হঠাৎ কারও কারও চেহারায় পরিবর্তন আসে। মানে ওজন বেড়ে যায়। ক’জনই বা তাই নিয়ে মাথা ঘামায়?
উ: ওজন বাড়ছে নাকি? খেয়াল রাখুন। ওজন বাড়ার সঙ্গে ক্যানসারের সম্ভাবনা আছে। সাধারণত মেনোপজের পর মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কে না চায় ওজন কমিয়ে নিজেকে আরও সুন্দর করে তুলতে?
উ: ওজন কমান। আরও সৌন্দর্য বাড়ান। কিন্তু তা করতে গিয়ে যেন হিতে বিপরীত না হয়ে যায়। আমার দেখা নানা অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথা বলি। নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখতে একজন মহিলা বিউটি পার্লারে গিয়ে যে পরিমাণ টাকা খরচ করেন তার মাত্র দশ শতাংশও নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করেন না। যে কোনও বয়সে ব্রেস্ট সোনোগ্রাফি বা পঞ্চাশ পেরোলে ম্যামোগ্রাফি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। ক’জন করেন? জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাবেন, আমরা তো সুস্থই আছি। বুঝুন এর জন্য মানসিকতারও কত বড় অভাব।
শুধু মহিলারা কেন? পুরুষদের ওজন বাড়লে সমস্যা হয় না?
উ: অবশ্যই হয়। পুরুষদের লাং ও প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। তা ছাড়া কী পুরুষ, কী মহিলা—সবারই কোলন আর রেক্টাল ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস থাকলে সোনায় সোহাগা। প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের সম্ভাবনাও থাকে।
ওবেসিটি শব্দটাই কি বিপজ্জনক, তাই না?
উ: হ্যা।ঁ ওটার সঙ্গে আবার যদি যোগ হয় প্রেসার ও সুগার।
ওবেসিটি কাটাবার সহজ সরল রাস্তাটা বলবেন?
উ: এমনিতেই চর্বি জাতীয় খাবার বা ‘স্মোকড ফুড’ দ্রুত ওবেসিটি ডেকে আনে। স্তন ক্যানসারের সংখ্যা তাই দ্রুত বাড়ছে। ওভারি বা ইউটেরাসের ক্যানসারও এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এর হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন কম পক্ষে আধ ঘণ্টা হাঁটুন। তা সম্ভব না হলে বাড়িতে ব্যায়াম করুন। ওজন আয়ত্তে থাকবে।
পুরুষরা সারা দিন দৌড়ঝাঁপ করছে, মহিলারাও তাই। এতেই তো অনেক ব্যায়াম হয়ে যায়।
উ: যা বলছি ওটা কিন্তু সেটা নয়। ব্যায়ামের জন্যই ব্যায়াম করতে হবে। আর এটা করছেন নিজেকে বাঁচাতে। তাগিদটা সে ভাবেই হওয়া উচিত।
অনেক মহিলা আছেন যাঁরা এমনিতেই চল্লিশের পর মোটা-সোটা হয়ে যান।
উ: তা হয়তো হয়। কিন্তু সেটাই বা হবে কেন? কোথাও শারীরিক ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। সে দিকে নজর থাকা উচিত।
শরীরে কোনও অসুবিধে নেই। দিব্যি চলছে। আলাদা করে কি আর সব সময় নজর দেওয়া যায়?
উ: কেন দেওয়া যাবে না? খাবারে তেল-মশলা কমাতে হবে। ফাস্ট-ফুড মাসে এক বারের বেশি নয়।
তার মানে যে কোনও মহিলারই চল্লিশ পেরোলেই বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে?
উ: হ্যা।ঁ বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে অন্য কারও ক্যানসার হয়ে থাকে তাঁদের সচেতনাটা আরও বেশি হওয়া উচিত। বিশেষ করে স্তন, ওভারি আর ইউটেরাস নিয়ে।
অনেকেরই এমন হয় কোনও না কোনও কারণে সাময়িক ওজন বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও বিপদের সম্ভাবনা?
উ: ব্যাপারটা আগে বুঝুন। আমরা ডাক্তারি ভাষায় বলে থাকি ‘বডি মাস ইনডেক্স’ বা বিএমআই কতটা বেড়েছে। রিপোর্টে তা ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে থাকলে তা স্বাভাবিক। ওই পরিমাণ ২৫ ছাড়ালেই আমরা সতর্ক করি। দ্রুত ওজন কমাতে বলি।
তার মানে সংখ্যাটা পঁচিশ ছাড়ালেই তা ওবেসিটি?
উ: না। তিরিশ ছাড়ালেই ওবেসিটি।
মোটা হওয়ার জন্য মহিলাদের নাকি এন্ডোমেট্রিয়াম ও ওভারির ক্যানসার বেশি হয়?
উ: সেটাই দেখা গেছে। আর সমস্যা হল ওভারিতে ক্যানসার হলে আগে থেকে তা বোঝা যায় না।
সে কি?
উ: হ্যা।ঁ খিদে কমে গেল, বমি বমি ভাব। অনেকেই মনে করেন হজমের গন্ডগোল। ওষুধও খেয়ে নিলেন। কিন্তু তলে তলে ক্যানসার আরও বাড়তে থাকে।
অনেকেরই শরীরের গঠন ঠিক আছে, অথচ পেটের আয়তন বাড়ছে। কেন?
উ: খিদে যদি না থাকে বা গ্যাস অম্বল হচ্ছে তা হলে এমন হয়। সাধারণ চিকিৎসায় দেখতে হবে তার প্রতিকার কতটা হল। না হলে ধরে নিতে হবে ওভারির টিউমারের জন্য এমন হচ্ছে। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। দেরি না করে আলট্রাসোনোগ্রাফিও করাতে হতে পারে।
কিন্তু মুশকিল হল বাড়ির মেয়ে বউরা চট করে আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে চায় না।
উ: বুঝলাম। কিন্তু সমস্যা তাঁদের আরও বেশি হয় যাঁদের ‘পোস্ট- মেনোপজাল’ ব্লিডিং ফের শুরু হয়। ইউটেরাস ক্যানসারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে তাঁদের সাবধান করার দায়িত্ব আপনার উপরেও বর্তাবে। আলট্রাসোনোগ্রাফিও করাতে হবে।