সোমবার গভীর রাতে সাড়ে ৩টে নাগাদ (ভারতীয় সময় অনুসারে) সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে ইরান-ইজ়রায়েলের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের সেই দাবি উড়িয়ে দেয় তেহরান। যদিও ইরানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ নিজে থেকেই যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইরান।
তার পরেই মনে করা হচ্ছে সংঘাত শুরুর ১২ দিনের মাথায় শান্ত হতে পারে পশ্চিম এশিয়ার আকাশ। সংঘাত শুরুর পর থেকে জল্পনা উঠেছিল পরমাণু শক্তি নিয়ে তেহরানের বাড়বাড়ন্ত রোখার পাশাপাশি ইজ়রায়েলের লক্ষ্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে নিকেশ করা।
একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছিল, খামেনেই শাসনের বিভিন্ন স্তরে ইতিমধ্যেই উইয়ের মতো ঢুকে পড়েছেন ইজ়রায়েলি গোয়েন্দারা। ভিতর থেকে ফাঁপা করে দিচ্ছেন ইরানের শাসনব্যবস্থা। এমনকি, খামেনেইকে অপসারিত করে ইরানের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটানোর পরিকল্পনা চলছিল বলেও শোনা যাচ্ছিল।
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মন্তব্যও করেছিলেন যে, খামেনেইকে সরিয়ে দিলে চলতে থাকা সংঘাত বন্ধ হতে পারে। ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে খামেনেইকে ‘আধুনিক হিটলার’ তকমাও দিয়েছিলেন।
আর তাই যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইরানের অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে খামেনেইকে। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বাছাই করা কমান্ডোদের নিয়ে তৈরি বিশেষ সশস্ত্র বাহিনী।
৮৬ বছর বয়সি খামেনেই ১৯৮৯ সাল থেকে ইরান শাসন করছেন। ইরানে তাঁর কী ক্ষমতা, তা সারা বিশ্ব জানে। বলা যায়, তাঁর ভয়ে ইরানে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তেহরানের মধ্যাঞ্চলে ‘বেইট রাহবারি’ (নেতার বাড়ি) নামে একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত বাড়িতে থাকেন খামেনেই। সেখান থেকেই কাজ করেন। ওই বাড়ি ছেড়ে খুব কমই বাইরে যান।
ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্তা এবং সামরিক বাহিনীর প্রধানেরা সাপ্তাহিক বৈঠকের জন্য সাধারণত তেহরানের বাড়িতে গিয়েই খামেনেইয়ের সঙ্গে দেখা করেন। জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি ভাষণও দেন সেখান থেকেই।
ইরানীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছড়িয়েছিল, ইজ়রায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে ওই বাড়িতে আর সুরক্ষিত নন খামেনেই। যখন-তখন হামলা চলতে পারে তাঁর উপর। আর তাই তাঁর সুরক্ষার জন্য ওই বিশেষ বাহিনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম ‘ইউকে টেলিগ্রাফ’কে তেমনটাই জানিয়েছেন তেহরানের কর্মকর্তারা।
কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খামেনেই তেহরানের সেই বাড়ি ছেড়ে গোপন এক ডেরায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর। সেখানেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এখন ২৪ ঘণ্টা বাছাই করা কমান্ডোদের নিয়ে তৈরি বিশেষ সশস্ত্র বাহিনীর জিম্মায়।
ইরানের জরুরি যুদ্ধ পরিকল্পনার সঙ্গে ওয়াকিবহাল তিনটি সূত্রের মতে, বহিরাগত শক্তি যাতে সর্বোচ্চ নেতাকে খুঁজে পেতে না পারে, সে জন্যই তাঁকে ওই বিশেষ বাহিনীর দায়িত্বে রাখা হয়েছে।
ইরানের এক উচ্চপদস্থ কর্তা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘উনি (খামেনেই) মৃত্যুর ভয়ে লুকিয়ে নেই। উনি কোনও বাঙ্কারেও নেই। কিন্তু ওঁর জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং ওঁর সুরক্ষার জন্য একটি বিশেষ বাহিনী আছে। এই বাহিনীর অস্তিত্ব কেউ জানেন না। তাই সেই বাহিনীতে কোনও গুপ্তচর লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা নেই।’’
অন্য দিকে সূত্রের খবর, খামেনেইয়ের উপর প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে বলে জল্পনা ওঠার পর থেকেই নাকি সতর্ক হয়ে গিয়েছেন খামেনেই। এমনকি, বিশ্বস্ত সহযোগীদের সঙ্গেও নাকি যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। সমস্ত ইলেকট্রনিক যোগাযোগও বন্ধ রেখেছেন। এবং এই সব খামেনেই করেছেন তাঁর সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর কথা মেনে।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি বদলেছে। সংঘর্ষবিরতি নিয়ে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি পোস্ট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তৃতীয় পোস্টে তিনি লিখেছেন, “সংঘর্ষবিরতি এখন থেকে কার্যকর হচ্ছে। দয়া করে লঙ্ঘন করবেন না।”
সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েছিল ইজ়রায়েল। যদিও ইরান কিছু জানায়নি। দুই দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সংঘর্ষবিরতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে দুই তরফ থেকেই এখনও সরকারি সিলমোহর পড়েনি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কি খামেনেইয়ের মাথা থেকেও সঙ্কট কমবে? বিশেষ বাহিনীর হাত ছেড়ে কি আবার তেহরানের বাড়িতে ফিরে যাবেন তিনি? আপাতত সেই দিকেই নজর সারা বিশ্বের।