কৃত্রিম মেধার দৌড়ে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকার মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি। মেটা, মাইক্রোসফ্ট থেকে শুরু করে গুগ্ল এবং অ্যাপল— সকলেই তাঁদের এআই টিমের জন্য সেরা প্রতিভা নিয়োগের চেষ্টা করছেন।
তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছে প্রযুক্তি দুনিয়ার মহারথী মার্ক জ়ুকেরবার্গের সংস্থা মেটা। আলেকজ়ান্ডার ওয়াং নামে এক ২৮ বছরের তরুণকে সংস্থার নতুন এআই অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করেছে মেটা।
মেটা মনে করছে, তাদের এআই প্রকল্পের জন্য সেরা প্রতিভা আলেকজ়ান্ডারই। তাঁর কাঁধে ভর করেই কৃত্রিম মেধায় শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে সংস্থা।
চলতি বছরের শুরুতে সংস্থার এআই অফিসার হিসাবে আলেকজ়ান্ডারকে নিয়োগ করেছে মেটা। লক্ষ্য, সংস্থার ‘সুপার ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রাম’কে আরও শক্তিশালী করা।
আলেকজ়ান্ডারকে মেটার পুরো এআই প্রকল্পের প্রধান করেন জ়ুকেরবার্গ। এমনকি, আলেকজ়ান্ডারের স্টার্ট-আপে ১৪৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগও করেন।
আলেকজ়ান্ডার বর্তমানে মেটার ‘সুপার ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রাম’-এ বিশেষজ্ঞদের দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। এমনকি, মেটার অন্যান্য এআই পণ্য এবং গবেষণাদলগুলিরও দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন আলেকজ়ান্ডার।
১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে নিউ মেক্সিকোর লস আলামোসে জন্ম আলেকজ়ান্ডারের। তাঁর বাবা নিউ মেক্সিকোর লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে পদার্থবিদ হিসাবে কাজ করতেন।
শৈশব থেকেই গণিত এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন আলেকজ়ান্ডার। ২০১৩ সালে গণিত অলিম্পিয়াডে যাওয়ার সুযোগ পান। ২০১৪ সালে মার্কিন পদার্থবিদ্যা দলেও ছিলেন তিনি।
লস আলামোস হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষে সিলিকন ভ্যালিতে চলে যান আলেকজ়ান্ডার। সেখানে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থার সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করেন। সফ্টঅয়্যার প্রোগ্রামার হিসাবেও কাজ করেন।
অল্প কিছু দিনের জন্য পৃথিবীর অন্যতম নামী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-তেও পড়াশোনা করেছিলেন আলেকজ়ান্ডার। কিন্তু ২০১৬ সালে ‘স্কেল এআই’ নামে একটি সংস্থা তৈরির জন্য এমআইটি ছেড়ে দেন।
কৃত্রিম মেধার জগতে অনেক কম বয়সেই হাত পাকিয়েছিলেন আলেকজ়ান্ডার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে কৃত্রিম মেধার স্টার্টআপ সংস্থা ‘স্কেল এআই’ শুরু করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্ধু লুসি গুয়ো।
‘স্কেলার এআই’কে নয়া উচ্চতায় নিয়ে যেতে দিনরাত পরিশ্রম করেছিলেন আলেকজ়ান্ডার এবং লুসি। সেই কঠোর পরিশ্রম সাফল্যও এনে দেয় তাঁদের। দ্রুত প্রযুক্তিশিল্পের তাবড় খেলোয়াড়দের নজর কেড়েছিল স্কেলার এআই। এমনকি, স্কেলার এআইকে দেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রকল্পে পরিবর্তনের কথা ভাবে বড় বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি।
এর পরেই জ়ুকেরবার্গের নজর পড়ে আলেকজ়ান্ডারের উপর। তরুণ প্রযুক্তিবিদকে মোটা বেতনের বিনিময়ে মেটায় নিয়োগ করেন তিনি।
আলেকজ়ান্ডার ইতিমধ্যেই মেটার এআই দল পুনর্গঠন শুরু করেছেন। দলটিকে চারটি ভাগে ভাগও করেছেন। সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের দাবি, কর্মীদের আরও মনোযোগ দিয়ে কাজ করার নিদান দিয়েছেন মেটার নবনিযুক্ত প্রধান এআই অফিসার।
উল্লেখ্য, কোভিড অতিমারির সময় কৃত্রিম মেধা সংস্থা ওপেনএআই-এর কর্তা স্যাম অল্টম্যানের সঙ্গে একই ঘরে থাকতেন আলেকজ়ান্ডার।
২৮ বছরের আলেকজ়ান্ডার বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম বিত্তশালীও বটে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত নামীদামি প্রযুক্তি সংস্থাগুলির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইওদের মধ্যে আলেকজ়ান্ডারও ছিলেন।
ট্রাম্পকে একটি চিঠিও লিখেছিলেন আলেকজ়ান্ডার। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমেরিকাকে অবশ্যই এআই যুদ্ধে জিততে হবে।’’ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামেও বক্তৃতা করেছেন আলেকজ়ান্ডার।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর মতো একাধিক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন আলেকজ়ান্ডার। কৃত্রিম মেধা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।
২০২৫ সালের জুনে আলেকজ়ান্ডারের সংস্থা স্কেল এআই-এর ৪৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় মেটা। তার পর থেকেই মেটার জন্য কাজ করছেন ২৮ বছর বয়সি তরুণ। স্কেলের সিইও হিসাবে পদত্যাগ করলেও এখনও সংস্থার পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন তিনি।