Battle Of Galwan

কাঁটা লাগানো ব্যাটন নিয়ে ভারতীয় সেনার উপর হামলা! কী হয়েছিল গলওয়ানে? সলমনের ছবি নিয়েই বা বিতর্ক কিসের?

২০২০-এর ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল ভারতীয় সেনা ও চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)’। দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে ভারত-চিন সেনাবাহিনী এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৯
Share:
০১ ২২

২০২৬-এ মুক্তি পেতে চলেছে সলমন খানের ছবি ‘ব্যাটল অফ গলওয়ান’। ছবিমুক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন অভিনেতার অনুরাগীরা। সেই ছবির একটি ঝলক ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। তার পর সলমন-অনুরাগীদের মধ্যে যেমন আনন্দের ঢেউ উঠেছে, তেমনই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

০২ ২২

২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গলওয়ান উপত্যকায় প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে জড়ায় ভারতীয় এবং চিনা সেনা। সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করেই নাকি তৈরি হচ্ছে ‘ব্যাটল অফ গলওয়ান’ ছবিটি।

Advertisement
০৩ ২২

২০২০-এর ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল ভারতীয় সেনা ও চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)’। দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে ভারত-চিন সেনাবাহিনী এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।

০৪ ২২

২০২৫ সালের শেষে ‘ব্যাটল অফ গলওয়ান’-এর টিজ়ার মুক্তি পাওয়ার পর আবার সেই ঘটনা আলোচনায়। বিতর্কও তৈরি হয়েছে। কিন্তু কী নিয়ে এই বিতর্ক?

০৫ ২২

পাঁচ বছর আগে গলওয়ানে ভারত এবং চিনের সেনাদের মধ্যে যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছিল, সে সংক্রান্ত তথ্যের ‘ভুল উপস্থাপনা’ করা হয়েছে সলমনের সিনেমাটিতে— তেমনটাই দাবি তুলে সিনেমাটি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে চিন।

০৬ ২২

কিন্তু ওই সময়ে ঠিক কী হয়েছিল গলওয়ান উপত্যকায়? ২০২০ সালের ৬ জুন কোর কম্যান্ডার স্তরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এলএসি সংলগ্ন এলাকা থেকে বাহিনী কয়েক কিলোমিটার করে পিছিয়ে নেবে দু’দেশই। কিন্তু চিন কথা রাখেনি। সেনা সূত্রের খবর, প্রোটেক্টিভ পেট্রোল-১৪-এর (পিপি-১৪) পশ্চিম ঢালের নীচে যে অস্থায়ী শিবির তৈরি করে ফেলেছিল চিন, বৈঠকে হওয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তা সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল।

০৭ ২২

শিবির সরানো হয়েছে কি না, তা দেখতে ১৩ অথবা ১৪ জুন ছোট একটি টহলদার দল পাঠায় ভারতীয় সেনা। গলওয়ান ও শিয়োক নদীর সঙ্গমস্থলের পূর্ব তীরে ভারতীয় বাহিনীর যে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার, সেখান থেকেই পাঠানো হয়েছিল এই দল। দুই নদীর প্রশস্ত সঙ্গমস্থল পেরিয়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে পিপি-১৪।

০৮ ২২

সেই শিবিরের পিছনেই চিনা শিবির মাথা তুলেছিল অলক্ষে। অতএব ভারতীয় টহলদার দলকে সেখানে যেতে হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, চিন শিবির সরায়নি। ভারতীয় টহলদার দলটি তাদের জানায়, বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে চিনা বাহিনীর সরে যাওয়া উচিত। তখনই তাঁবু গোটানোর কাজ শুরু করে চিনা বাহিনী। ভারতীয় টহলদার দল ফিরে আসে।

০৯ ২২

পিপি-১৪-র অবস্থা দেখতে ১৫ জুন ফের টহলদার দল পাঠানো হয়েছিল। ১০ জনের সেই দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে, চিনা তাঁবু তখনও সরেনি। সে দিন বচসা শুরু হয় দুই বাহিনীর মধ্যে। চিনা সেনা সরতে রাজি না হওয়ায় ভারতীয় টহলদারেরা তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেন।

১০ ২২

কিন্তু আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে চিন সেখানে যে বড় বাহিনী তৈরি রেখেছিল, তা ভারতীয় টহলদারেরা বুঝতে পারেননি। সব দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় জনা দশেকের ভারতীয় দলটিকে। আটক করা হয় তাঁদের।

১১ ২২

এই ঘটনার খবর পেয়েই ১৬ বিহার রেজিমেন্টের কম্যান্ডিং অফিসার কর্নেল সন্তোষ বাবু (শোনা যাচ্ছে ‘ব্যাটল অফ গলওয়ান’-এ তাঁর চরিত্রেই অভিনয় করছেন সলমন) ৩০ জনের বাহিনী সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেন। চিনা শিবির পাহাড়ের ঢালের পিছনে হলেও পিপি-১৪-র শিখরে তখন মোতায়েন ছিলেন চিনা টহলদারেরা।

১২ ২২

খাড়াই বেয়ে পিপি-১৪-এর দিকে ভারতীয় বাহিনীকে উঠতে দেখে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন। আলোচনা করতে চাইলে যে কোনও এক জন আসুন— এমনই বার্তা দেওয়া হয় চিনের তরফে। কর্নেল সন্তোষ বাবু সে শর্ত মেনে নিয়ে বাহিনীকে দাঁড় করিয়ে দু’জন সঙ্গীকে নিয়ে পিপি-১৪-য় যান। কিন্তু আলোচনা সফল হয়নি।

১৩ ২২

ফলে কর্নেল ও তাঁর দুই সঙ্গী ফেরার পথ ধরেন। সে সময় পিছন থেকে তাঁদের উপর হামলা চালানো হয়। এর পরেই সংঘাত বাধে ভারতীয় এবং চিনের সেনাবাহিনীর। অভিযোগ, ভারতীয় সেনার সদস্যদের উপর লাঠি এবং কাঁটা লাগানো ব্যাটন দিয়ে হামলা চালায় পিএলএ সদস্যেরা।

১৪ ২২

সন্ধ্যার কিছু ক্ষণ পর থেকে চলা সেই সংঘর্ষ প্রায় ছ’ঘণ্টা চলেছিল। শ’তিনেক চিনা জওয়ানের সঙ্গে লড়তে হয় ভারতীয় সেনার জনা তিরিশেক জওয়ানকে। ফলে, ভারতের দিকে হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এর পরেই ভারত এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে শীতলতা দেখা দেয়, যা এখনও ১০০ শতাংশ স্বাভাবিক নয়।

১৫ ২২

২০২০ সালে গলওয়ানে ভারতীয় এবং চিনা সেনার সংঘাতে মৃতের সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। মারপিট ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর খবর জানানো হয় কেন্দ্রের তরফে। কিন্তু চিনের তরফে? আজ পর্যন্ত তা খোলসা করেনি বেজিং। প্রথমে কোনও হতাহতের কথাই স্বীকার করেনি চিন। পরে মাত্র চার জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

১৬ ২২

যদিও দাবি, প্রায় ৪০ জন জওয়ানকে সে দিন হারিয়েছিল পিএলএ। বেশ কয়েক জন ভারতীয় ও চিনা জওয়ান গলওয়ান নদীতে পড়ে গিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। তবে চিনের দাবি ছিল, ওই সংঘাতে মাত্র চার জন সেনা মারা গিয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে কেবল এক জন, জুনিয়র সার্জেন্ট ওয়াং ঝুওরানের জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। যদিও সঠিক সংখ্যাটি কখনও প্রকাশ্যে আসেনি।

১৭ ২২

গলওয়ান সংঘর্ষের দু’বছর পর অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্র ‘দ্য ক্ল্যাক্সন’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতীয় সেনার তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে ওই দিন গলওয়ান নদীতে ভেসে গিয়েছিলেন ৩৮ জন চিনা সেনা। পাশাপাশি ওই সংঘর্ষের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বেজিংয়ের তথ্য ও দাবিকেও অনেকাংশে অসত্য বলে দাবি করা হয় সেই প্রতিবেদনে।

১৮ ২২

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, সঙ্গীদের মৃত্যু দেখে ওই নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে দৌড়ে পালাতে শুরু করে চিনা সেনারা। অকুস্থল থেকে তিব্বতের মূল ভূখণ্ডে ঢুকতে পেরোতে হয় গলওয়ান নদী। পরিস্থিতি এমন হয় যে, ভয়ে দিশেহারা হয়ে পর্যাপ্ত সুরক্ষা না নিয়েই গলওয়ান নদীতে ঝাঁপ দেন বহু চিনা সেনা। খরস্রোতা পাহাড়ি নদীর ঢেউয়ের ধাক্কায় মুহূর্তে তলিয়ে যান ৩৮ জন সেনাকর্মী।

১৯ ২২

সেই গলওয়ান সংঘর্ষ নিয়েই নাকি তৈরি সলমনের ‘ব্যাটল অফ গলওয়ান’ ছবি। যদিও সেই ছবির ঝলক প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনা করে চিন সরকারের সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস অভিযোগ তুলেছে, ছবিটির সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। তাদের কথায়, ‘‘সিনেমার পর্দায় যতই বাড়িয়ে দেখানো হোক, ইতিহাস বদলাবে না। সার্বভৌম চিনা ভূখণ্ড রক্ষায় পিএলএ-র সংকল্পেও কাঁপন ধরবে না।’’

২০ ২২

সম্প্রতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একাধিক আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ সত্ত্বেও কাগজটি এ-ও দাবি করেছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার লাগোয়া গলওয়ান উপত্যকা চিনের এলাকাতেই পড়ে। তারা লিখেছে, ‘‘ভারতীয় সেনার কাজকর্মে সীমান্ত এলাকার স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। দুই দেশের সীমান্ত-সমঝোতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল নীতি লঙ্ঘন করেছে। ভারত হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখিয়েছে, তথ্যবিকৃতি এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে চিনা সেনার নাম কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে।’’

২১ ২২

সিনেমাকে, বিশেষ করে বলিউডের ছবিকে ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী আবেগ উস্কে দেওয়াটা ভারতের ‘সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরম্পরা’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

২২ ২২

ভারতের দাবি, শিল্পীর স্বাধীনতা আছে। সেই স্বাধীনতার জোরে চলচ্চিত্র পরিচালকদেরও ছবি বানানোর অধিকার আছে। এ দেশের সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘ছবি নিয়ে কারও কোনও উদ্বেগ থাকলে স্বচ্ছন্দে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়ে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। এই ছবিতে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement