Rio Grande Rise

৪০ কোটি বছরের ‘বুড়ো’ ডুবে যাওয়া দ্বীপে লুকোনো যকের ধন! কব্জা করলে চিনকেও টেক্কা দেবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ

২০১৮ সালে ব্রাজিলীয় এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ়ের আশপাশের সমুদ্রতলে গবেষণা চালাতে গিয়ে একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করেন। ভূ-ত্বকের নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এটি কোনও মালভূমির অংশ নয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ১২:১৫
Share:
০১ ১৬

আটলান্টিক মহাসাগরের ৬৫০ মিটার নীচে নিমজ্জিত আস্ত একটি দ্বীপ। দ্বীপটির নাম রিও গ্র্যান্ডে রাইজ়। রিও গ্র্যান্ডে এলিভেশন বা ব্রোমলি মালভূমি নামেও পরিচিত এটি। ইতিপূর্বে একে মালভূমি বলা হলেও সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্রাজ়িলের উপকূল থেকে বেশ কিছুটা দূরে দক্ষিণ আটলান্টিক সমুদ্রতলের অংশটি আসলে একটি দ্বীপের ধ্বংসাবশেষ।

০২ ১৬

২০১৮ সালে ব্রাজিলীয় এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ়ের আশপাশের সমুদ্রতলে গবেষণা চালাতে গিয়ে একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করেন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ফুট নীচে অস্বাভাবিক লাল মাটির স্তরগুলি তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই ভূ-ত্বকের নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এটি কোনও মালভূমির অংশ নয়। বরং ৪০ কোটি বছর আগে আটলান্টিকের বুকে জেগে থাকত এই দ্বীপ।

Advertisement
০৩ ১৬

নতুন তথ্যটির সন্ধান পাওয়ার পর কেটে গিয়েছে সাত বছর। রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ়ের নাম আবারও বিশ্বব্যাপী মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কোনও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকে রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ় নিয়ে বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়েছে।

০৪ ১৬

‘আরআরএস ডিসকভারি’ এবং আলফা ক্রুসিসে সমুদ্র অভিযানের সময় গবেষকেরা লাল কাদামাটির অস্বাভাবিক স্তরটি দেখে তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের সমুদ্রবিজ্ঞান কেন্দ্রের সামুদ্রিক ভূ-তত্ত্ববিদ ব্রামলি মুর্টন সেই অভিযানের সদস্য ছিলেন। তিনি জানান, মাটির নমুনা পরীক্ষা করার পর তাঁরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ভূ-ত্বকের সঙ্গে এর সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন।

০৫ ১৬

এই মাটির স্বতন্ত্র খনিজ গঠন শুধুমাত্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের তাপ, আর্দ্রতা ও খোলা বাতাসের সংস্পর্শের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে। ধারাবাহিক গবেষণাটির সর্বশেষ ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে ব্রাজিলের উপকূল থেকে ১,২০০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের এই অংশটি কোটি কোটি বছর আগে একটি দ্বীপ ছিল। এই লাল কাদামাটিতে কাওলিনাইট, হেমাটাইট এবং গোয়েথাইট জাতীয় খনিজের হদিস পাওয়া গিয়েছে।

০৬ ১৬

এই ধরনের খনিজের জন্মই হয় উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি রাসায়নিক আবহবিকারের কারণে। আগ্নেয়গিরির শিলা দীর্ঘ সময় ধরে বাতাস এবং বৃষ্টির সংস্পর্শে আসার ফলে খনিজ উৎপন্ন হয়। এই খনিজ পদার্থগুলির মধ্যে থাকা কাওলিনাইট প্রসাধনী দ্রব্য, কাগজ, ওষুধ শিল্পে ব্যবহার হয়।

০৭ ১৬

অন্য দিকে, হেমাটাইট হল লোহার আকরিক। এটি প্রধানত ফেরিক অক্সাইড দিয়ে গঠিত। লোহার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল হেমাটাইট। লোহা এবং অন্যান্য ধাতুর উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি। ইস্পাত শিল্পে এর ব্যবহার বহুল।

০৮ ১৬

এই অঞ্চলটি টেলুরিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট এবং লিথিয়াম খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ বলে মনে করা হয়। লিথিয়াম হল রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরির মূল কাঁচামাল। ব্যাটারি থেকে শুরু করে মোবাইল, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিন গাড়ি সবেতেই কাজে লাগে লিথিয়াম আয়ন। লিথিয়াম ধাতুর তৈরি ব্যাটারি বৈদ্যুতিন গাড়িতে অপরিহার্য।

০৯ ১৬

তাই এই খনিজ পদার্থগুলির ব্যবসায়িক মূল্য নির্ধারণ করতে পারার পর এর মালিকানা কব্জা করার জন্য কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজ়িল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সে দেশের সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে আবেদন করে, যাতে দেশের সামুদ্রিক সীমানা সম্প্রসারণ করা হয়। সেই দেশের মহাদেশীয় প্রান্তের অংশ (কন্টিনেন্টাল সেল্ফ), যেটি সমুদ্রের নীচে থাকে, তা বৃদ্ধি করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

১০ ১৬

মহাসাগরের তলদেশে নিমজ্জিত দ্বীপটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থিত। ব্রাজ়িলের ৩৭০ কিলোমিটার ‘একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ অনেক বাইরে অবস্থিত এটি। একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে উপকূলীয় দেশকে তার উপকূল থেকে ৩২২ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র থেকে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান এবং আহরণের একমাত্র অধিকার দেওয়া আছে।

১১ ১৬

রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ় থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য এই অঞ্চলটির উপর অধিকার কায়েম করা জরুরি। তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে ক্রমাগত দরবার করে চলেছে ব্রাজ়িল। ‘একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল’টির সম্প্রসারণের যোগ্যতা অর্জনের জন্য ব্রাজিলকে প্রমাণ করতে হবে যে ব্রাজ়িলের মতো একই ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ়।

১২ ১৬

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদ এবং গবেষণার সহ-লেখক লুইজি জোভানের দাবি, এই লাল কাদামাটি রাসায়নিক এবং খনিজ গঠনের সঙ্গে ব্রাজ়িল জুড়ে পাওয়া লাল মাটি বা টেরা রোক্সার বহুলাংশে মিল পাওয়া গিয়েছে। ভারতের ডেকান ট্র্যাপস এবং উত্তর আমেরিকার কলম্বিয়া নদী ব্যাসাল্ট গ্রুপে এই ধরনের নমুনার হদিস পাওয়া গিয়েছে। তবে ডুবে যাওয়া মহাসাগরীয় মালভূমিতে এই ধরনের আবিষ্কার প্রথম।

১৩ ১৬

রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ়ের ভবিষ্যৎ এখন বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সম্পদ আহরণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের হাতে ঝুলে রয়েছে। ব্রাজ়িলের দাবির সপক্ষে প্রমাণ দাখিল ও সেই সমস্যা সমাধানে বছরের পর বছর সময় লাগতে পারে। ব্রাজ়িল যদি রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ়ে একচেটিয়া প্রবেশাধিকার পেয়ে যায় তা হলে বিশ্বব্যাপী অপ্রচলিত শক্তি সরবরাহের ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন ঘটবে।

১৪ ১৬

সে ক্ষেত্রে লিথিয়াম সরবরাহের একচেটিয়া আধিপত্য হারাবে এশিয়ার চিন ও দক্ষিণ আমেরিকার তিন দেশ আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া এবং চিলি। কারণ বিশ্বের সমগ্র লিথিয়াম ভান্ডারের ৫০ শতাংশ পাওয়া যায় ওই মহাদেশের তিনটি দেশ থেকে। আবার ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা বিশ্বের লিথিয়াম ভান্ডারের ৭.৯ শতাংশ রয়েছে চিনে। আকরিক থেকে লিথিয়াম উৎপাদনেও অনেক এগিয়ে।

১৫ ১৬

শুধুমাত্র রিয়ো গ্র্যান্ডে রাইজ়ের উপর দাবি প্রমাণ করলেই ব্রাজ়িলের মোক্ষলাভ হবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। বরং এই দেশটি সমুদ্র তলদেশের পরিবেশ বাঁচিয়ে খনিজ উত্তোলন করতে পারবে কি না তা-ও প্রমাণ করতে হবে। কারণ অধিকাংশ পরিবেশবিদের আশঙ্কা, সমুদ্রের এই গভীরতায় খননকার্য চালাতে হলে তার বিপুল প্রভাব পড়বে সামুদ্রিক প্রাণী, ছত্রাক ও প্রবালের উপর।

১৬ ১৬

তা ছাড়া, বর্তমানে ব্রাজ়িলে কেবল স্থলভাগের খনির জন্য নিয়ম রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় সমুদ্রতলের খনির জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট কোনও আইন নেই।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement