কেউ কি কখনও নিজের দেশ তৈরির কথা কল্পনা করেছেন? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সেই কাণ্ডই করেন ২০ বছর বয়সি এক তরুণ। অবাস্তব এই ঘটনাকে ‘বাস্তব’ করে তোলেন তিনি।
ক্রোয়েশিয়া এবং সার্বিয়ার মধ্যে একটি বিতর্কিত এলাকা রয়েছে। নাম ‘ফ্রি রিপাবলিক অফ ভার্ডিস’। সেখানকার মানুষজন নিজেদের স্বঘোষিত দেশের বাসিন্দা বলে দাবি করেন। নিজেকে সে ‘দেশ’-এরই প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা করেন ড্যানিয়েল জ্যাকসন নামে ব্রিটেনের বাসিন্দা ওই তরুণ।
‘ফ্রি রিপাবলিক অফ ভার্ডিস’ নামে পরিচিত ওই ক্ষুদ্র এলাকার নিজস্ব পতাকা, মন্ত্রিসভা, এবং নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। প্রায় ৪০০ জন বাস করেন ওই এলাকায়।
ক্রোয়েশিয়া এবং সার্বিয়া— প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধের সময় জ্যাকসন দাবিদাওয়াহীন একটি জমি আবিষ্কার করেন, যা স্থানীয় ভাবে ‘পকেট থ্রি’ নামে পরিচিত ছিল। ১২৫ একরেরও কম জমির সেই বনভূমি দানিয়ুব নদীর তীরে অবস্থিত।
অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত জ্যাকসন পেশায় একজন ডিজিটাল ডিজ়াইনার। গেমিং প্ল্যাটফর্ম রবলক্সে ভার্চুয়াল জগৎ তৈরির কাজ করেন তিনি।
কিশোর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে ওই এলাকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন জ্যাকসন। পরবর্তী কালে সেই জমিকে স্বাধীন দেশ হিসাবে ঘোষণা করেন তিনি।
জ্যাকসনের কথায়, ‘‘ভার্ডিস আমার ১৪ বছর বয়সে দেখা একটি স্বপ্ন থেকে শুরু হয়েছিল। আমি এবং আমার বন্ধুরা অন্য রকম কিছু করতে চেয়েছিলাম।’’
মাত্র ১৮ বছর বয়সে পতাকা এবং মন্ত্রিসভা তৈরি করে ভার্ডিসকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে শুরু করেন জ্যাকসন। ‘দেশের’ জন্য নয়া আইনও চালু করেন। ঠিক করেন ‘ফ্রি রিপাবলিক অফ ভার্ডিস’-এর সরকারি ভাষা হবে ইংরেজি, ক্রোয়েশীয় এবং সার্বীয়।
‘ফ্রি রিপাবলিক অফ ভার্ডিস’-এ মুদ্রা হিসাবে ইউরো ব্যবহারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। সংবাদসংস্থা এসডব্লিউএনএস অনুসারে, জ্যাকসন ২০১৯ সালের ৩০ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভার্ডিসকে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রোয়েশীয় শহর ওসিজ়েক থেকে নৌকায় করে ওই বনভূমিতে পৌঁছোনোই ভার্ডিসে যাওয়ার একমাত্র উপায়।
তবে দেশ গড়তে ‘চ্যালেঞ্জ’-এর মুখোমুখিও হতে হয়েছিল জ্যাকসনকে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে, ক্রোয়েশীয় পুলিশ জ্যাকসন এবং তাঁর কয়েক জন সাঙ্গোপাঙ্গকে আটক করে নির্বাসনে পাঠায়।
সারা জীবনের জন্য তাঁদের ক্রোয়েশিয়া প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। জ্যাকসনের কথায়, ‘‘আমাদের কোনও কারণ ছাড়াই তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ওদের দাবি ছিল, আমরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’’
এখন নির্বাসিত অবস্থাতেই ‘দেশের জন্য’ কাজ করে চলেছেন বলে জানিয়েছেন জ্যাকসন। দূর থেকেই ভার্ডিস ‘পরিচালনা’ করছেন তিনি। তরুণের দাবি, ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে জ্যাকসন আরও বলেছেন, ‘‘আমার আশা, আমি এক দিন ঠিক ফিরে যাব। যদি সফল হই, তা হলে পদত্যাগ করে সঠিক নির্বাচনের আয়োজন করব। ক্ষমতার ব্যাপারে আমার কোনও আগ্রহ নেই, আমি কেবল একজন সাধারণ নাগরিক হতে চাই। যা তৈরি করেছি তা নিয়ে আমি গর্বিত।’’
জ্যাকসন জানিয়েছেন, ‘ফ্রি রিপাবলিক অফ ভার্ডিস’ মাত্র চার জন লোককে নিয়ে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন ‘নাগরিকের’ সংখ্যা ৪০০ জন। আরও হাজার হাজার মানুষ ‘নাগরিকত্ব’ পেতে আগ্রহী।
জ্যাকসনের কথায়, ‘‘আমরা ছোট দেশ। কিন্তু আইন নিয়ে সচেতন। ক্রোয়েশিয়া এই এলাকা দাবি করে না, তাই আমরা বিশ্বাস করি আমাদের এখনও সুযোগ আছে। এই বনভূমি বসবাসের যোগ্য করে তুলব আমরা।’’
উল্লেখ্য, জ্যাকসন নিজেকে ‘ফ্রি রিপাবলিক অফ ভার্ডিস’-এর প্রেসিডেন্ট হিসাবে দাবি করলেও বিশ্বের কোনও দেশ ভার্ডিসকে দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। স্বীকৃতি পাননি জ্যাকসনও।