Bajau Tribe

সমুদ্রে বাস, বহু ক্ষণ ডুবে থাকতে পারে জলের তলায়! অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী বাজাউরা যেন বাস্তবের ‘অ্যাকোয়াম্যান’

বাজাউ জনজাতির ছাতার তলায় আছে অনেকগুলো গোষ্ঠীর মানুষ। গোষ্ঠীগুলির নাম আলাদা। অনেক ক্ষেত্রে ভাষাও আলাদা। এরা সবাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাগরজলের বাসিন্দা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ১২:৩৪
Share:
০১ ১৮

ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে অনেক জনজাতির বাস। তাদের জীবনযাপনের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, খাবার, পোশাকে বিস্তর ফারাক। তবে এই সব জনজাতিই ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যে বিশেষ অবদান রাখে।

০২ ১৮

এই সব জনজাতির মধ্যে রয়েছে আসমাত, যারা ব্যতিক্রমী কাঠের খোদাই করা মূর্তি তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ। এ ছাড়াও রয়েছে তোরাজা, যারা তাদের জটিল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের জন্য বিখ্যাত।

Advertisement
০৩ ১৮

জনজাতিগুলি বহু বছর ধরে ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে বসবাস করছে। তবে সেখানে এমন এক জনজাতিও রয়েছে, যাদের জীবন জলকেন্দ্রিক। ওই জনজাতির মানুষেরা নিজেদের সঁপে দিয়েছেন সমুদ্রের কাছে।

০৪ ১৮

কথা হচ্ছে বাজাউ জনজাতির। কথায় আছে বাজাউ জনজাতির শিশুরা নাকি হাঁটতে শেখার আগেও শেখে সাঁতার কাটা, জলে ভাসা, আর সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ— সমুদ্রের গভীরে একদমে অনেকটা সময় ডুবে থাকা!

০৫ ১৮

বাজাউদের কাহিনি শুনে কল্পচরিত্র ‘অ্যাকোয়াম্যান’-এর কথা মনে আসবে। তবে গল্প বলে মনে হলেও বাজাউ জনজাতি বাস্তবে রয়েছে। জলের তলায় এত জন সুস্থ-সবল মানুষ দম নিয়ে যতটা সময় থাকতে পারে, এই জনজাতির মানুষেরা থাকতে পারে তার অন্তত দু’গুণ!

০৬ ১৮

বাজাউ জনজাতির ছাতার তলায় আছে অনেকগুলো গোষ্ঠীর মানুষ। গোষ্ঠীগুলির নাম আলাদা। অনেক ক্ষেত্রে ভাষাও আলাদা। এরা সবাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাগরজলের বাসিন্দা। ইন্দোনেশিয়া ছাড়়া মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, বোর্নিয়ো এবং তাইল্যান্ড ঘিরে যে জলরাশি, ওরা থাকে সেই জলের উপরে, নৌকায় বাসা বেঁধে।

০৭ ১৮

নৌকার উপরেই সংসার পাতেন বাজাউ জনজাতির মানুষজন। তবে রান্না, খাওয়া এবং ঘুম বাদে বেশির ভাগ সময় তাঁরা জলের তলায় থাকেন। বাজাউদের মূল পেশা মাছ শিকার। যুবকেরা নৌকা থেকে বর্শা ছুড়ে মাছ মারে। অনেকে আবার মাছ ধরতে সটান ডুব দেন জলের গভীরে।

০৮ ১৮

তবে নৌকা ছাড়াও ঘরবাড়ি থাকে বাজাউদের। সমুদ্র থেকে খাবার মিললেও জল পাওয়া যায় না। ফলে দ্বীপের গায়ে একটি করে বাড়ি বানিয়ে রাখেন তাঁরা। জলের জোগান ফুরোলে তা সঞ্চয় করতে গিয়ে কিছু সময় সেই বাড়িতে কাটান বাজাউরা। বাড়ির বয়স্কেরাও অবশ্য ওই ঘরগুলিতে থাকেন।

০৯ ১৮

কিন্তু কী ভাবে অত ক্ষণ জলের নীচে কাটাতে পারেন বাজাউ জনজাতির মানুষ? উত্তর, বিবর্তন। বিজ্ঞানীদের মতে, বিবর্তনের কারণে ওঁদের ফুসফুসের আকার সাধারণ মানুষের থেকে বড় এবং শক্তিশালী।

১০ ১৮

এ ছাড়াও ছোটবেলা থেকেই শরীর এবং মনকে সমুদ্রের নীচের জগতের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রশিক্ষণ নেন বাজাউ জনজাতির মানুষেরা।

১১ ১৮

ফলে ডুব দিয়ে অনেক বেশি সময় ওঁরা জলের তলায় থাকতে পারেন। গবেষকমহলের দাবি, যে কোনও সাধারণ মানুষ সঠিক অভ্যাসের মাধ্যমে জলের তলায় অত ক্ষণ সময় কাটানোর মতো দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন।

১২ ১৮

সমুদ্রের গভীরে ২৩০ ফুট পর্যন্ত ডুব দেওয়া কোনও ব্যাপার নয় বাজাউ জনজাতির শিশু এবং যুবাদের জন্য! তবে সমুদ্রের অতলে ডুব দেওয়ার সময় তাঁরা চোখে জলচশমার মতো একটা জিনিস পরে রাখেন। সমুদ্রের নীচে দেখতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে কারণেই ওই ব্যবস্থা।

১৩ ১৮

মাছ বা সামুদ্রিক প্রাণী শিকার করার জন্য সে রকম কোনও বিশেষ অস্ত্র ব্যবহার করেন না বাজাউরা। সামান্য বর্শা, জাল এবং ঝুড়ি দিয়ে মাছ ধরেন ওই জনজাতির মানুষেরা।

১৪ ১৮

বাজাউরা পরিচিত ‘সমুদ্র-যাযাবর’ নামেও। কারণ এদের নৌকা জলে কোথাও স্থির থাকে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্য জায়গায় গিয়ে ‘ঘর’ বাঁধেন তাঁরা।

১৫ ১৮

মনে করা হয় বাজাউদের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরোনো। ওই জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষেরা এক সময় নৌকায় বসবাসকারী যাযাবর ছিলেন। নৌকা নিয়ে সমুদ্রের বুকে অনেক দূরদূরান্ত পর্যন্ত পাড়ি দিতেন তাঁরা।

১৬ ১৮

দুর্ভাগ্যবশত আধুনিক বিশ্বে বাজাউদের অনন্য জীবনধারা বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং পরিবেশগত অবক্ষয় ওই সমুদ্রাঞ্চলের প্রবালপ্রচীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ফলে প্রভাবিত হচ্ছে বাজাউয়ের ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার ক্ষেত্রগুলিও।

১৭ ১৮

সরকারি বিধিনিষেধের কারণেও জীবনধারা বজায় রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে বাজাউদের জন্য। মাছ ধরার আধুনিকতম সাজসরঞ্জাম আর ‘ডিনামাইট ফিশিং’-এর মতো পদ্ধতির বহুল ব্যবহারে ওঁদের রোজকার রোজগার এখন বিপন্ন। সমুদ্রে অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং দূষণ বৃদ্ধির কারণেও জল ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে স্থলভাগে উঠে আসতে হচ্ছে তাঁদের।

১৮ ১৮

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাগরজলের বিভিন্ন জায়গায় বাজাউদের দেখতে পাওয়া গেলেও ওই জনগোষ্ঠী মূলত ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপপুঞ্জ এবং সুলু দ্বীপপুঞ্জে বাস করে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব সুলাওয়েসি, দক্ষিণ সুলাওয়েসি এবং উত্তর সুলাওয়েসির উপকূলীয় অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে তাঁদের।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement