আর কে নারায়ণের ‘মালগুডি ডেজ়’-এর কথা মনে আছে? কোথায় সেই গ্রাম, লেখককে তার উত্তর দিতে হয়েছে শেষ জীবন পর্যন্ত। ‘পঞ্চায়েত’-এর ‘ফুলেরা’ গাঁও-ও ঠিক তেমন।
‘পঞ্চায়েত’ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ়। সেই সিরিজ়ের চতুর্থ সিজ়ন সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে। ওয়েব সিরিজ়ের প্রতিটি চরিত্র কৌতুক ও নাটকীয়তায় পূর্ণ। চরিত্রগুলি দর্শকের মন ছুঁয়ে গিয়েছে।
তবে, চরিত্রগুলিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য ‘ফুলেরা’ গ্রামের প্রভাব যথেষ্ট। বস্তুত, সিরিজ়ে এই গ্রামটিই যেন একটি চরিত্র। ফুলেরাবাসীদের সহজ-সরল জীবনযাপন ‘পঞ্চায়েত’-এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে।
গ্রামটির আঞ্চলিক অবস্থান নিয়েও কৌতূহল জেগেছে দর্শকের মনে। আদৌ এই গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে কি না, তা জানতে উৎসুক দর্শকমহল। নারায়ণের মালগুডি নিয়েও ছিল অনুরূপ কৌতূহল।
রাজস্থানের অজমের এবং জয়পুর শহরের মাঝে ফুলেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশন। এমনকি, দিল্লি-মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর প্রকল্প এই শহরের উপর দিয়েই গিয়েছে।
তবে ফুলেরা শহরের সঙ্গে ওয়েব সিরিজ়ে দেখানো গ্রামটির কোনও মিল নেই। মধ্যপ্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে শুটিং হয়েছে ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজ়ের চারটি সিজ়নের।
সমাজমাধ্যমের সৌজন্যে অনেকেই জানেন যে, গ্রামটির নাম ‘ফুলেরা’ নয়, সেহোর জেলার অন্তর্গত সেহোর শহর থেকে প্রায় ন’কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই গ্রামের নাম মহোদিয়া।
২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, মহোদিয়াও গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় পড়ে। ঠিক যেমন ওয়েব সিরিজ়ে দেখানো হয়েছে।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, মহোদিয়া গ্রামের জনসংখ্যা দু’হাজারেরও কম। সব মিলিয়ে ৩৭৫টি ঘর রয়েছে এই গ্রামে।
‘পঞ্চায়েত’-এর মুখ্যচরিত্র অভিষেক ত্রিপাঠী ওরফে জিতেন্দ্র এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ওই গ্রামে কোথাও থাকার জায়গা ছিল না। ফলে সেহোর শহরেই তাঁরা সকলে থাকতেন।
সরকারি ও বেসরকারি বাস পরিষেবা ছাড়াও রেলওয়ে পরিষেবা চালু রয়েছে, কিন্তু মহোদিয়া গ্রাম থেকে সবই রয়েছে পাঁচ থেকে দশ কিলোমিটারের দূরত্বে। ‘পঞ্চায়েত’ মুক্তির পর থেকে মধ্যপ্রদেশের গ্রামটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ইতিমধ্যেই এই গ্রামটিতে অনেকে বেড়াতেও গিয়েছেন।
তবে বর্তমানে মহোদিয়া গ্রামের অবস্থা শোচনীয়। আর সে কারণে বর্তমানে সমাজমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হচ্ছে গ্রামটির ছবি। সেই ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছে, প্রবল বৃষ্টিতে মহোদিয়ার বিভিন্ন রাস্তায় জল জমেছে। চারদিকে প্যাচপেচে কাদা।
গাড়ি চলাচল তো দূর অস্ত, কাদার কারণে মানুষের পক্ষে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি, পঞ্চায়েত অফিসের সামনের এলাকাও কাদায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে বলে সেই ছবিগুলিতে ধরা পড়েছে।
আর সেই ছবিগুলি ভাইরাল হওয়ার পর নেটাগরিকেরা এক দিকে যেমন বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, তেমন হাসির রোলও উঠেছে সমাজমাধ্যমে। ‘পঞ্চায়েত’-এর চতুর্থ সিজ়নে দেখানো হয়েছে, নির্বাচনে জিতে ফুলেরার পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছে ভূষণ ওরফে ‘বনরাকস’ চরিত্রটি।
নেটাগরিকদের একাংশ মজা করে লিখেছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে বনরাকস জেতার কারণে এই অবস্থা হয়েছে বাস্তবের ফুলেরার।’’ এক জন নেটাগরিক লিখেছেন, ‘‘দেখুন বনরাকস জয়ের পর কী হয়েছে! গ্রাম ডুবে গিয়েছে।’’ অন্য এক জন আবার লিখেছেন, ‘‘বনরাকস আসতেই ফুলেরা কাদায় পড়ে গেল।’’
অনেকে আবার মহোদিয়ার অবস্থা দেখে ক্ষোভপ্রকাশও করেছেন। এক নেটাগরিক লিখেছেন, ‘‘যা কিছু হয়ে যাক, গ্রামবাসীদের জীবন একই রয়ে যাবে। বাইরে থেকে মানুষ এসে শুটিং করে গ্রামকে জনপ্রিয় করছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের হেলদোল নেই।’’