফরেস্ট ডেভেলপমেন্টের লজও। তাড়োবা এখন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় টাইগার রিজার্ভ। সিজনে বেশ ভিড় থাকে পর্যটকদের। তাই তাড়োবা ভ্রমণের ইচ্ছে থাকলে প্ল্যান করুন ক’মাস আগে থেকেই।

আরও পড়ুন:অমরনাথের পথে

কীভাবে যাবেন

ট্রেনে - তাড়োবার সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন হল নাগপুর ও চন্দ্রপুর। হাওড়া-পুেণ দুরন্ত এক্সপ্রেস, গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস, কর্মভূমি এক্সপ্রেস, ইত্যাদি ট্রেনে হাওড়া থেকে নাগপুর যাওয়া যাবে। অথবা হাওড়া থেকে শতাব্দী, রাজধানী ইত্যাদি ট্রেনে চন্দ্রপুর হয়ে যাওয়া যায়। নাগপুর স্টেশন থেকে তাড়োবার দূরত্ব ১৫১ কিমি। আর চন্দ্রপুর থেকে ৪৯ কিমি। তাই চন্দ্রপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই ভাল।

বিমান - কাছাকাছি বিমানবন্দর নাগপুরের ড. বাবাসাহেব অম্বেডকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে তাড়োবা যেতে লাগে তিন ঘণ্টা।

বাস - চন্দ্রপুর ও চিমুর থেকে তাড়োবা যাওয়ার জন্য বাস সার্ভিসও আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন