গৌতম গম্ভীরের কোচিংয়ে দ্বিতীয় বার ঘরের মাঠে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হল ভারত। গত বছর নিউ জ়িল্যান্ডের পর এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। তার আগে ১২ বছর ঘরের মাঠে কোনও টেস্ট সিরিজ়ে হারেনি ভারত।
গুয়াহাটিতে বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দ্বিতীয় টেস্টে ৪০৮ রানে হেরেছে ভারত। সিরিজ়ে ভারতীয় দলকে হারতে তো হয়েছেই। একাধিক লজ্জার নজিরও গড়েছেন ঋষভ পন্থেরা। তার মধ্যে অন্যতম, রানের নিরিখে সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারতে হল ভারতকে। এ দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৩.৫ ওভারে ১৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত।
গুয়াহাটি টেস্টে ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল ৫৪৯ রানের। ভারত হেরেছে ৪০৮ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে রানের নিরিখে এটাই ভারতের সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার। আগের রেকর্ডটি ছিল ২০০৪ সালের। সে বার নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৪২ রানে হেরেছিল তারা। জেসন গিলেসপি এবং গ্লেন ম্যাকগ্রার বোলিংয়ের সামনে দুই ইনিংসেই গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত।
ভারতীয় দলের এই দুর্দশার দায় অবশ্য দলের কোচ গৌতম গম্ভীরের উপরেই বর্তাচ্ছেন ক্রিকেটমহলের একাংশ। অনেকে মনে করছেন, গম্ভীরের নেতিবাচক ভঙ্গি এবং নিয়মকানুনের কারণেই এই হাল ভারতীয় দলের।
এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় দলের কোচকে নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখন অনেকেই আবার হিসাব কষতে শুরু করেছেন গম্ভীরের হাতে থাকে মোট সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে। অনেকে আবার উঁকি মারতে শুরু করেছেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রিকেটার হওয়ার আগেও কোটিপতি ছিলেন গম্ভীর। দিল্লিতে তাঁর বাবার পোশাকের বড় ব্যবসা ছিল। কিন্তু ক্রিকেটে যোগদানের পর গম্ভীরের সম্পত্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪-২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, গৌতম গম্ভীরের আনুমানিক মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা।
বিসিসিআই থেকে গম্ভীর কত বেতন পান তা জানতে অনেকেই আগ্রহী। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে বিসিসিআই বার্ষিক ১৪ কোটি টাকা বেতন দেয় গম্ভীরকে।
এর অর্থ হল ভারতীয় কোচ হিসাবে প্রতি মাসে ১ কোটিরও বেশি বেতন পান গম্ভীর। অন্য দিকে প্রাক্তন কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে বিসিসিআই দিত বার্ষিক ১২ কোটি টাকা)।
খুব কম লোকই জানেন যে, বিসিসিআইয়ের সঙ্গে গম্ভীরের চুক্তিতে পারফরম্যান্স-ভিত্তিক বেতন, ভ্রমণ সুবিধা, একটি বিলাসবহুল বাড়ি এবং বিদেশ সফরের জন্য দৈনিক ২১ হাজার টাকা ভাতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিভিন্ন পণ্যের প্রচার করেও আয় করেন গম্ভীর। গম্ভীরকে র্যাডক্লিফ ল্যাবস, কয়েনডিসিএক্স, রিয়েল১১ এবং পিনাকল স্পেশালিটি ভেহিকলস-এর মতো ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাতে দেখা গিয়েছে। তবে এ ধরনের বিজ্ঞাপনী প্রচারের মাধ্যমে গম্ভীর ঠিক কত আয় করেন তা অজানা।
গম্ভীর যে বাড়িতে বাস করেন, তাকে প্রাসাদ বললেও কম বলা হবে। দিল্লির ওই বাড়ির বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা বলে জানা গিয়েছে। আবার কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়িটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫০ কোটি।
তবে ওই বাড়ি গম্ভীরের কেনা বা তৈরি করা নয়। কয়েক দশক আগে বাড়িটি কিনেছিলেন তাঁর বাবা। দিল্লি এবং আশপাশের শহরগুলিতেও গম্ভীরের বেশ কিছু সম্পত্তি রয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রেটার নয়ডার জেপি উইশ টাউনে ৪ কোটি টাকা মূল্যের এবং মালকাপুর গ্রামে ১ কোটি টাকা মূল্যের জমি রয়েছে গম্ভীরের।
বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়িও রয়েছে গম্ভীরের। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে অডি কিউ৫ এবং বিএমডব্লিউ ৫৩০ডি-র মতো গাড়ি। এ ছাড়া মারুতি সুজ়ুকি এসএক্স৪, একটি টয়োটা করোলা এবং একটি মাহিন্দ্রা বোলেরো স্টিঙ্গারও রয়েছে তাঁর কাছে।
সমাজমাধ্যম থেকেও প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন গম্ভীর। অন্তত ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা দেখে তেমনটাই মনে করা হয়। ইনস্টাগ্রামে গম্ভীরের অনুরাগীর সংখ্যা ১ কোটি ১২ লক্ষ। অন্য দিকে ফেসবুকে তাঁর ৬৪ লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন গম্ভীর। গত বছর ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হন। ৪৪ বছর বয়সি গম্ভীরের নেতৃত্বে এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং এশিয়া কাপ জিতেছে ভারত। সেই গম্ভীরের নেতৃত্বাধীন ভারতকেই আবার নিউ জ়িল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ়ে গোহারা হারতে হল।