প্র: বাচ্চাদের সর্দিকাশি, গলা খুশখুশ লেগেই থাকে। এ রকম ঘন ঘন ঠান্ডা লাগলে তো মুশকিল। কী করব?
উ: এর জন্য বেশির ভাগ সময় বড়রাই দায়ী। বড়দের লাইফস্টাইলের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়েই ছোটদের এই অবস্থা।
প্র: এখানে আবার লাইফস্টাইল এল কী করে?.
উ: এখনকার অনেক সমস্যাই লাইফস্টাইলের জন্য। সে জন্য ওষুধেও পুরোপুরি সারবে না যতক্ষণ না আপনি লাইফস্টাইল বদলাচ্ছেন।
প্র: তা এখানে কোন লাইফস্টাইল গণ্ডগোল পাকাচ্ছে?
উ: সপ্তাহের শেষে এখন বেড়াতে যাওয়ার জায়গা শপিং মলগুলো। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাচ্চারাও সারা দিন রাস্তাঘাটে ঘুরছে, মোবিল-পেট্রোলের ধোয়া খাচ্ছে, সঙ্গে বাইরের জাঙ্কফুড তো আছেই। তার থেকেই সমস্যা তৈরি হয়।
প্র: তাতে কী সমস্যা?
উ: শপিং মলের ঠান্ডা, সেখান থেকে বাইরের গরমে আসা, সঙ্গে ক্রস ভেন্টিলেশন মানে একটা বদ্ধ জায়গায় এত লোকের শ্বাস-প্রশ্বাস সব মিলিয়ে চট করে বাচ্চাদের ইনফেকশন হয়ে যায়। তার থেকেই ঠান্ডা লেগে যায়। তার ওপর ঘুরতে ঘুরতে অনেকক্ষণ পেট খালি, রাতে খেতে দেরি, ঘুমোতে দেরি সব মিলিয়ে অ্যাসিড হয়ে যায়। তার থেকেই গলার সমস্যা। দেখবেন বাচ্চার গলা চুলকোচ্ছে, বমি করছে।
প্র: অ্যাসিডিটি থেকে গলার সমস্যা!
উ: আকছার হয়। পেটের অ্যাসিড ওপরে উঠে এসে স্বরযন্ত্রে আক্রমণ করে। তার থেকে গলা ধরা, গলা খুশখুশ, ঘন ঘন কাশির মতো নানা সমস্যা হয়।
প্র: তার মানে বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া যাবে না?
উ: তা যাবেন না কেন? বাচ্চাকে নিয়ে পার্কে যান, গঙ্গার ধারে যান। মানে খোলা জায়গায়। বাচ্চাকে সিনেমা হলের ভেতর নিয়ে যাবেন না। সেখানে অত ঠান্ডায়, এত জনের নিশ্বাস-প্রশ্বাস-এ ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ে। বাড়িতে কারও অ্যাজমা থাকলে এই সব বদ্ধ পরিবেশ থেকে বাচ্চারও অ্যাজমা হতে পারে।
প্র: কিন্তু সত্যি সত্যি ল্যারিংজাইটিস, ফ্যারিংজাইটিস বা টনসিলের মতো গলার সমস্যা তো হতেই পারে?
উ: সে ক্ষেত্রে সঙ্গে জ্বর হবে। কিন্তু জ্বর ছাড়া যদি দেখেন গলার এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে, তবে লাইফস্টাইলের কথা ভাবতে হবে।
প্র: লাইফস্টাইল ঠিক করলে সমস্যা মিটবে?
উ: একটা ঘটনা বলি। এক মহিলার গলা শুধু ধরে যেত। কিছুতেই সেটা সারছিল না। আসলে তাঁর শাশুড়ি কানে শুনতেন না বলে তাঁকে জোরে চেঁচিয়ে কথা বলতে হত। শাশুড়িকে হিয়ারিং এড পরানো হল। তাতে বৌমার গলা ধরা সারল। অনেক বড় বড় সমস্যার পেছনে থাকে ব্যবহারিক জীবনের এত সব ছোট ছোট কারণ।
প্র: সব ক্ষেত্রেই তো আর গলা ধরার সঙ্গে শাশুড়ির কানে না শোনার কারণ থাকে না?
উ: আসলে চেঁচিয়ে বলার জন্য গলা ধরে, মাথা ধরে, অযথা টেনশন হয়, ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। দেখবেন ক্লাসে চিৎকার করে পড়াতে পড়াতে চেহারা পর্যন্ত ভেঙে যায়। মাথা যন্ত্রণা, খিটখিটে ভাব চলে আসে।
প্র: কিন্তু পেশার খাতিরে স্কুল-কলেজে তো সেটা করতেই হয়। সেখানে তো আর এ সব বললে চলবে না?.
উ: সে ক্ষেত্রে দরকার মতো পড়ানোর সময় মাইক্রোফোনের ব্যবস্থা করলে গলাটা বাঁচে। নইলে চেঁচিয়ে পড়ানোর জন্য পরবর্তীতে পেশা ছাড়তে হয়েছে, এ রকম ঘটনা অনেক আছে।
প্র: বাচ্চার ঘন ঘন কাশি হতে থাকলে কী করব?
উ: কাশির ওষুধ খাইয়েও যদি না কমে তবে নাক পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। আসলে এ ধরনের যে কোনও সমস্যা বেশি দিন পুষে রাখা ঠিক নয়। সাইনাসের সমস্যা শুরু হয়ে যেতে পারে। অনেক দিন ধরে সর্দিতে ভুগলে কানেও কম শুনতে পারে।
প্র: বারবার সর্দি থেকে কানে ব্যথা?
উ: ঘন ঘন সর্দি-কাশি-জ্বর হতে থাকলে কানের পর্দার পেছনে শ্লেষ্মা জমে। তার থেকে বাচ্চা কানে কম শোনে। সাইনাসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
প্র: বাচ্চার কানে সমস্যা হচ্ছে বুঝব কী করে?
উ: ডাকলে প্রথমত সাড়া দেবে না। অনেক বাচ্চা দুষ্টুমি করেও এটা করে। তাই বাবা-মায়েরা ব্যাপারটা ধরতে পারেন না। যদি দেখেন বাচ্চা ক্লাসের পড়া ধরতে পারছে না, পিছিয়ে পড়ছে তবে কানটা দেখিয়ে নেবেন।
প্র: সাইনাসের সমস্যা বুঝব কী করে?
উ: বারবার সর্দি হবে, রং হলুদ হবে, নাক বন্ধ থাকবে। নাক থেকে পুরনো সর্দির দুর্গন্ধ পাবেন। কাশি থাকবে।
প্র: সাইনাস হলে বাড়িতে কী করব?
উ: স্যালাইন ন্যাসাল ড্রপ স্প্রে করে নাকে দিতে হবে। এ ছাড়া লিভোসেট্রিজিন জাতীয় সিরাপ খাওয়াবেন। সঙ্গে মরসুমি টাটকা সব্জি বেশি করে খাওয়াবেন। ঠান্ডা যেন না লাগে খেয়াল রাখবেন। বাচ্চার নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
একনজরে
• বাচ্চাকে নিয়ে খোলা জায়গায় বেড়াতে যান।
• বাচ্চা দীর্ঘ দিন সর্দিতে ভুগলে খেয়াল রাখুন ওর কানে শুনতে অসুবিধে হচ্ছে কি না।
• দীর্ঘ দিন চেঁচিয়ে কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
• নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন।
যোগাযোগ- ৯৮৩১০১০৯১৪