বিতর্ক শুরু হয়েছে কৌতুক অভিনেতা সময় রায়নার ইউটিউব শো ‘ইন্ডিয়া’জ় গট ল্যাটেন্ট’ নিয়ে। জনপ্রিয় ওই ইউটিউব শোয়ের মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে বিপাকে পড়েছেন সময় এবং ইউটিউবার রণবীর ইলাহাবাদিয়া। এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই পড়েছে। বিতর্কও তৈরি হয়েছে।
‘ইন্ডিয়া’জ় গট ল্যাটেন্ট’-এর সর্বশেষ ওই পর্বে সময় এবং রণবীর ছাড়াও বিচারকের আসনে ছিলেন জনপ্রিয় ইউটিউবার আশিস চঞ্চলানি, জসপ্রীত সিংহ এবং অপূর্বা মখীজা। তাঁদের সকলের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের হয়েছে।
‘ল্যাটেন্ট’-কাণ্ড নিয়ে যখন দেশ জুড়ে শোরগোল, তখন অপূর্বাকে নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। প্রশ্ন উঠেছে, কে এই অপূর্বা?
অপূর্বা এক জন ২৪ বছর বয়সি নেটপ্রভাবী। সমাজমাধ্যমে তিনি পরিচিত ‘দ্য রেবেল কিড’ নামে। ইনস্টাগ্রামে ‘কলেশি অউরত’ নামেও সমান জনপ্রিয় তিনি।
অপূর্বার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দিল্লিতে। পড়াশোনা জয়পুরের মণিপাল ইউনিভার্সিটি থেকে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিটেক করেছেন তিনি। পরে কর্মজীবনের জন্য মুম্বই চলে আসেন তিনি।
তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা বিভিন্ন ‘স্কিট’ এবং রিলগুলির জন্য ব্যাপক জনপ্রিয় অপূর্বা। সেই সব রিলে বিভিন্ন ধরনের ভাষা ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবন নিয়ে অকপট মন্তব্য করতে দেখা যায় তাঁকে।
মূলত কোভিড অতিমারির সময় খ্যাতি অর্জন করেন অপূর্বা। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লক্ষ।
ফ্যাশন এবং ট্র্যাভেল ভ্লগার হিসাবেও পরিচিতি পেয়েছেন অপূর্বা। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তি করে অনেক কাজও করেছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রচার করেছেন তাঁর ইনস্টা অ্যাকাউন্ট থেকে।
যে সব আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে অপূর্বা চুক্তি করে কাজ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে নাইকি, অ্যামাজ়ন, মেটা, মে বলিনের মতো নামীদামি ব্র্যান্ডও।
জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক পত্রিকার শীর্ষ ১০০ ডিজিটাল তারকার তালিকাতেও নাম তুলেছেন ‘দ্য রেবেল কিড’।
তবে এই প্রথম নয়, আগেও বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে অপূর্বাকে। কটুভাষা এবং অপশব্দ প্রয়োগের জন্য সমালোচিতও হয়েছেন একাধিক বার।
সম্প্রতি ‘দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি’ (ডিটিইউ)-র একটি অনুষ্ঠানে দর্শকদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।
ডিটিইউ-এর ‘আন্ডার ২৫ সামিট’-এ বক্তা হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন অপূর্বা। অনুষ্ঠান চলাকালীন একদল পড়ুয়া অপূর্বাকে দেখে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের নাম নিয়ে চিৎকার শুরু করেন। প্রাথমিক ভাবে কোনও উত্তর না দিলেও পরে রেগে যান অপূর্বা। এর পর দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ঘটনাটি সমাজমাধ্যম ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল।
এ বার সময়ের শোয়ে যোগ দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন তিনি। তবে এ বারের বিতর্ক আরও বড়। জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা এবং ইউটিউবারদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা এবং যৌনতাপূর্ণ বিষয়বস্তু প্রচার করার অভিযোগ উঠেছে।
বিতর্কের সূত্রপাত ইউটিউবের অনুষ্ঠান চলাকালীন রণবীরের এক মন্তব্যকে ঘিরে। ‘বিয়ারবাইসেপ্স’ নামে পরিচিত রণবীর। সময় সঞ্চালিত অনুষ্ঠানের মাঝে এক প্রতিযোগীকে রণবীর প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কি সারা জীবন ধরে প্রতি দিন নিজের বাবা-মাকে সঙ্গম করতে দেখতে চান, না এক বার যোগ দিয়ে তাঁদের সঙ্গম চিরতরে বন্ধ করতে চান? কোনটা বেছে নেবেন?’’
রণবীরকে ওই প্রশ্ন করতে শুনে চমকে যান সময়ও। প্রশ্ন করে বসেন, ‘‘এ সব কী হচ্ছে ভাই?’’ তবে থামানো যায়নি ‘বিয়ারবাইসেপ্স’কে। পরে ওই প্রতিযোগীকে যৌনাঙ্গের আকার নিয়েও প্রশ্ন করতে শোনা যায় তাঁকে। বাকি বিচারকেরা রণবীরের ওই সব প্রশ্ন শুনে হাসতে থাকেন।
রণবীরের সেই মন্তব্যের ভিডিয়ো দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। তাঁর প্রশ্ন অশালীন এবং আপত্তিকর দাবি করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে। সমাজমাধ্যমে রোষের মুখে পড়েন রণবীর। নেটাগরিকদের অনেকেরই দাবি, রণবীর দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে ওই মন্তব্য করেছেন।
নেটাগরিকদের সমালোচনার মুখে পড়েন সময়ও। শোয়ে ওই ধরনের কথাবার্তা বলার অনুমতি দেওয়া এবং যৌনতা প্রচারের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ভিডিয়োটি ইউটিউব থেকে সরানোরও দাবি ওঠে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় সময়, রণবীর, আশিস, জসপ্রীত এবং অপূর্বার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।
তবে তাঁর মন্তব্য নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন রণবীর। জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি স্বীকার করেছেন যে, তাঁর মন্তব্য অনুপযুক্ত এবং কোনও ভাবেই মজার নয়। ‘বিয়ারবাইসেপ্স’ বলেন, ‘‘আমার মন্তব্যটি শুধু যে অনুপযুক্ত ছিল তা-ই নয়, এতে মজাও ছিল না। আমি সে ভাবে কৌতুক করতে পারি না। আমি শুধু বলতে চাই যে আমি দুঃখিত।’’
রণবীর বিষয়টির গুরুত্ব বিচার না করার জন্যও ক্ষমা চেয়েছেন এবং অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যোগ করেছেন যে, কোনও পরিবারকে অসম্মান করা বা আপত্তিকর বিষয়বস্তু প্রচার করার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না।
অন্য দিকে, সময় ইতিমধ্যেই ল্যাটেন্ট শোয়ের সব ভিডিয়ো সরিয়ে দিয়েছেন ইউটিউব থেকে। তদন্তে তিনি সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন। অপূর্বা এবং আশিস বুধবার মুম্বই পুলিশের কাছে তাঁদের বয়ান রেকর্ড করিয়েছেন।
সূত্রের খবর, দুই জনপ্রিয় নেটপ্রভাবী পুলিশের কাছে তাঁদের বয়ানে জানিয়েছেন যে, ইউটিউবের ওই শো কোনও ভাবেই ‘স্ক্রিপ্টেড’ নয়। শোয়ে বিচারক এবং অংশগ্রহণকারীদের খোলাখুলি কথা বলতে বলা হয়।