নান্দীপটের ‘কৃষ্ণপুরের রূপকথা’য় (নাটক: জ্যোতিস্মান চট্টোপাধ্যায়, পরিচালনা: বিমল চক্রবর্তী) আছে একটা ক্লিশে নীতিসার। অর্থই অনর্থ বা লক্ষ্মীর যমজই অলক্ষ্মী। কিন্তু এই কৃষ্ণরঙ্গনাট্যের প্রচ্ছন্ন বিষয় সমকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতা। স্বপ্নাদ্য গল্পে অসৎ যাঁরা তাঁরাই ধনী। অন্ধ লক্ষ্মী সৎ লোকেদের দেখতে পান না। গুরুর নির্দেশে গ্রামের সৎ গয়লা বৃন্দাবন লক্ষ্মীর পিছু নেয়, যখন তিনি এক অসতের বাড়ি যাওয়ার সময় পথ হারান। গুরু জটাইবাবা লক্ষ্মীর দৃষ্টি ফেরান এবং দেবী গরিব সৎ গয়লার বাড়িতে অধিষ্ঠিতা হন।
এর পরেই পরিবর্তনের পালা। আবির্ভূতা হন ভয়ঙ্করী অলক্ষ্মী, পরিবর্তনের আগে অত্যাচারী জমিদারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং লক্ষ্মীর আবাহনে সৎ দরিদ্র গ্রামবাসীদের সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছিল বৃন্দাবন, সঙ্গে ছিল দরিদ্র নির্লোভ বন্ধু, কিন্তু বৃন্দাবন এখন ধনী ও ক্ষমতাবান। বেছে বেছে নিজের অসৎ পেটোয়াদের লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাইয়ে দেয়। সৎ গ্রামবাসীদের লেঠেল দিয়ে তাড়ায়। দু’ঘণ্টা দর্শকমন মজে থাকে। কারণ প্রযোজনার পরিচ্ছন্ন আঁটসাঁট ঘটনাক্রম, নাটকের স্বচ্ছন্দ গতি এবং কমেডির জমাট মেজাজ। প্রধান চরিত্র দু’টি বিমল চক্রবর্তীর বৃন্দাবন ও বিপ্লব বিশ্বাসের জটাইবাবা। কিন্তু যার ঘুমে এই নাটক স্বপ্ন, সেই গোরা এই প্রযোজনার প্রাণ। কৃতিত্ব কমল চট্টোপাধ্যায়ের দাপুটে অভিনয়। বিপ্লব বিশ্বাস অনায়াস অভিনয়ে উত্তীর্ণ।
চার দিশারী
শতরূপা চক্রবর্তী
সম্প্রতি ওকাকুরা ভবনে বিধাননগর উপাসনার দশম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল ‘চার দিশারী’। অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্ত-দ্বিজেন্দ্রলাল-রবীন্দ্রনাথের সমমনোভাবাপন্ন গান ও আধুনিক কবিতার মেলবন্ধন। ভাষ্যপাঠে ছিলেন মধুমিতা বসু ও দিগন্ত বাগচি। ভাষ্যরচনা করেছেন নন্দিনী ভট্টাচার্য। অধিকাংশ গানই অবশ্য তিনি গেয়েছেন। যন্ত্রসঙ্গীতায়োজনে ছিলেন দেবাশিস সাহা। পরের পর্বে ছিল নৃত্যালেখ্য ‘আহা আজি এ বসন্তে’।
অনুষ্ঠান শেষ হয় মধুমিতা বসু ও বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর একটি শ্রুতিনাটক দিয়ে। মধুমিতা ও বিশ্বজিৎ দু’জনই অভিনন্দন পেয়েছেন শ্রোতাদের। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন রেশমি চট্টোপাধ্যায়।
এ কী সুন্দর শোভা
সারদা রামকৃষ্ণ মিশন আয়োজন করেছিল স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সুনন্দা ঘোষের একক। শিল্পীর কণ্ঠে প্রথম গান ভৈরবী রাগাশ্রিত ‘মহাসিংহাসনে বসি শুনিছ হে বিশ্বপিতা’। ধ্রুপদাঙ্গের এই গানটি একটি ভাবগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরবর্তী নিবেদন ‘এ কী সুন্দর শোভা’ ভূপালী রাগের উপর ত্রিতালের গানটিতে তাল, লয় ও ছন্দের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। ‘নাচ শ্যামা তালে তালে’, ‘মরণ রে তুহু মম’, ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’ ইমনকল্যাণ রাগে তেওড়া তালে এই গানটিও স্বরক্ষেপণ ও কণ্ঠমাধুর্যে বেশ সুন্দর। এছাড়াও ‘তোমারি তরে মা সঁপিনু এ দেহ’, ‘বাজাও রে মোহন বাঁশি’ এ দিনের শ্রেষ্ঠ নিবেদন।