John R. Brinkley

ছাগলের অণ্ডকোষ লাগিয়ে পুরুষদের বন্ধ্যত্ব নিরাময়! আমেরিকাকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি আয় করেন ‘গোট গ্ল্যান্ড ডক্টর’

‘চিকিৎসা’ করে পুরুষদের বন্ধ্যত্ব নিরাময়ের দাবি করেছিলেন কোয়াক চিকিৎসক ব্রিঙ্কলি। আর তার থেকেই বাড়তে থাকে তাঁর নামযশ এবং প্রতিপত্তি। ব্রিঙ্কলি ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত পুরুষদের বন্ধ্যত্ব নিরাময়ের জন্য ‘চিকিৎসা’ চালিয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:০২
Share:
০১ ২১

তাঁকে ঠিক চিকিৎসক বলা যায় কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। কারণ ডাক্তারির কোনও ডিগ্রি তাঁর কাছে ছিল না। তবুও রমরমিয়ে বহু বছর চিকিৎসার ‘ব্যবসা’ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। অনেক অস্ত্রোপচারও করেছেন বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও। অনেকের মতে, তিনি পৃথিবীর অন্যতম সেরা ‘কন আর্টিস্ট’ অর্থাৎ প্রতারক। সারা বিশ্ব তাঁকে চিনেছিল ‘গোট গ্ল্যান্ড ডক্টর’ নামে।

০২ ২১

কথা হচ্ছে আমেরিকার ‘চিকিৎসক’ জন ব্রিঙ্কলির। কিন্তু কী ভাবে পসার জমিয়েছিলেন ব্রিঙ্কলি? পুরুষদের এমন এক সমস্যা তিনি প্রতিকার করবেন বলে দাবি করেছিলেন, যে সমস্যা চিরাচরিত। বন্ধ্যত্ব।

Advertisement
০৩ ২১

‘চিকিৎসা’ করে পুরুষদের বন্ধ্যত্ব নিরাময়ের দাবি করেছিলেন কোয়াক চিকিৎসক ব্রিঙ্কলি। আর তা থেকেই বাড়তে থাকে তাঁর নামযশ এবং প্রতিপত্তি। ব্রিঙ্কলি ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত পুরুষদের বন্ধ্যত্ব নিরাময়ের জন্য ‘চিকিৎসা’ চালিয়ে গিয়েছিলেন।

০৪ ২১

যে পদ্ধতিতে ব্রিঙ্কলি বন্ধ্যত্ব নিরাময় করতেন, তা ছিল আজব। সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিকও। কিন্তু তাঁর এই পদ্ধতির জন্যই তিনি দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।

০৫ ২১

‘পুরুষ’ তৈরি করতে প্রজননে অক্ষম পুরুষদের অণ্ডকোষের থলিতে ছাগলের অণ্ডকোষ পুরে দিতেন ব্রিঙ্কলি। তাঁর দাবি ছিল, সেটিই বন্ধ্যত্ব নিরাময়ের সফল উপায়।

০৬ ২১

তবে অস্ত্রোপচার করার সময় ছাগলের অণ্ডকোষগুলি মানুষের অণ্ডকোষের থলিতে পুরে তা কোনও গ্রন্থির সঙ্গে জুড়তেন না ব্রিঙ্কলি। কেবল থলিতে অণ্ডকোষগুলি ভরে সেই জায়গা ভাল ভাবে সেলাই করে দিতেন।

০৭ ২১

যে সব পুরুষেরা সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম ছিলেন বা যাঁদের বীর্য শক্তিশালী ছিল না, দলে দলে তাঁরা চিকিৎসা করাতে ব্রিঙ্কলির কাছে ছুটতেন।

০৮ ২১

এর মধ্যেই ব্রিঙ্কলি দাবি করেছিলেন, তাঁর কাছে নিজের অণ্ডকোষ ছাগলের অণ্ডকোষ দিয়ে প্রতিস্থাপন করার পর এক যুবকের সন্তান হয়েছে। একটি বাচ্চার সঙ্গে ছবি তুলে তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দেন। সেই বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, চিকিৎসার পরই যুবক ওই বাচ্চাটির বাবা হয়েছেন।

০৯ ২১

এর পর ব্রিঙ্কলির নাম দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও আদপে তাঁর চিকিৎসার কারণে জন্ম হয়নি ওই বাচ্চাটির। পুরো বিষয়টিই মিথ্যা ছিল।

১০ ২১

১৯১৭ থেকে ১৯৩০-এর মধ্যে পুরুষদের বন্ধ্যত্ব নিরাময়ের নাম করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছিলেন ব্রিঙ্কলি। নিজের নামে একাধিক হাসপাতালও চালু করেছিলেন তিনি।

১১ ২১

ব্রঙ্কলি প্রচার করেছিলেন, ছাগলের অণ্ডকোষ দিয়ে ডিমেনশিয়া থেকে এমফিসেমার মতো ২৭টি জটিল রোগ নিরাময় করা সম্ভব। তাই সব ক্ষেত্রেই ছাগলের অণ্ডকোষ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন তিনি।

১২ ২১

নিজের ধারণা প্রচারের জন্য আমেরিকার কানসাসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি রেডিয়ো স্টেশনও চালু করেছিলেন ব্রঙ্কলি। এই রেডিয়ো স্টেশনের নাম ছিল ‘কেএফকেবি’।

১৩ ২১

রেডিয়ো স্টেশনটির মাধ্যমে বিনোদনের ছলে সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন ব্রিঙ্কলি। এর ফলে তাঁর পসার আরও বাড়তে থাকে। এর মধ্যে রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টাও করেছিলেন তিনি।

১৪ ২১

প্রচারের রমরমার কারণে খুব শীঘ্রই ‘আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর (এএমএ)’ নজরে পড়েন ব্রঙ্কলি। ব্রঙ্কলির অদ্ভুত চিকিৎসা পদ্ধতির কথা জানতে পেরে তাঁর ক্লিনিকে গুপ্তচর পাঠায় এএমএ।

১৫ ২১

ওই চর দেখেন টিউমার নিরাময়ের ওষুধ হিসাবে এক মহিলাকে ছাগলের অণ্ডকোষ দিচ্ছেন ব্রঙ্কলি। এর পরই ব্রঙ্কলিকে নিয়ে আরও কড়া হয় এএমএ। গোপনে তাঁকে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।

১৬ ২১

এএমএ দেখে, চিকিৎসক হওয়ার কোনও যোগ্যতাই নেই ব্রঙ্কলির। ডাক্তারির পড়াশোনা তিনি করেননি। কোনও ডিগ্রি ছিল না তাঁর। এমনকি, সাধারণ প্রশিক্ষণও তিনি নেননি।

১৭ ২১

আরও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাগলের অণ্ডকোষ লাগিয়ে সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা, অনেক পুরুষই অস্ত্রোপচারের পর বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণে ভুগছিলেন। মারাও গিয়েছিলেন অনেকে।

১৮ ২১

তদন্তে উঠে আসে ১৯৩০ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে ব্রঙ্কলির চিকিৎসায় ডজনখানেক মানুষ মারা গিয়েছিলেন। এর পরই একাধিক মামলা করা হয় ব্রঙ্কলির বিরুদ্ধে। তাঁর চিকিৎসা করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

১৯ ২১

ব্রঙ্কলির চিকিৎসা করার লাইসেন্স বাতিল করার পাশাপাশি তাঁর রেডিয়ো স্টেশনের লাইসেন্সও বাতিল হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর বহু সম্পত্তি। তবে এত কিছুর পরেও আমেরিকার একাংশ ব্রঙ্কলির চিকিৎসা পদ্ধতির পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন।

২০ ২১

সত্যি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ব্রঙ্কলির রমরমা কমতে থাকে। গুটি কয়েক মানুষ গোপনে তাঁর কাছে চিকিৎসা করাতে এলেও বেশির ভাগ মানুষই তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। আইনের চাপে পড়ে ১৯৪১ সালে দেউলিয়া হয়ে যান ব্রিঙ্কলি।

২১ ২১

মৃত্যুর আগে একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগেছিলেন ব্রঙ্কলি। তিন বার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। বাদ যায় একটি পা-ও। ১৯৪২ সালের ২৬ মে টেক্সাসের সান আন্তোনিয়োয় তিনি মারা যান। তবে নিজের চিকিৎসায় কিন্তু ছাগলের অণ্ডকোষ ব্যবহার করেননি তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement