২০১১ সালের ২ এপ্রিল। দ্বিতীয় বারের জন্য এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিশ্বকাপ জেতে ভারত। শেষ হয় প্রায় ২৮ বছরের প্রতীক্ষা। ওয়াংখেড়ের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে ছয় উইকেটে হারিয়ে কাপ জেতে ভারত। অপরাজিত ৯১ রান করে ম্যাচের সেরা হন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
২০১১ সালের সেই দলের ১৫ সদস্যের ১৪ জনই ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। কেউ এসেছেন রাজনীতিতে, কেউ বা যুক্ত রয়েছেন ক্রিকেটের সঙ্গেই। কারা ছিলেন সেই ১৫ জনের দলে? এখন কী করছেন তাঁরা?
বীরেন্দ্র সহবাগ: ফাইনালে জ্বলে উঠতে পারেনি ডানহাতি ওপেনারের ব্যাট। মাত্র দু’বল খেলে কোনও রান না করেই আউট হয়ে যান তিনি। ২০১১ সালের পর থেকে ফর্ম খারাপ হতে থাকে সহবাগের। ২০১৩ সালে তিনি দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেন। ২০১৫ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সহবাগ। বর্তমানে তিনি ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করেন।
সচিন তেন্ডুলকর: ফাইনালে ১৪ বলে ১৮ রান করে লসিথ মালিঙ্গার বলে আউট হন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। ২০১২ সালে এক দিনের আন্তর্জাতিককে বিদায় জানান সচিন।
গৌতম গম্ভীর: দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর অন্যতম কারিগর। তাঁর ৯৭ রানের সৌজন্যে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায় ভারত। ২০১৪ সালে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন গম্ভীর। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সাংসদও হন। বর্তমানে গম্ভীর ভারতের কোচ হিসাবে কাজ করছেন।
বিরাট কোহলি: ফাইনালে ৩৫ রান করেন তরুণ কোহলি। গম্ভীরের সঙ্গে ভাল পার্টনারশিপ করেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী দলের একমাত্র ‘নট আউট’ সদস্য তিনিই। বিরাট বাদে ওই দলের সবাই অবসর নিয়েছেন। বিরাটও টেস্ট এবং আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসর নিয়েছেন।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি: বিশ্বকাপজয়ী দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ফাইনালে অপরাজিত ৯১ রান করে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের অগস্টে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’। বর্তমানে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলছেন তিনি।
যুবরাজ সিংহ: বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার। ব্যাটে-বলে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ কাঁপিয়েছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ফাইনালে দু’উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি অপরাজিত ২১ রানও করেন যুবরাজ। বিশ্বকাপের পর জানা যায়, তিনি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। পরে ভারতীয় দলে ফিরে এলেও পুরনো ফর্মে আর সে ভাবে তাঁকে দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।
সুরেশ রায়না: বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর তেমন কোনও ভূমিকা না থাকলেও পরের কয়েক বছর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের ভরসা ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে ধোনি ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করার কয়েক মিনিট পর তিনি অবসর নেন।
হরভজন সিংহ: বিশ্বকাপ ফাইনালে দিলশনের উইকেট নেন তিনি। ২০১৬ সালে ভারতের হয়ে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন হরভজন। ২০২১ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ডানহাতি অফস্পিনার। বর্তমানে তিনি ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করছেন।
জ়াহির খান: বিশ্বকাপ ফাইনালে দু’উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার। ভারতের পেস আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন তিনিই। ২০১৫ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। তার পর থেকে ক্রিকেট বিশষেজ্ঞ হিসাবে কাজ করছেন জ়াহির।
মুনাফ পটেল: উইকেট না পেলেও ফাইনালে ভাল বল করেছিলেন ডানহাতি পেসার। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের দলে থাকলেও ২০১২ সালের পর জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁকে আর দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মুনাফ।
শ্রীসন্থ: ভারতের হয়ে দু’টি বিশ্বকাপ জিতলেও ২০১৩ সালের আইপিএল ম্যাচ গড়াপেটায় নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তাঁর কেরিয়ার শেষ হয়। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ফিরে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ডানহাতি পেসার। ২০২২ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন শ্রীসন্থ।
আশীষ নেহরা: বিশ্বকাপের প্রথম একাদশে ছিলেন না বাঁহাতি পেসার। দল থেকে ছিটকে গেলেও ২০১৬-১৭ মরসুমে ভারতীয় দলে কামব্যাক করেন নেহরা। ২০১৭ সালে ফর্মে থাকা অবস্থাতেই অবসর নেন তিনি। বর্তমানে আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের কোচিংয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
ইউসুফ পঠান: ফাইনালের দলে ছিলেন না ইউসুফ পঠানও। জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্যও ছিলেন না তিনি। ২০১২ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষ বার মাঠে নামেন ইউসুফ। ২০২১ সালে অবসর নেন তিনি। বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ইউসুফ।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন: ২০১১ বিশ্বকাপের পরই মূলত কেরিয়ারে উত্থান ঘটে অশ্বিনের। টেস্টে তিনি ভারতের প্রথম পছন্দের স্পিনার হয়ে ওঠেন। ২০২২ এবং ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ খেললেও দলে নিয়মিত ছিলেন না অফস্পিনার। গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। তবে আইপিএল খেলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
পীযূষ চাওলা: ২০১১ বিশ্বকাপ খেললেও ২০১২ সালে শেষ বার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন এই লেগস্পিনার। আইপিএলে ভাল পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে আর ফিরতে পারেননি তিনি। সদ্য ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করলেন পীযূষ।