Mother Teresa

মানবতা সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিয়েছেন মাদার

দয়াদাক্ষিণ্যে আমি বড় একটা বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি না এতে সমাজবদল হয় বলে। চ্যারিটির মাধ্যমে তা হতে পারে না। বস্তুত, মাইক্রোস্কেলে সমাজ সংস্কার হতে পারে, এই ধ্যানধারণায় আমি বিশ্বাস করি না...করতাম না! লিখছেন আশিস নন্দী

Advertisement

আশিস নন্দী

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৭:২৫
Share:

দয়াদাক্ষিণ্যে আমি বড় একটা বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি না এতে সমাজবদল হয় বলে। চ্যারিটির মাধ্যমে তা হতে পারে না। বস্তুত, মাইক্রোস্কেলে সমাজ সংস্কার হতে পারে, এই ধ্যানধারণায় আমি বিশ্বাস করি না...করতাম না!

Advertisement

কিন্তু, প্রথম এই ধ্যানধারণা সম্পর্কে আমার সন্দেহ জাগে মাদার টেরিজাকে দেখার পর, তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কিঞ্চিৎ অবহিত হওয়ার পর। একটা মানুষ শহরের বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনাথকে, আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকা শিশুকে কোলে তুলে পরম মমতায় আশ্রয় দিচ্ছেন, হাতটা জোড় করা, একটু ঝুঁকে হেঁটে যাচ্ছেন মাদার— মানবতা সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টে যেতে লাগল।

আমি বিশ্বাস করে এসেছি, চ্যারিটি নয়, প্রাতিষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই উন্নয়ন হওয়া সম্ভব। কিন্তু মাদারকে দেখলাম, একটা মানুষ বাবা-মা ছেড়ে, দেশ ছেড়ে, নিজের নিশ্চিন্ত জীবন ছেড়ে এই কলকাতা শহরে এসে, স্বেচ্ছায় ত্যাগের জীবন বেছে নিয়েছেন। গ্রামে-গঞ্জে যাচ্ছেন, সহমর্মিতা দেখাচ্ছেন, মৃত্যুপথযাত্রীদের মানবিক মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন— এটা দেখাটাও একটা অভিজ্ঞতা।

Advertisement

আরও খবর- মাদার টেরিজা ঈশ্বরের এক প্রিয় মানুষ

এর মধ্যেই আমার চিরাচরিত ধ্যানধারণা একটু একটু করে পাল্টাতে থাকে যখন আমি বিশ্বজোড়া গণহত্যার (জেনোসাইড) উপর কাজ শুরু করি। দেখলাম, সেই ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে এই সাম্প্রতিক সময়কাল পর্যন্ত যা যা বিপ্লব হয়েছে, তার কোনও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়েনি। ফ্রান্সে গতানুগতিক ইম্পেরিয়াল পাওয়ার রয়ে গেল, যেমন, রাশিয়াও ফিরে গেল প্রিমিটিভ ক্যাপিটালিজমে।

আরও খবর- আস্তাকুঁড় থেকে ককপিটে মাদারের শিশু

বিশ্ব জুড়ে হিংসা ছড়াচ্ছে, নতুন হিংসা-সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। বিংশ শতাব্দীতে গোটা পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ২২ কোটি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া, নাৎসি জার্মানি ও চিন শীর্ষে রয়েছে। অকারণ নিষ্ঠুরতা বাড়ছে।

মাদারের প্রসঙ্গে কেন বিশ্বজোড়া নিষ্ঠুরতার কথা তুললাম? আসলে, এই নিষ্ঠুরতার মধ্যেই মাদারের মতো মানবতাবাদীর কথা বড় বেশি করে মনে হয়। সব ছাপিয়ে যাওয়া মানবতা ও করুণার অন্য এক রূপ চোখে পড়ে।

আরও খবর- ‘মেমোরিজ অব মাদার টেরিজা’

কলকাতায় দারিদ্র বেশি। অত্যাচার, অবিচারের মধ্যে গিয়ে ওই প্রান্তিক মানুষগুলোর জীবনযাত্রাকে ছোঁয়া— এটা এর আগে কেউ করেনি। মানুষ তা বুঝেওছিল। তাই মাদারকে মানুষ আলাদা ভাবে শ্রদ্ধা, সম্মান জানিয়েছে। কোথাও একটা বোধশক্তি এ ব্যাপারে কাজ করছিল। ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির হিসেব করেননি মাদার। ভাবেননি, তাঁর এই কাজের মাধ্যমে সমাজ কতটা পাল্টাবে। এরও তো একটা আলাদা মূল্য আছে!

আরও খবর- ও আলোর পথযাত্রী...

কমিউনিটি ভেঙে যাচ্ছে। হিংসা বাড়ছে। বাড়ছে নিষ্ঠুরতা। আর এরই মধ্যে মাদার যেন নীরব বিপ্লব করে গিয়েছেন। তাঁর সম্পূর্ণ অহিংস কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে মাদার যেন কোথায় আন সাং সু কি, নেলসন ম্যান্ডেলা এবং দলাই লামার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেলেন!

আরও খবর- শান্ত, সমাহিত মাদার হাউস মগ্ন দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে

আরও খবর- তিলোত্তমার মাদার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement