Mumbai's Last Hostage Situation

রাজ ঠাকরের উপর প্রতিশোধ নিতে যাত্রীবোঝাই বাস ছিনতাই! পরীক্ষা দিতে আসা বিহারি তরুণ ঝাঁঝরা হয়েছিলেন এনকাউন্টারে

২৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ খবর আসে যে ৩৩২ নম্বরের একটি দোতলা বাস কুরলা থেকে ছিনতাই করা হয়েছে। এক বন্দুকধারী তরুণ ১২-১৫ জন যাত্রী-সহ বাসচালক ও কন্ডাক্টরকে পণবন্দি করে ফেলেছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৫ ১২:০০
Share:
০১ ১৬

স্টুডিয়োর মধ্যে পণবন্দি করে রাখা হয়েছিল ১৭টি শিশুকে। মুম্বইয়ের পওয়াইয়ের বহুতলে অডিশন চলাকালীন আচমকা ওই স্টুডিয়োয় ঢুকে পড়েন রোহিত আর্য নামের এক তরুণ। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ৩০ অক্টোবর বহু শিশুই স্টুডিয়োয় জড়ো হয়েছিল। এদের মধ্যে ১৭ জনকে রেখে বাকিদের সেখান থেকে চলে যেতেন বলেন রোহিত।

০২ ১৬

দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ পণবন্দির খবর পায় মুম্বই পুলিশ। ১৭ জন শিশুকে পণবন্দি করে রোহিত ভিডিয়োবার্তায় হুমকি দেন, তাঁর দাবি না মানলে গোটা স্টুডিয়োয় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। শিশুদের মৃত্যু হলে তিনি দায়ী থাকবেন না বলেও জানিয়েছিলেন রোহিত।

Advertisement
০৩ ১৬

শিশুদের নিরাপদে উদ্ধার করতে অভিযানে নামে পুলিশ। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে স্টুডিয়োয় ঢোকে তারা। পুলিশকে দেখেই এয়ারগান থেকে গুলি চালাতে শুরু করেন অপহরণকারী। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশও। তখনই গুলিবিদ্ধ হন অভিযুক্ত যুবক। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় রোহিতের।

০৪ ১৬

ঠিক একই ধরনের পণবন্দি করার ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল বাণিজ্য নগরী। ২০০৮ সালে। দেশের ভয়াবহতম নাশকতা ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ঠিক কয়েক দিন আগে। এমনিতেই কুখ্যাত এই বছরটি ছিল রক্তাক্ত। বছরের শুরু থেকেই জয়পুর, বেঙ্গালুরু, অহমদাবাদ, নয়াদিল্লি এবং গুয়াহাটির মতো অনেক বড় শহরই ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল।

০৫ ১৬

বছরের শেষ দিক অবধি মোটামুটি শান্তিপূর্ণই ছিল মুম্বই। কিন্তু ২৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ খবর আসে যে ৩৩২ নম্বরের একটি দোতলা বাস কুরলা থেকে ছিনতাই করা হয়েছে। এক বন্দুকধারী তরুণ ১২-১৫ জন যাত্রী-সহ বাসচালক ও কন্ডাক্টরকে পণবন্দি করে ফেলেছেন।

০৬ ১৬

সেই সংবাদ ছড়িয়ে পড়তে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা হয় ভারত জুড়ে রক্তপাতের পর মুম্বইকে নিশানা করেছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। তত ক্ষণে খবর চাউর হয়ে গিয়েছিল। পুলিশের কাছে খবর আসে বাস ছিনতাইকারী মধ্যস্থতা করার জন্য সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চায়।

০৭ ১৬

মুম্বই পুলিশ জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষিত কমান্ডোদের একটি কুইক রেসপন্স টিম পাঠায়। দলটি অকুস্থলে পৌঁছে দেখে বাসছিনতাইকারী এক সাধারণ তরুণ। হাতে দেশি পিস্তল নিয়ে বাসের যাত্রীদের আটকে রেখেছেন তিনি।

০৮ ১৬

ছিনতাইকারী বিহারের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সি কুন্দন সিংহ ওরফে রাহুল রাজ। দেশি রিভলবার নিয়ে সাকি নাকায় ৩৩২ নম্বর বেস্ট বাসটি ছিনতাই করেন তিনি।

০৯ ১৬

মুম্বইয়ে রেলের পরীক্ষা দিতে আসা উত্তর ভারতীয়দের পরীক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরেকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন রাহুল। রাজের দলের কর্মীরাই এই হামলা করেন বলে দাবি ছিল রাহুলের।

১০ ১৬

পুলিশের বয়ান অনুসারে তীব্র যানজটের সময় রাহুল বন্দুক এবং লোহার শিকল বার করে কন্ডাক্টরের উপর চড়াও হন। বাসের ভিতরে গুলি চালাতে শুরু করেন। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেই অবস্থা সামাল দিতে পুলিশকেও গুলি চালাতে হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন যে তাঁরা ছিনতাইকারীকে মাঝেমাঝে জানলা দিয়ে তাঁর পয়েন্ট ৩১৫-বোরের রিভলবারটি রাস্তার দিকে তাক করতে দেখেন। কখনও কখনও উপরের ডেকে হাঁটাচলাও করতে দেখা গিয়েছিল এই তরুণকে।

১১ ১৬

পুলিশ ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে এলাকাটি ঘিরে রাখে। তার পর রাহুলকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। পুলিশের নির্দেশ না মানায় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মুম্বইয়ের প্রাণকেন্দ্রে ব্যস্ত সময়ে ঘটে যাওয়া এই এনকাউন্টারের কিছু বিবরণ অবশ্য ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে।

১২ ১৬

তৎকালীন পুলিশ আধিকারিকেরা দাবি করেছিলেন যে রাহুল বাসের ভিতরে পর পর তিনটি গুলি চালিয়েছিলেন। পরে প্রাথমিক বয়ান পরিবর্তন করে পুলিশ। সেই দাবি অনুযায়ী রাহুল গাড়ির চারপাশে থাকা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করেন। তাই ১২-১৫ জন ভীত-সন্ত্রস্ত যাত্রীকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে পুলিশ তাঁকে গুলি করে।

১৩ ১৬

এনকাউন্টারের পুরোভাগে থাকা মুম্বই পুলিশের এসিপি মহম্মদ জাভেদ সংবাদমাধ্যম জনিয়েছিলেন, তিনি বাসে উঠতেই বন্দুকধারী রাহুলকে দেখতে পান। এক যাত্রীর দিকে বন্দুক তাক করে ছিলেন তিনি। পুলিশ তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বললেও তিনি রাজি হননি। যাত্রীর জীবন বাঁচাতে পুলিশকে বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হয়েছিল।

১৪ ১৬

গুলি বিনিময়ের ঘটনায় মনোজ ভগৎ নামের এক যাত্রী আহত হন। সেই ঘটনাটি নিয়েও পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি যে কাদের গুলি লেগে ওই যাত্রী আহত হয়েছিলেন। তিন পুলিশকর্মীর ছোড়া ১৩টি গুলির মধ্যে ছ’টিতে রাহুল মারা যান।

১৫ ১৬

এই এনকাউন্টারের ফলে বিতর্কের সৃষ্টি হয় এবং বিহার ও মহারাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের মধ্যে তীব্র বাক্‌যুদ্ধ শুরু হয়। দলমতনির্বিশেষে বিহারের রাজনীতিবিদেরা এই এনকাউন্টারের নিন্দা করেন। অভিযোগ ছিল, মুম্বই পুলিশ রাহুল রাজকে জীবিত ধরার কোনও চেষ্টাই করেনি।

১৬ ১৬

পটনায় থাকা রাহুলের পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবেরাও ভাবতে পারেননি রাহুলের এই আচরণের কারণ। কেন চাকরির সন্ধানে মুম্বইয়ে আসা আপাত শান্ত এক্স-রে টেকনিশিয়ান হঠাৎ করে এই হঠকারী কাজটি করে বসেছিলেন তার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার মিলিন্দ ভরম্বে জানিয়েছিলেন, রাহুলের কাছ থেকে পুলিশ একটি ৫০ টাকার নোট এবং একটি ১০ টাকার নোট উদ্ধার করেছিল। নোটের উপর লেখা ছিল, ‘‘আমি কেবল রাজ ঠাকরেকে হত্যা করতে চাই, অন্য কাউকে নয়।’’

সব ছবি : সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement